অধিকার
এস ডি সুব্রত
___________
অনিক একা থাকতেই পছন্দ করে। খুব প্রয়োজন না হলে কারো সাথে কথা বলে না সাধারণত। বড় আটকপালিয়া । জীবনে কোন কাজেই ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়না অনিকের। তবে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে অনবরত । স্বপ্ন দেখাতে মানুষ লাগে । একজন নিজের মানুষ । বৈরী সময়ে অনিক খুঁজে পায় একজন মানুষ ।আপন করে ভাববার মতো মানুষ যে অনিকের চলার পথে , স্বপ্নের পথে অনুপ্রেরণার সঙ্গী হয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় । অনিকের স্বপ্নের চোখে মায়াবী কাজল এঁকে দেয় অদিতি । অদিতি অনিকের ভরসার নাম , স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার প্রেরণার নাম । এক অনন্য ভাললাগার নাম অদিতি । ক্ষয়িষ্ণু বুকের ঘরে স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে অনিকের জীবনে আসে অদিতি
অনিক তার ভাললাগা মন্দলাগা ,দূঃখসুখের সমস্ত কিছুই শেয়ার করে অদিতির সাথে । অদিতিও অনিকের পাশে থেকে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখায় । অদিতির অধরা ছোঁয়ায় অনিকের স্বপ্নের বাগানে লাল নীল গোলাপ ফুটে নিত্য ভোরের। অনিক হারিয়ে যায় অদিতির অনন্য শুভ্রতায় , সুন্দর কথামালায় । অনিক মাঝে মাঝে অবাক হয় কাছে না থেকেও একজন মানুষ আরেকজন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারে , সামনে যাবার অনুপ্রেরণা হতে পারে কেমন করে? কত বিচিত্র এই পৃথিবী । কখনো কখনো পৃথিবীটা কত সুন্দর হয়ে ধরা দেয় ঠিক ভেবে উঠতে পারে না অনিক । অনিক ভাবে অদিতির সাথে পরিচয় না হলে হয়তো এই বিশাল পৃথিবীর অসাধারণ ভাললাগার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতো । যাকে কখনো দেখেনি , কখনো দেখা হবে কিনা তারও কোন ঠিক নেই । অথচ কি এক অসম্ভব আকুলতা , ব্যাকুলতা নিয়ে প্রতি মূহুর্তে অনিক অদিতির প্রতিক্ষায় থাকে । তবে অদিতি কখনো অনিককে ভালবাসে কিংবা ভাল লাগে এমনটি বলেনি । কিন্তু অনিকের সুখ দুঃখের অনুভূতি গুলো খুব টের পায় । বুঝতে পারে কিসে অনিকের কষ্ট হয় ,কিসে আনন্দ পায় । কখনো অনিককে কষ্ট দিতে চায়না অদিতি । সেজন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে অদিতি নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে । অনিক বড় কল্পনা বিলাসী । বড় আবেগ প্রবন। অদিতি অনিকের আবেগ বুঝতে পারে ।সেজন্য মাঝে মাঝে অনিককে সতর্ক করে যে ,এত নিয়ে চলতে গেলে জীবনে কষ্ট পেতে হবে । কিন্তু অনিক সহজ আবেগের মায়াময় বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না ।ফলে সামান্য কারনে বড় কষ্ট পায় প্রায়শই । কখনো ভালবেসে অনিকের মন সংকীর্ণতায় ডুবে যায় । কোন একজনকে একান্ত নিজের করে পেতে চায় । যে চাওয়া বাস্তবতার পরিপন্থী । বুঝেও বুঝতে চায়না অনিকের মন । এজন্য অদিতি অনিককে খুব কড়া কথা শুনিয়ে দেয় । যদিও অদিতি ভুল কিছু বলেনি , তবু অনিক ভীষণ কষ্ট পায় । নীরব অশ্রুজলে কষ্ট লাঘব করে ব্যাথাতুর সময়ের সাথে । পরম ভাললাগা আর আবেগের আতিশয্যে অনিক মাঝে মধ্যেই অদিতির ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করে । অনিক চায় অদিতি তার পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিবে । কিন্তু অদিতি অনিকের এমন আচরণ মেনে নিতে পারে না । অনিককে সংকীর্ণ মনের মানুষ বলতে দ্বিধা করে না । এবং শেষ পর্যন্ত অদিতি স্পষ্ট করে অনিককে বলে দেয় তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলার অধিকার সে তাকে দেয়নি । অনিক হতভম্ব হয়ে যায় অদিতির কথায় । অনিকের মাথা ঝিম মেরে যায় । এক অসহ্য বেদনাবোধ অনিককে আঁকড়ে ধরে । অদিতি এভাবে কথা শুনিয়ে দেবে অনিক কখনো ভাবেনি । অনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ,কি করবে । অদিতিকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হবে । কিন্তু অধিকারহীন সম্পর্ক কিভাবে টিকিয়ে রাখবে বুঝতে পারেনা অনিক । আঁধারের হাতছানিতে ডুবে যায় অনিকের
স্বপ্নের চাঁদ ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct