হৃদাকাশের আলো
অশোক কুমার হালদার
___________________
জীবনের ছন্দে এবং মানবসভ্যতার বিকাশের ক্ষেএে এবং জীবন যুদ্ধের প্রতিটি পদক্ষেপে আলোর প্রয়োজন অবসম্ভাবী। আকাশে যেমন আলো থাকে সূর্যের।তেমনি হৃদাকাশেও জ্ঞানের আলো থাকে৷ কিন্তু এই আলোরতারতম্য ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন, ভিন্ন প্রকৃতির মধ্যে অবস্থান করে অর্থাৎ আলোর বিচ্ছরন ক্ষমতা প্রতিটি জীবের ক্ষেএে আলাদা, আলাদা বা ভিন্ন ভাবে বিচ্ছরিত হয়।আকাশে প্রথম সূর্য দ্বয়ের সময় কর্মের রতি, মতি গতি এক রকমের হয়। আবার দ্বিপ্রহরে কর্মের ছন্দের গতি পালটায় অর্থাৎ দ্রুততর ছন্দের অবস্থা থেকে হ্রাস পেতে থাকে।আবার এই অবস্থা চলতে চলতে গতি আরো মন্থরতর হয়।আর এদিক সূর্যের আলোর বিচ্ছরনের গতিও আকাশে কমতে থাকে। কিন্ত এমন একটা সময় আসে তখন আর সূর্য পশিচম গগনেও দৃশ্যমান হয়না। যখন আকাশের সুর্যের আলো সর্ম্পূনরূপে অদৃশ্যমান হয়ে যায়।তখন জাগতিক দিক থেকে আমরা রাএি বলে অবিহীত করে। কিন্তু সূর্য সর্বদায় আকাশে বর্তমান থাকে,কিন্তু পৃথিবীর ছায়া যখন সূর্যের উপর পরে তখন পৃথিবীর ঐ অংশটি আঁধার হয় আমরা তাকে রাএি বলি।কিন্তু মানুষের জীবনেও এই রকম ঘটনার অবতারণা ঘটে। মানুষের জীবনেও শৈশব আসে, কিশোর হয় এবং এই জীবনে আবার যুবক হয় এবং হৃদাকাশে আঁধারও হয়ে আসে অর্থাৎ অলোর অবসান ঘটে আঁধার মিলিয়ে যায়। হিতেন বর্মন একজন চাষী পরিবারের সদস্য। তার বাবা এবং ঠাকুরদাদা চাষবাস করেই সংসার প্রতি পালন করতেন।এই চাষি আমাদের সমাজের বড় বন্ধু এবং অন্নদাতাও বটে।কারণ সভ্যতা বিকাশ চাষবাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কারণ চাষের কাঁচামালে, শিল্পের সহায়ক হয় অর্থাৎ শিল্প সর্বদায় চাষের কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল হয়। সভ্যতা এবং সমাজের বিকাশে কৃষি এক অনবদ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে হ্যাঁ, এর জন্য চায় হৃদাকাশে জ্ঞানের আলোর সঞ্চার।জ্ঞানের আলো ছাড়া সমাজ বা সংসারের বিকাশে সম্ভবপর নহে।আর এই কারণ শিক্ষার আলো কৃষকের, শ্রমিকের ঘরে,ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। অন্ধকার রাএে টর্চের আলো যেমন অন্ধকার কে ভেদ করে আলোর দিশা দেখায়, তেমনি শিক্ষার আলো দারিদ্রতার অন্ধকার ঘুচিয়ে, সমাজও সংসার জীবনের প্রগতি ঘটাতে সমর্থ হয়। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। শিক্ষা নিলে কি হয়? শিক্ষা নিলে,নিজস্ব জ্ঞান আলোর কর্ম করতে সমর্থ হয়। তখন অন্যের থেকে পরামর্শ নিয়ে কর্ম করার থেকে শ্রেয় হয় নিজের জ্ঞান দ্বারা কর্ম করা। বিজ্ঞানে দেখা গেছে শব্দের গতি বেগের চেয়ে আলোর গতিবেগ বেশী। কর্মের থেকে জ্ঞান নিয়ে কোন কর্ম সম্পাদন করতে সময় বেশী লাগে কিন্ত আপন জ্ঞানের দ্বারা সেই কর্ম করতে সময় কম লাগে এবং কমও সফলতম হয়।হিতেন বর্মনের বাবা এবং ঠাকুরদাদার আমলের চাষবাসের পদ্ধতি ছিল প্রাচীন কিন্ত বর্তমানে সময় যত এগিয়ে গেছে, চাষবাসের পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়েছে। আগে যে পরিমাণ জমি থেকে যতটা পরিমাণ ফসল উৎপাদন হত বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তার চারণ্ডণ ফসল চাষী উৎপাদন করতে সমর্থ হচ্ছে সেই পরিমাণ জমি থেকে। অথচ বাবার আসলে যে জমি পতিত অবস্থায় ছিল, বর্তমানে কৃষিভিওিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে। সেই পতিত জমিতেই ফসল ফলাচ্ছে চাষীরা।এর থেকে বোঝা যাচ্ছে প্রয়োজন মেটাতে পারে একমাএ শিক্ষার আলো। কৃষিবিজ্ঞান বর্তমানে ব্যাপক সফলতা এনে দিয়েছে কৃষিক্ষেএের উন্নতিতে। সফলতা, তখন সম্ভবপর হয় যখন জ্ঞানের দ্বারা কর্ম করা হয়।বর্তমানে লোক সংখ্যা যেমন হুহু করে বেড়ে গিয়েছে,সেই তুলনায় চাষের জমির পরিমাণ বাড়েনি, বেড়েছে শ্তধু উন্নতি চাষের পদ্ধতি বা প্রযুক্তি আগেকার চাষ পদ্ধতি ছিল প্রাচীন পদ্ধতি যেটা সম্পর্ণরূপে নির্ভরশীল ছিল ঐ অঞ্চলের জলবায়ুর উপর।মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষই জ্ঞান আলোর দ্বারা চাষবাসের ক্ষেএে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আর বেশীর ভাগ শিল্পই কৃষিক্ষেএের উপর নির্ভরশীল দেখা গেছে প্রাচীন চাষে,কোন বৎসর জমিতে ফলনের পরিমাণ ভালোই হয়েছে কিন্ত ফসল জমি থেকে তোলার আগে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে, ফসল আশানুরূপ ভাবে ঘরে তুলতে পারলো না। বা আবার কোন ক্ষেএে দেখা গেছে, জমির ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আর বাজারেও ফসলের দাম কাম যেহেতু চাহিদা তলানিতে ঠেকেছে।তাহা হইলে এই সব ক্ষেএে চাষীর, ফসল রক্ষা এবং সংরক্ষণের জ্ঞান থাকলে, চাষির উপার্জনের পরিমাণ অনেক অংশে বেড়ে যাবে। তাহা হইলে একজন আর্দশ চাষী হতে গেলে চাষবাস করার সঙ্গেঁ, সঙ্গেঁ চাষের সমন্ধে এবং উৎপাদিত ফসল রক্ষার জন্য সমাক জ্ঞানও থাকতে হবে, নইলে সফল চাষী হওয়া যাবে না। কিন্তু চাষী হওয়া যাবে। যদি প্রকৃতি আকাশের আলো নিভে গেলে চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে। তখন জীবকূলের বিশ্রাম নেবার সময়, কারণ কর্মের কোলাহল আর থাকে না, মানুষ বা জীবকূল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যে যাহার, আপন, আপন ঘরে চলে যায়। ইহা অনন্তকাল ধরে এই নিয়মের জীবকূল অভস্থ। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এই নিয়মের আমুল পরির্তন ঘটেছে। হৃদাকাশে জ্ঞানের সঞ্চার হওয়ার সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ মানুষ দিন ও রাএি সমানতালে কাজ করে চলেছে। প্রতি জনের আর্থিক উন্নতি মানে প্রতি সংসারের উন্নতি, আর সংসারের উন্নতি মানেই সমাজ বা দেশের উন্নতি। কিন্তু মাঝে, মাঝে কোন দানবীয় রোগ বা ব্যাধি এসেও কাজের গতিকে থামিয়ে দিতে পারে। আর তখন শুধুই গৃহবন্দী হয়। তার ফলে সংসারের উপার্জন কমে যায়। দেশের আয় কমে যায় এবং দেশ ও দশের প্রগতি থমকে যায়। আবার কখন কখন প্রাকৃতিক দুরযোগের সম্মুখীন হতে হয় এই মানব সমাজকে।সাম্প্রতিক কালে প্রকৃ্তির বুকে, এমনকি সারা বিশ্বজুড়ে এক অজানা রোগের আর্বিভাব তার ফলে সারা বিশ্বে কর্মের গতি ম্লান হয়ে যায় মানুষের সঙ্গেঁ মানুষের সর্ম্পকের ছেদ ঘটে। কারণ এই রোগটি বড় ছোয়াছে রোগ।এই রোগের আবির্ভাবের ফলে বহু মানুষের প্রাণ অকালে চলে যায় কারণ তখন পর্যন্ত কোন ঔষধ বা টীকা আবিষ্কার হয় নায়। কোন নতূন রোগ আসার সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ তো ঔষধ বা টীকা আবিষ্কার সম্ভবপর হয় না। ঔষধ বা টীকা আবিষ্কারের জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে প্রমাণ সাপেক্ষে যখন ঔষধ বাজারে আসে। ততদিন পর্যন্ত মানুষজনকে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞের পরামর্শমত চলতে হয়।নইলে বিপদ বাড়ে বৈ কমে না। সেই মত সারাবিশ্ব এমনকি আমাদের দেশেও চিকিৎসকরা নির্দেশ জারী করলনে, সাধরণ মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্দ্যেশে, যাহাতে কোন লোক ঘর থেকে বাহিরে জন সংযোগ করতে না পারে।সেইমত দোকানপাঠ, কর্মক্ষেএ, স্কুল, কলেজ অফিস আদালত, এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরাপুরি বন্ধ। যাহাতে মানুষের বেশি সমাগম না ঘটে, রোগ ছড়াতে না পারে। যার ফলে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে গেল। মানুষের উপর নানারকমের বিধিনিষেধ আরোপিত হল। উপার্জন সর্ম্পূনরূপে বন্ধ হয়ে গেল। তখন দেখা গেছে মানুষের মধ্যে মানবিক মুখ। বিভিন্ন মানুষ এবং বিভিন্ন মানব কল্যাণ সংস্থা দুস্থ মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়ে মানুষকে খাবার এবং ঔষধপএ দিয়ে সাহাযের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই ভয়াবহ দুরারগ্যের হাত থেকে পরিএান পাওয়ার ব্রত নিয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে এই ভয়াবহ অন্ধকার থেকে আলোর বিচ্ছরনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা। ইহা মানব সভ্যতার জীবন যুদ্ধের মত এক অবস্থা। অপরদিকে আমাদের দেশের সরকারও মানবিক মুখ হয়ে উঠেছিল। চিকিৎসা পরিসেবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিরলস প্রচেষ্টার এবং দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর টীকা আবিষ্কার হল।মানুষের মধ্যে এই টিকাকরণ দুইটি দফাই বেশীর ভাগ মানুষের মধ্যে এই ভয়াবহ রোগ প্রতিষেধক হিসাবে দেওয়ার পর, ঘর বন্দী অবস্থা ধীরে ধীরে চালু হওয়া শুরু করল। কর্মক্ষেএেও ঐ একই ব্যবস্থার সমাহার ঘটল। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেএেও একি ব্যবস্থা বলবত রইল। যেহেতু পরিএান এখন এই ভয়াবহ অদৃশ্য রোগ থেকে পাওয়া সম্ভরপর হয়ে উঠেনি। এই রোগ চলাকালীন সকলই উপলব্দি করেছেন যে ইহা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের চেয়ে কোন অংশে কম নহে। কারণ অন্ধকার না এলে, আলোর ণ্ডরুত্ব বোঝা যায় না, সে আকাশের আলো হোক বা হৃদাকাশের আলো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct