আপনজন ডেস্ক: অশান্তির মধ্য দিয়ে শেষ হল রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ভোট। বিরোধীদের তরফে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট ও বুথ দখলের অভিযোগ উঠল। তবে, বেশ কিছূ জায়গায় বিরোধী প্রার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য কংগ্রেস সমর্থকরা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অফিসের মানে বিক্ষোভ দেখায়। কুশপুতুল পোড়ানো হয়। লালবাজারে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্ষোভকারীদের। আর বিজেপি বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে। বিজেপি ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলা বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। রবিার সকাল সাতটা থেকে রাজ্যের ২০টি জেলার ১০৮টি পুরসভায় উৎসবের মেজাজে ভোট শুরু হয়। কিন্তু বেলা গড়াতেই বিভিন্ন জেলা থেকে অশান্তির খবর আসতে থাকে। ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। ২ হাজার ২৭১ টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। ৪৪ হাজার পুলিশকর্মী ও ১৩৫জন অবজারভার নিয়োগ করা হলেও অশান্তি ঠেকানো যায়নি। বুথের সামনে বোমার আঘাতে চোখ জখম হলেন এক কনস্টেবলের। ঘটনাটি ঘটেছে ধুলিয়ান পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডে। পুরভোটকে প্রহসন বলে দাবি করেছেন সাংসদ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরি। তাঁর কথায়, ‘কী লাভ এইভাবে ভোট করে! প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।’ এদিন বিকেল পর্যন্ত কমিশনের কাছে পুরভোট নিয়ে ৮০০–রও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘নিরপেক্ষভাবে এই ভোট পরিচালিত হয়েছে। তবুও সবকটি বিরোধী দলের অভিযোগ যদি সত্যও হয় তাহলে মোট বুথের খুবই নগণ্য অংশে গন্ডগোলের অভিযোগ উঠেছে।’ জঙ্গিপুরে ইভিএম ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটে তেমনি কামারহাটিতে বহিরাগতদের ভোটদানকে কেন্দ্রকে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে ভোট দিতে গিয়ে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নদীয়ার কৃষ্ণনগর পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৯৬ নম্বর বুথে সকালে তিনি ভোট দিতে যান। এর পরে লাইনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভোট কর্মীরা তাকে তড়িঘড়ি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম লক্ষীকান্ত সাহা। কদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
তবে বেলা বাড়তেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট আর বুধ দখলের অভিযোগ করতে থাকে বিরোধীরা। জয়নগরে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ১১-২২ নম্বর বুথে গন্ডগোল বাধে। কংগ্রেস প্রার্থী সুজিত সরখেল ও তৃণমূলের নবকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে বচসাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। ফলে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ ভোটগ্রহণ। কান্দি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বহিরাগতকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছাতিনাকান্দি মঠতলা এলাকায় বহিরাগত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তপন ঘোষের বিরুদ্ধে। কাঁথির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠলো। ভোটারদের ভোট না দিতে দিয়ে ছাপ্পা করানোও অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ইভিএম ভাঙার অভিযোগে বসিরহাটের মন্দির হাটখোলায় বিজেপি প্রার্থীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। অভিযোগ পেয়ে এলাকায় এসে তদন্ত করে দেখেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা। দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল স্কুলে সিপিআইএম প্রার্থী অস্মিতা করের এজেন্টকে ঢুকতে বাধা, বুথের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৃণমূল এবং সিপিএম-এর এর মধ্যে। পানিহাটি পৌরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলে দুটি বুথে বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
বহরমপুর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস এজেন্টদের বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে রাস্তায় নামলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজের গাড়িতে করে কংগ্রেস এজেন্টদের নিয়ে এসে বুথে বসার ব্যবস্থা করেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সৌরিন্দু ঘোষকে মারধরের অভিযোগ। একদল দুষ্কৃতী এদিন রাজপুর বিদ্যানিধি বুথে ঢোকার মুখেই তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার আগেই উত্তেজনা রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ডালখোলা পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডে বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে ধুন্ধুমার। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ তুলে ভাঙচুর করা হয় তাদের ক্যাম্প অফিস। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কংগ্রেস কর্মীরা। অবরোধ হঠাতে লাঠিচার্জ পুলিশের। অন্যদিকে, বিজেপি ও বিরোধী দলগুলি শাসক দল তৃণমুলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট ও বুথ দখলের অভিযোগ করায় মাঠে নেমে পড়েন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল তলব করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে। সোমবার সকাল ১০টায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসকে রাজভবনে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সঙ্গে জানানো হয়েছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সেব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চাইবেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct