দায়িত্ব
শঙ্কর সাহা
____________
বিয়ের পর থেকেই রান্নাঘরটিই তন্নির শ্বশুর বাড়ির একমাত্র ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়। গ্রামের পাঁচু পুরোহিতির মেয়ে তন্নি।পূজোর সুবাদে পাঁচু পুরোহিতির বেশ নামডাক ছিল।পরিবারে স্বচ্ছলতা না থাকলেও সন্তানদের আদর্শে মানুষ করেছেন পাঁচু পুরোহিত।
তন্নির সঙ্গে পাড়ার মাস্টারমশাই নীলরতন বাবুর বড়ছেলের বিয়ে হয়। তন্নিকে পছন্দ করে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন নীলরতন বাবু। কিন্তু গরীব পরিবারের মেয়ে বলে শ্বশুর বাড়িতে এসে শাশুড়ীর অনেক কড়া শুনতে হয় তন্নিকে। সব শুনেও কোনো সময়ে মাথা উচু করে কথা বলেনা তন্নি। সেদিন বাড়িতে ছোটো বউয়ের সামনে তন্নিকে শুনিয়ে শুনিয়ে দিগম্বরী দেবী বলে ওঠেন, “ বড় বউমা ওগুলো রাঁধতে পারেনা। ওগুলো ওরা খেয়েছি কিনা কোনোদিন!”
শাশুড়ীর কড়া কথায় চোখে জল ভরে আসে তন্নির। কিন্তু শ্বশুর মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে সবকিছু ভুলে যায় সে।এই বাড়িতে বাবার মতো তাকে যে দেখেন ওনি।
সেদিন সকাল থেকে কাজের ছিল ভীষণ চাপ। রান্নাঘরে সবার জন্যে রান্না করছে সে। এমন সময় উপর থেকে একটি চিৎকার শুনে ছুটে আসে তন্নি। বিছানায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছে নীলরতন বাবু।শাশুড়ী কাঁদছেন।তন্নি বুঝতে পারে বিপদ খুব সামনে চলে এসেছে। সকলে মিলে তাড়াতাড়ি নার্সিংহোমে নিয়ে আসে। ডাক্তার মেডিক্যাল টেস্ট করেই জানিয়ে দেন বাইপাস করতে হবে। কালকের মধ্যে না করলে বাঁচানো যাবেনা। আড়াই লক্ষ টাকা জমা করতে হব।
বাড়িতে এসেই দিগম্বরী দেবী ঠাকুর ঘরে বসে কাঁদতে থকেন। এতগুলো টাকা একসাথে যে বের করা প্রায় অসম্ভব।গতবছর চাকুরির জন্যে ছোটোখোকা প্রচুর লোন নিয়েছে। এখন কি হবে ?এমন সময় তন্নি পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলেন , “ মা,এগুলো রাখুন”
..কি বউমা,এগুলো!”
...আমার বিয়ের গয়না। বাবা দিয়েছিলেন। কাল এগুলো বিক্রি করে বাবার বাইপাশ করাতে হবে।“
..” কিন্তু,এগুলো তো তোমার বাবার দেওয়া বউমা!”
..তাতে কি মা।এক বাবার জিনিসে যদি অন্যবাবার প্রাণ বাঁচে। বলে ঠাকুরকে প্রণাম করে ঠাকুরঘর থেকে বেরিয়ে আসে তন্নি ।
দিগম্বরী দেবীর চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন বউমা তন্নির উপস্থিতি। আজ সে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য গুণের পরিচয় দিয়েছে তা হয়তো কোনো দিনই ভোলার না। পুত্রবধূ সত্যিই যে মেয়ের সমান আজ কথাটি আবারও যে বুঝতে পারল সকলে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct