দেবাশীষ পাল,মালদা,আপনজন: যে রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে এতটা ঢাক ঢোল, সেই রাজ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত ইংরেজবাজার পুরসভার বাসিন্দারা। গত ১৯ বছরে ঘরে ঘরে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র , রাজ্যের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে দেড়শ কোটি টাকা।কিন্তু তারপরেও ঘরে ঘরে সেই জল আসে নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে পানীয় জলের প্লান্ট। নেই কর্মীও। আসন্ন পুরসভা নির্বাচন। শাসকদলের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল ঘরে ঘরে এখনো এসে পৌঁছালো না। ভোটের আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শহর বাসির মধ্যে। যদিও শাসকদল তৃনমূলের নেতারা বলছেন খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পের ট্রায়াল’ শুরু হয়ে যাবে। মালদা ইংরেজবাজার পুরসভার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে প্রায় এক দশক আগে জহরলাল নেহেরু আরবান রুরাল মিশন প্রকল্পে মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট করে সেই জল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে প্রকল্প হাতে নেয় বাম সরকার। মহানন্দা থেকে ঘরে ঘরে আর্সেনিক মুক্ত জল পাঠানোর প্রকল্প। শুরুতেই ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয় কেন্দ্রের। রাজ্য কেন্দ্র মিলিয়ে ১০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ হয়। এরপরে ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাইপ বসানোর কাজ শুরু হলেও অধরা বিশুদ্ধ পানীয় জল। অন্যদিকে ইংরেজবাজার পুরসভা ও পুরাতন মালদা পুরসভা এলাকায় এখনো তৈরি হয়নি ডাম্পিং গ্রাউন্ড। ইংরেজবাজার কেজে সান্যাল রোড, স্টেশন রোড , রথবাড়ি এলাকায় ও পুরাতন মালদা মঙ্গলবাড়ী, বুলবুলি মোর স্তুপ আকৃতি হয়ে রয়েছে এই জঞ্জাল। শহরবাসীরা দুর্গন্ধে রাস্তায় দিয়ে চলাচল করতে নাভিশ্বাস হতে হচ্ছে। জঞ্জাল সমস্যা নিয়ে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল বর্তমান পুরো প্রশাসকরা। পুরসভার সূত্রে জানা যায় এখানকার ডাম্পিং গ্রাউন্ড করার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। ভারত-বাংলাদেশ মহদীপুর সীমান্ত দেখা হয়েছে জায়গা। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
জেলা সিপিআইএমের সম্পাদক অম্বর মিত্র জানিয়েছেন, দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ কোথায় গেল জবাব দিতে হবে এই পুরসভাকে। দেড়শ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরেও এই শহরের মানুষ আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল আজও বাড়িতে পেল না। মালদা শহরের আজও মানুষের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছালো না। এই জবাবটা দিতে হবে এই পুরবোর্ডকে। আর ভাগাড় তৈরি করার ক্ষেত্রে এই পৌরসভা ব্যর্থ। ১৪ থেকে ১৫ টা জায়গাও দেখে ফেললেও ভাগাড় তৈরি হলো না। আর এই যে বজ্র পদার্থ জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে সেইও নয়ছয় হবে। এ বিষয়ে বিজেপি নেতা তথা বিদায়ী কাউন্সিলর অম্লান ভাদুরি জানিয়েছেন, পুর নাগরিকদের বাড়ি বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে এই পুরসভা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ। টাকা বরাদ্দ হলেও সেই টাকা লুটপাট করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাগাড়ের নামে জায়গা খোঁজার নাম করে ভাগাড়ের অর্থ বরাদ্দ হওয়া টাকাগুলি নষ্ট করছে শাসক দল এর নেতারা।
মালদা জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কালী সাধন রায় জানান পরিশোধিত পানীয় জল পৌর নাগরিকদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এই পৌরসভা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ। মানুষ কে এখনো ফ্যাক্টরির জল কিনে খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ইংরেজবাজার পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি জানিয়েছেন, বিরোধীরা বিরোধী করার জন্যই এই সমস্ত কথা বলছেন। কারণ তাদের হাতে কোনো কর্মসূচি নেই। এই রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তৃণমূল কংগ্রেস আমলে হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে তারপর থেকেই রাজ্যের উন্নয়ন হয়েছে। ইংরেজবাজার পুরসভায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের লাইনের কাজ সিংহভাগ কাজ হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় বাকি কাজটি আমরা করতে পারে নি। তবে নির্বাচনের পরই আমরা আর্সেনিক যুক্ত পানীয় জল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct