বেবি চক্রবর্তী : আন্দামান ও নিকোবার আইল্যান্ড, এটি হল ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জ ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যেগুলির মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। নবম শতাব্দীতে আরব বেদুঈনদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম এই দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারা যায়, তারা সুমাত্রা যাত্রা করার সময় দ্বীপপুঞ্জের এই পথ ধরেই পাড়ি দিয়েছিল। সর্বপ্রথম পশ্চিমী পর্যটক মার্কো পোলো এটিকে ‘দ্য ল্যান্ড অফ হেড-হান্টারস’ রূপে আখ্যা দিয়েছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মারাঠারা এই দ্বীপপুঞ্জটিকৈ দখল করে নেয়। অষ্টদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এটি বারংবার ব্রিটিশ, ডাচ ও পর্তুগীজদের বাণিজ্যিক জাহাজ দখলকারী মারাঠা নৌসেনাপতি কানহোজী আংগ্রের ঘাঁটি হিসাবে গড়ে উঠেছিল।১৮৬৯ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজরা নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয় এবং ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে এই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে একটি একক প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের জন্য আন্দামানের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালে জাপানী সেনারা এই দ্বীপপুঞ্জটিকে দখল করে নেয় ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৫ সালের বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত তাদের ক্ষমতার অধীনেই থাকে। পরবর্তীকালে, ভারত ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ভারতের উপর স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়।। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় উপমহাদেশের সূর্যসন্তানদের আন্দামানে দ্বীপান্তরের কাহিনি ছোটবেলা থেকে জানা। সে সময়ের ‘কালাপানি’ খ্যাত ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের ঐতিহাসিক সেলুলার জেল স্বচক্ষে দেখার সে ইচ্ছাতেই আন্দামান ভ্রমণ নিশ্চিত হলো। আন্দামানের জারোয়া জাতিগোষ্ঠী হল ভারতীয় আদিবাসীদের মধ্যে এক গোষ্টীর আদিবাসী, যাদের বসবাস আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। তাদের বর্তমান সংখ্যা আনুমানিক ২৫০-৪০০-র মধ্যে।ইতিহাস আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। ১৭৭৭ সালে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে একটি নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালিয়েছিল। এই সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, বহিরাগতদের আগমনের আগে কয়েক শতাব্দীকাল এই দুই দ্বীপপুঞ্জ নেগ্রিটো ও মঙ্গোলয়েড জাতিগোষ্ঠীর অধিকারে ছিল। স্বাধীন ভারতের সূর্যদ্বয়ে আন্দামান ভারতের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সাক্ষর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct