আপনজন ডেস্ক: বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের প্রচার সেরে দিল্লি ফেরার পথে মিরাটের কাছে দুস্কৃতী হামলার মুখে পড়েছিলেন এআইএমআইএম সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়াইসি। তার ওপর হামলার অভিযোগে ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সেই ঘটনায় নতুন তথ্য উঠে এল। বৃহস্পতিবার আসাদউদ্দিনের গাড়ির চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল ধৃতরা। পুলিশি জেরায় ধৃত শচিন শর্মা ও শুভম স্বীকার করেছে, এই প্রথম নয় এর আগেও তিন তিনবার তারা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির ওপর হামলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, মানুষের ভিড় থাকায় শেষ পর্যন্ত সেই হামলার পথ থেকে সরে আসে তারা। আসাদউদ্দিন ওয়াইসির গাড়ির চাকায় গুলি করাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হইচই হওয়ার পর ওই ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। এফআইআরে জানানো হয়েছে, ধৃত ব্যক্তিদের জবাবে প্রথমে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তদন্তকারীরা। ধৃতরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করছিল না। কিন্তু পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ তুলে ধরে তাদের শনাক্ত করলে ধৃতরা নিজেদের অপরাধ কবুল করে।
আর, কীভাবে হামলা চালিয়েছিল, তা বিস্তারিত পুলিশকে জানায়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শচিন পুলিশকে বলেছে, তার বড় নেতা হওয়ার লক্ষ্য ছিল। সে নিজেকে প্রকৃত দেশভক্ত মনে করে। ওয়াইসির বক্তব্য শুনে শচিনের মনে হয়েছিল যে ওয়াইসি সমগ্র দেশের জন্য ক্ষতিকর। আর, তাই ওয়াইসির বিরুদ্ধে তার মনে ক্রোধ জন্মেছিল। পুলিশকে শচিন জানিয়েছে, ওয়াইসির গতিবিধি জানতে সে এরপর মিমের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করার চেষ্টা করে। মিমের দাসনা এলাকার চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তার থেকেই জোগাড় করে ওয়াইসির গতিবিধির খবর। পুলিশি জেরায় শচিন জানিয়েছে, সে প্রথমে ঠিক করেছিল যে প্রচার চলাকালীন ওয়াইসির ওপর হামলা চালাবে। আর তাই সে সাহারানপুরের বাসিন্দা শুভমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। শুভমের সঙ্গে আগেই সম্পর্ক থাকায় পুরনো যোগাযোগ দৃঢ় করে শুভমকে ওয়াইসির হামলার ক্ষেত্রে তাকে শামিল করতে শচিনের বেশি সময় লাগেনি। পুলিশকে সে কথা জানিয়ে শচিন বলেছে, তার কথায় শুভম সাহারানপুর থেকে গাজিয়াবাদে এসেছিল। ২৮ জানুয়ারি তারা দু’জনে ওয়েভ সিটি এলাকায় দেখাও করে। শচিনের কথামতো শুভম গাজিয়াবাদে বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে শুরু করে। রাজি হয়ে যায় ওয়াইসির ওপর হামলা চালানোর জন্য। গাজিয়াবাদের শহিদ নগরে ৩০ জানুয়ারি ওয়াইসির মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে শুভমকে নিয়ে যোগও দিয়েছিল শচিন। সেই দিনই তারা ওয়াইসিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু, সভায় ভালো ভিড় ছিল। তাই কিছু করতে পারেনি। এরপর দু’জনে বৃহস্পতিবার মিরাটের গোলা কুঁয়া এলাকায় যায়। কিন্তু, সেখানেও ব্যাপক ভিড় থাকায় ওয়াইসির ওপর হামলা করারর কোনও সুযোগ খুঁজে পায়নি শচিন ও শুভম। এরপর সন্ধান পেয়ে কিঠোর এলাকায় ছিল ওয়াইসির সভায়ও হাজির হয়। কিন্তু একই ধরনের ভিড় তাদেরকে আক্রমণের পথকে অনেকটাই বাধা সৃষ্ট করি। তাই হামলা করে উঠতে পারেনি। এই তারা জানতে পারে যে, ওয়াইসি মিরাট থেকে এসইউভি গাড়িতে চেপে সড়ক পথেই দিল্লিতে ফিরবেন। তখনই তারার পরিকল্পনা করে, গাড়ি চেপে যাওয়অর পথেই মিম নেতাকে গুলি করে হত্যা করাটাই সহজ হবে। কারণ, শচিন আর শুভম ভাবছিল এই সুযোগ ছেড়ে দিলে পরে হয়তো আর ওয়াইসির নাগাল পাওয়া যাবে হত্যা করার। তাই ওয়াইসির দিল্লি গমনকে অনুসরণ করে তারা। সন্ধ্যার সময় ওয়াইসির গাড়ি পৌঁছয় ছাজর্ষি টোল প্লাজায়। গাড়ির স্পিড টোল প্লাজায় কম ছিল। সেটাই উপযুক্ত সময় ভেবে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওই দুই আততায়ী। তখনই ওয়াইসির গাড়ি লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে।
পুলিশি জেরায় কীভাবে গুলি চালিয়েছে সেকথাও জানিয়েছে শচিন। শচিন পুলিশকে জানায়, প্রথম গুলি চালানোর সময় তাকে দেখে ফেলেছিলেন ওয়াইসি। প্রাণে বাঁচতে গাড়ির নীচে বসে পড়েন মিম নেতা। এরপরই ওয়াইসিকে মারতে গাড়ির নীচে তাক করে গুলি চালিয়েছিল অভিযুক্তরা। তারা ভেবেছিল, তাদের গুলিতে নিশ্চিত ওয়াইসি মারা গেছেন। কিন্তু, গুলি ওয়াইসির গায়ে লাগার বদলে গাড়ির চাকায় লেগেছিল। যদিও ওয়াইসিকে হত্যা করেছে ভেবে গুলি চালানোর পরই তারা ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়। তবে, শুভম ঠিক কতগুলো গুলি চালিয়েছিল, তা জানাতে পারেনি শচিন। হামলা চালানোর পর দুজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে শচিন তদন্তকারী পুলিশদের জানিয়েছে
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct