ক্ষতচিহ্ন
হাবিবুর রহমান
______________
বুড়ি খেনদীপিসির কুলগাছটি এখনো খাড়া। যদিও পিসির আওয়াজ থেমে গেছে।আমার মনের আকাশে দগদগে ঘা এখনো বিরাজমান। কাল চরকি ঘোরা ঘুরছে। দেখতে দেখতে কতদিন হয়ে গেল। তবু মনে হয় এই তো সেদিন।
মা সরস্বতীর আবাহন আগামীকাল। টিন এজার আমরা কজন। তাদের মধ্যে মলির সঙ্গে আমার সখ্যতা বড্ড বেশি।
বিকালে একপ্রস্থ খেন্দিপিসির কুলগাছ নাড়া দিলুম।পিসির পঞ্চ ইন্দ্রিয় খুব খাড়া।
ঠিক টের পেয়ে যায়, গালি পাড়ে,কোন গু হেকোর বেটারা রে।দিন নাই,রাত নাই কুলগাছে নাড়া দিচ্ছ?
শুধু কি তাই? একটা কঞ্চির বাড়ি নে ধেয়ে এলো।
রতন ছিল ধেড়ে খচ্চর।সে বুড়ি পিসিকে ভেঙচায়, পিসির গাছে কুল , টক বিলকুল।মা পঞ্চমির কৃপায়, এ কুল মিষ্টি হবেনি।
খেন্দিপিসি তো দেদার রেগে শাপ শাপান্তি করতে থাকে,মররে ওলা উঠো।মা পঞ্চমীর মুখ যেন না দেখিস আর।
মা আসার আগে আগে আমার কুলে হাত দিলি। ভেদবমিতে মরিস কেনে?
সন্ধায় মলির আবদার, পিসির গাছের কুল খাবে।
আমি যাবনা, সে শুনবে না
কি করি, বাধ্য হয়ে গেলুম গাছে। নাড়াতেই খেন্দী পিসির চিৎকার,কে রে গুহেকোর বেটা।
ভয়ে মলি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
অনেকক্ষন চুপচাপ। মলি বলে,আমি ডাল টেনে ধরি তুমি,আস্তেআস্তে কুল পাড় , যাতে বুড়ি পিসি টের না পায়।
ব্যাস যে কথা সেই কাজ।
মলি নিচের ডাল টানে,আমি ওপরের ডাল থেকে কুল পাড়ছি।
বুড়ি পিসির হাঁক, কেরা?
আমি ভয়ে ওপরের ডাল ছেড়ে দিলাম।
ঝপাং করে মলির কপাল ছুঁয়ে সে যথা স্থানে গেল।
কুলের কাঁটা মলির কপালে ফুটে গেল। যন্ত্রণায় সে চিলবিল চেল্লায়।
বুড়িপিসিও,শাপ শাপান্তি করতে থাকে।
দৌড় দৌড় ,দে দৌড়। খোলা মাঠে আলোয় এসে দেখি মলির কপাল থেকে দরদরিয়ে রক্ত পড়ছে। আমার জামায় চেপে ধরলাম মলির কপালে। কতক্ষণ পরে নর্মাল হয়ে বাড়ি গেলুম।
তা বলে পরের দিন মায়ের আবাহনে আমার আর মলির আনন্দে ভাতা পড়েনি।
সময় গড়িয়েছে,মলির কপালের দাগ কিন্তু মিলোয় নি।
যেটা মিলিয়ে গেছে- সেটা হল, সেই মলি আমার হয়নি।
কাল তাকে টেনে নিয়ে গেছে অন্যের ঘরে।
আমিও কোথা থেকে কোথায় ছিটকে গেলুম।
কিন্তু কালের ধাক্কা সামলে নাড়া কুলগাচটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
আর আমার মনে তার দগদগে ক্ষত বিরাজমান। রক্তমাখা জামা টিও হারিয়ে গেছে।
মা সরস্বতী তোমার আবাহন তো আগামিকাল, তুমি আমার মনের ক্ষত মিলিয়ে দাও মা, মিলিয়ে দাও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct