আজিজুর রহমান,গলসি,আপনজন: ঘরের কৌটায় নেই চাল, ডাল, মুড়ি। ছোট্ট একটি হাড়িতে ফুটছে মেগে আনা চালের ভাত। আর ভাতের সাথে তরকারী বলতে একটু আলুভাজা। এমনই নিত্যদিনের খাবার মেনু গলসি ১ নম্বর ব্লকের পারাজ গ্রামের ৭৫ বছরের গৃহহারা বৃদ্ধা আনোয়ারা বিবির বাড়িতে। সাথে আছে তার মৃত নাতনী লিমি বেগমের ১১ বছর ও ৭ বছরের দুই বাচ্চা আমিনা খাতুন ও প্রেম মন্ডল। গত চারমাস যাবত পারাজ গ্রামে অধহারে ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন ৭৫ বছরের ওই বৃদ্ধা। আনোয়ারা বিবি জানিয়েছেন, বয়সের ভারে তিনি আর উপার্জন করতে পারেন না। পরের বাড়িতে চেয়ে মেগে কোনক্রমে এক বেলা অন্ন যোগার করেন বাচ্চাদের। আর এক বেলা উপোস করে কাটায়। পরের কাছে চেয়ে দুইজনের জামাকাপড় ব্যবস্থা করেন। শীতবস্ত্রও ভালো কিছু নেই। তার দাবি পেটের জ্বালা এখন নিত্য সঙ্গী তার পরিবারে। তাদের রেশন কার্ড না থাকায় তিনি সরকারি সাহায্যও পাচ্ছেন না। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার বর্ধমানের নাতজামাই সুকুর মন্ডল ক্যান্সারে মারা যান। নাতজামাই এর মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কিছুদিনের মধ্যেই নাতনী লিমি বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তখন ছোট্ট প্রেম ৬ মাসের বাচ্চা। তারপর থেকে তিনি বর্ধমান ওই বাচ্চাদের নিয়ে থাকতে শুরু করেন। কয়েক বছর কাটালেও ঘরভাড়া না মেটাতে পারায় বর্ধমানের দুবরাজের ডাঁঙাপাড়ার ভাড়াবাড়ি ছাড়তে হয় তাকে। তার দাবি, সরকার একটু রামের কুঠির করে দিলে তিনি নিশ্চিতে মরতে পারবেন। প্রতিবেশী, আজমীরা বেগম, সেখ লাল্টুরা বলেন, গত চার মাস আগে গলসির পারাজ গ্রামের কুমোর পুকুর পাড়াতে আসেন আনোয়ার বিবি। এখানেই তার স্বামীর বাড়ি ছিল। সেখানে ঠাঁই না মেলায় বর্তমানে তিনি এক মহিলার নির্মীয়মাণ বাড়ির এক চালাঘরে আছেন। তারা জানাই, পাড়ার লোকেরা অল্প কিছু চাল ডাল দিয়ে সাহায্য করে। তাকে কোন রকম ভাবে চলে। সরকার যদি পাশে দাড়াই তাহলে পরিবারটি বেঁচে যাবে। প্রতিবেশী গোলাপী খাতুন বলেন, বহু কষ্টে চলে ওদের। কোনদিন রান্না হয় কোনদিন হয়না। একদিকে বয়সের ভারে ওর উপার্জন বন্ধ। অন্যদিকে নিজের ও দুই অনাথের ক্ষুধার জ্বালা। তারপর নিজের ঘরবাড়ি বলতে কিছুই নেই। যেকোন দিন পরের ঘরটা ছাড়তে হবে। এমন হলে অবস্থায় কি হবে ওদের সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা হয়। তার দাবি সরকারি যদি ঘর করার ব্যবস্থা করে তাহলে ওই অনাথ দুটির একটু সুবিধা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct