কর্নাটকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মুসলিম মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরার (‘হিজাব’) বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ‘হিজাব–বিতর্ক’ বলে যা সামনে আনা হচ্ছে, তা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। এটি হিজাব–সংশ্লিষ্ট কিছুই নয়। এটি মুসলমান মেয়েদের আইন ও সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত শিক্ষার অধিকারের ওপর একটি অন্যায্য ও ঘৃণ্য আক্রমণ। এনিয়ে লিখেছেন বৃন্দা কারাত। আজ প্রথম কিস্তি।
কর্নাটকে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মুসলিম মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরার (যেটিকে ভুলভাবে ‘হিজাব’ বলা হচ্ছে) বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু বিজেপিশাসিত কর্নাটকে ‘হিজাব–বিতর্ক’ বলে যা সামনে আনা হচ্ছে, তা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। এটি হিজাব–সংশ্লিষ্ট কিছুই নয়। এটি মুসলমান মেয়েদের আইন ও সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত শিক্ষার অধিকারের ওপর একটি অন্যায্য ও ঘৃণ্য আক্রমণ। খুবই তাৎপর্যের বিষয় যে সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত নতুন প্রধানের অধীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত এ–সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়ে কর্নাটকের উদুপি জেলা কর্তৃপক্ষকে গত ২৭ জানুয়ারি একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনে পেশ করা অভিযোগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, এমন অভিযোগ পেয়ে কমিশন উদুপি জেলা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করেছে।
কর্ণাটক সরকারের এ আদেশের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আদেশটি বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রথমত, মাথায় রাখতে হবে স্কার্ফ নিয়ে প্রথম যে কলেজটিতে ঘটনাটি ঘটেছে সেই উদীপীর পিইউ কলেজসহ সেখানকার সব কটি কলেজের উন্নয়ন কমিটির প্রধান হলেন সেখানকার বিজেপিদলীয় এমএলএ। পিইউ কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের মাথায় স্কার্ফ পরায় কোনো নিষেধাজ্ঞা না দিলেও ওই এমএলও স্কার্ফ পরে কোনো ছাত্রী কলেজে ঢুকতে পারবে না বলে হুকুম জারি করেন। বজরং দলের উদুপি জেলা সেক্রেটারি সুরেন্দ্র কোটেশ্বর যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ মুসলমান ছাত্রীদের স্কার্ফ কিংবা হিজাব পরে ক্লাস করতে দেয়, তাহলে তাঁর দল বাকি সব ছাত্রছাত্রীদের গেরুয়া ওড়না পরিয়ে কলেজে ঢোকাবে। শুধু বলেই তিনি ক্ষান্ত হলেন না। তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এ কথাকে কাজে পরিণত করলেন। তিনি দলীয় লোকদের গেরুয়া কাপড় পরিয়ে কলেজগুলোর গেটে জড়ো করলেন। বজরং দলের কর্মীরা গেরুয়া পোশাক পরে ফটকে দাঁড়ালেন এবং মাথায় স্কার্ফ কিংবা বোরকা পরা ছাত্রীদের কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া শুরু করলেন। পাশেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল। মুসলমান মেয়েদের যখন বজরং দলের কর্মীরা হয়রানি করছিল, তখন পুলিশ উত্ত্যক্তকারীদের বাধা না দিয়ে ভুক্তভোগীদেরই দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁরা ছাত্রীদের চলে যেতে বাধ্য করেছেন। স্কার্ফ নিষিদ্ধ করে দেওয়া সরকারি আদেশের পরও উদুপির আরেকটি কলেজ, বান্দ্রাকারস আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষও ছাত্রীদের মাথায় স্কার্ফ পরে কলেজে ঢুকতে দেওয়া অনুমোদন করেছিল। তারা বলেছিল, স্কুল ড্রেসের রঙের সঙ্গে মিল করে স্কার্ফ পরে আসা যাবে। কিন্তু সেই আইন মানার পরও মুসলমান মেয়েদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটি কি অন্যায় নয়? তারা তো ইউনিফর্ম পরছেই। শুধু বাড়তি একটি স্কার্ফ মাথায় রাখতে চাইছে। কিন্তু তা–ও তাদের পরতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে মুসলমান মেয়েদের টার্গেট করার ফলে গোটা মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে স্কার্ফ পরা এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠছে। এর ফলে যে মেয়েটি আগে কখনো স্কার্ফ পরেনি, সে–ও এখন প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে মাথায় স্কার্ফ পরা শুরু করেছে। কর্ণাটকেও আমরা এ পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখছি। এ পরিস্থিতিতে উগ্রপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলোর জন্য ভিত্তি তৈরি করা সহজ হয়। (ক্রমশ)
সৌজন্যে: এনডি টিভি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct