উত্তরপ্রদেশে এবারের নির্বাচনে বিজেপির হাসি ফের কান ছোঁবে কি না, বুধবার অনু্ষ্ঠিত চতুর্থ দফার ভোট তা বুঝিয়ে দেবে। রাজ্যের যে ৯টি জেলার ৫৯ আসনের ভোট বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়, সেখানে শেষ পর্ব পর্যন্ত লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। পা হড়কালে বিজেপির কপালের ভাঁজ গাঢ় হতে বাধ্য। কিন্তু দেড় বছর ধরে কৃষক আন্দোলন রাজ্যে যে ঝড় বইয়েছে, তার খেসারত দিতে হতে পারে বিজেপির। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
উত্তরপ্রদেশের এবারের নির্বাচনে বিজেপির হাসি ফের কান ছোঁবে কি না, বুধবার অনু্ষ্ঠিত চতুর্থ দফার ভোট তা বুঝিয়ে দেবে। রাজ্যের যে ৯টি জেলার ৫৯ আসনের ভোট বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়, সেখানে গতবারের মতো না হলেও কাছাকাছি যেতে পারলে বলা যাবে শেষ পর্ব পর্যন্ত লড়াইটা হবে সেয়ানে সেয়ানে। কিন্তু বুধবারের ভোটে পা হড়কালে বিজেপির কপালের ভাঁজ গাঢ় হতে বাধ্য। ২০১৭ সালে এই ৫৯ আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৫১টিতে, তাদের সহযোগী আপনা দল পেয়েছিল একটি আসন। দুই বছর পর ২০১৯ সালের লোকসভার ভোটেও বিজেপির সেই দাপট অমলিন ছিল। কিন্তু দেড় বছর ধরে কৃষক আন্দোলন রাজ্যে যে ঝড় বইয়েছে, তার খেসারত এবার বিজেপিকে কতটা দিতে হবে এখনো সেই অনুমান স্পষ্ট নয়। পরাজয়ের আগে কে বা হারতে চায়? বিজেপি নেতারা তাই বলতে ভালোবাসছেন, প্রথম তিন পর্বের লোকসান যতটুকু হবে, তা পরের চার পর্বে পুষিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাঁদের আছে। দাবি ও বাস্তবের ফারাক কতটা, আজকের ভোট তা বুঝিয়ে দেবে।পরিস্থিতি কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের মোটেই অনুকূলে নয়। কেননা এই ৯টি জেলার মধ্যেই রয়েছে নেপাল ঘেঁষা লখিমপুর খেরি। গত অক্টোবরে শান্তিপূর্ণ মিছিলে গাড়িবহর চালিয়ে যেখানে চারজন কৃষককে মেরে ফেলা হয়েছিল। সেই ঘটনার দায় কৃষকেরা চাপিয়েছিলেন জেলার ব্রাহ্মণ নেতা মোদি মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্রের ওপর। সুপ্রিম কোর্টের চাপে হত্যার দায়ে শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ছেলে আশিসকে। ভোটের আগে যিনি আপাতত জামিনে মুক্ত।
এই লখিমপুর খেরির মোট আটটি বিধানসভা আসনের সব কয়টি গতবার বিজেপি জিতেছিল। অথচ এই জেলায় তো বটেই, আশপাশের জেলা পিলিভিট, সীতাপুর বা উন্নাওয়ের বেশ কিছু কেন্দ্রে কৃষক বিক্ষোভের দরুন বিজেপি প্রার্থীরা এবার সেভাবে প্রচারেই নামতে পারেননি। উন্নাওয়ের ধর্ষণ ও হত্যা মামলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যোগী-সরকারের যোগ্যতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছে, তেমন ক্ষুব্ধ রেখেছে এই জেলাগুলোতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা দলিত সমাজকে। এবারের ভোটে বহুজন নেত্রী মায়াবতীর নিষ্ক্রিয়তা বিভ্রান্তিতে ভোগা দলিতদের কোন দিকে টানবে, এই পর্ব থেকে সেই আগ্রহ বাড়বে। কৃষক, দলিত ও অন্য অনগ্রসরদের ভোটে ভাগ বসানোর পাশাপাশি অখিলেশ-জয়ন্তের জোট আজকের পর্বে জাট, যাদব ও মুসলমানদের সিংহভাগ সমর্থন আদায় করতে পারলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও চিন্তায় ফেলবে। বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি, রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রশাসনিক আনুকূল্য ও অর্থবলেরও পরীক্ষা এই পর্ব থেকে শুরু হলো।
বুধবার ভোট হয়েছে একসময় কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বেরিলিতেও। গতবারও সেখানে দুটি আসন কংগ্রেস জিতেছিল। এবার একটিও ধরে রাখতে পারবে কি না সন্দেহ। কেননা যে দুই বিধায়ক রায়বেরিলিতে কংগ্রেসকে ভাসিয়ে রেখেছিলেন, ভোটের আগে সোনিয়ার হাত ছেড়ে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রার্থীও হয়েছেন। বলতে গেলে, এবার উত্তর প্রদেশের ভোটে কংগ্রেস প্রকৃত অর্থেই অনাথ। গতবারের জয়ীরা অধিকাংশ দল ছেড়েছেন। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো নয় বলে সোনিয়া এক দিনের জন্যও প্রচারে যেতে পারেননি। শেষ বেলায় শুধু এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। রাহুল গান্ধীও পাঞ্জাব, গোয়া ও উত্তরাখণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উত্তর প্রদেশের দিকে নজর দিতে পারেননি। দলের সব দায় একার কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। জাতপাতের লড়াইয়ে না ঢুকে হীনবল কংগ্রেসের জন্য কোরামিনের জোগান দিতে তিনি নারীদের টার্গেট করে এগিয়েছেন। স্লোগান দিয়েছেন ‘লাড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ’। কিছুটা সাড়াও যে পাননি, তা নয়। তবে আগেই জানিয়েছেন, ২০২৭ সালকে নজরে রেখে তিনি এগোচ্ছেন। এবারের লড়াই তারই জমি তৈরির প্রস্তুতি। (ক্রমশ...)
সৌজন্যে: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct