হিজাব পরার স্বাধীনতা হরণ কেন
আতিকুর রহমান
___________________
কর্নাটকে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরে শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। অথচ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞায় নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধিকার বিনষ্ট করা হয়। এত ভয়াবহ একটা জুলুম ক্ষমতার আস্ফালনে সরকারি বিধানে পরিণত হচ্ছে, অথবা অধিকাংশ মানুষের এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ দেখছি না। ব্যক্তিগত ভাবে আপনি নিজে হিজাব পরা অপছন্দ করতেই পারেন, আপনাকে কেউ হিজাব পরতে বাধ্য করবে না। কিন্তু হিজাব পরার কারনে কোন মুসলিম ছাত্রীর শিক্ষার অধিকার হরণ করতে পারেন না। যারা হিজাবের অজুহাতে শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নিতে তৎপর তারা আসলে মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করছে। এই শত্রুতা যারা করছে, যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, সাধ্য থাকা সত্ত্বেও যারা প্রতিবাদ না করে মৌনতার সম্মতি দিচ্ছে - তাদের সবাইকে চরমতম ধিক্কার জানাই। আচ্ছা হিজাব আপনার কী ক্ষতি করল, বলতে পারেন? একটা সময় আপনারাই তো বলতেন, মুসলিমরা মেয়েদের শিক্ষার আলো দিতে চায় না। এই কুৎসা রটিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের যতটা নিন্দা ও অপমান করা যায়, আপনারা করেছেন। অথচ সেই আপনারাই কিনা হিজাব দেখিয়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে মুসলিম মেয়েদের বহিষ্কার করছেন। আসলে আমার মনে হয়, মূল সমস্যাটা হল ইসলামোফোবিয়ার চুলকানি। হিজাব কিংবা যে কোনও ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতি দেখলে আপনারা তা সহ্য করতে পারেন না। বোধহয় যতক্ষণ মুসলিমরা আপন বিশ্বাস ও সংস্কৃতি নিয়ে থাকতে চাইবে, আপনারা মুসলিমদের সাথে এমন ভাবে জঘন্য আগ্রাসন ও নির্লজ্জ আক্রমণ করতে থাকবেন। এতটুকুতেও ক্ষান্ত হবেন না, এরপর মজলুম মুসলিমদেরকেই সন্ত্রাসী ও সংকীর্ণতাবাদী বানিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাবেন।
তবে ভয় শুধু মুসলিমদের নিয়ে নয়, আমার আশঙ্কা এই ভারতভূমি নিয়ে। যে ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলিম শিখ খ্রিস্টান প্রভৃতি নানা জাতির মানুষ একত্রে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে চায়, সেখানে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার করা হলে পুরো স্বপ্নটাই তো চুরমার হয়ে যায়। ধর্মনিরপেক্ষতার ছায়াতলে আমরা সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চাই। তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা হরণ করে কোন ভারতবর্ষের নির্মাণ করতে চাইছে মাননীয় ক্ষমতাধর? আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হলে দেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আমরা এই সংকট চাই না, আমরা চাই রবীন্দ্রনাথের ভারততীর্থ। যারা এই কবিগুরুর ভারততীর্থের চেতনা লালন করেন, তারা কি শিক্ষাঙ্গন থেকে বিতাড়িত মুসলিম ছাত্রীর বুক ভাঙ্গার শব্দটুকু শুনতে পাচ্ছেন? হয়তো অনেকেই জানেন না যে, হিজাবের এই বিধান ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মেও বলা হয়েছে। অন্তত নিজ ধর্মের খবর নিয়েও তো আপনারা সহিষ্ণু হতে পারেন। আচ্ছা, আপনিই বলুন নোবেল পাওয়ার জন্য কি মাদার তেরেসার মাথার কাপড় খুলতে হয়েছিল? অথচ এদেশে হিজাবের জন্য কত পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না, স্কুল কলেজে ঢুকতে দিচ্ছে না। এমনি ভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলিম মহিলাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি করা হচ্ছে, তার জবাবদিহি কোন একদিন অবশ্যই করতে হবে। আমরা সকল সহনাগরীকের কাছে এই বিষয়ে নূন্যতম সহানুভূতির আশা রাখছি। হিজাবের প্রতি এমন বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিপাত ও অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে সকল সহনাগরিকের সহযোগিতা কামনা করছি। পরিশেষে সকলের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct