পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রধান আকর্ষণ উত্তরপ্রদেশ। এই রাজ্যে উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না, তার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ভাগ্য। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে রাজ্যসভার ৭৫টি আসন খালি হবে। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড ও পাঞ্জাবের ১৯টি। বিজেপির আসন কমার অর্থ বিরোধী শক্তি বৃদ্ধি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন বিধানসভা ও সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যরা। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শেষ কিস্তি।
গোয়ার রাজনীতি বরাবর জাতীয় পর্যায়ের দুই শক্তি কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। ভারসাম্য রক্ষার কাজ করেছে স্থানীয় কিছু দল। এই রাজ্যের রাজনীতিতে ‘দুর্নীতিবাজ’দের প্রভাব ঠেকাতে এই প্রথম আপ ‘আদর্শ’ ও ‘নৈতিক’ মূল্যবোধ হাতিয়ার করে আটপৌরে আমজনতার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় নেমেছে। জমি ও খনি মাফিয়া এবং চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত এই রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা স্বাভাবিক নিয়মে যাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আপ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে যাঁকে বেছে নিয়েছে, সেই অমিত পালেকর স্থানীয় আইনজীবী ও সমাজকর্মী। সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করে পরিচিতি পেয়েছেন। উত্তরাখন্ডে আপের বাজি স্থানীয় সাবেক সেনানী, অবসরের পর যিনি সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। দিল্লির পরিধি ছাড়িয়ে আপ যত বাইরের দিকে এগিয়েছে, ততই ঝরে পড়েছে তাদের আদর্শের নামাবলি। নীতি ও আদর্শের জয়গান গেয়ে কেজরিওয়াল ২০১৪ সাল থেকে হাজারে হাজারে নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবীকে সংগঠিত করেছিলেন। অথচ আজ যাঁরা ক্ষমতার টানে শামিল হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীরাই বেশি। আন্না হাজারের প্রভাবমুক্ত হয়ে কেজরিওয়াল যত ‘বাস্তববাদী’ নেতা হয়েছেন, ততই বদলেছে দলীয় চরিত্র। ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী না হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ধর্মীয় মানসিকতায় তিনি বাতাস দিচ্ছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে বয়স্ক হিন্দুদের অযোধ্যা, মুসলমানদের আজমির শরিফ ও খ্রিষ্টানদের তামিলনাড়ুর ভেলানকান্নির বিখ্যাত গির্জায় নিখরচায় ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শাহিনবাগের আন্দোলন থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। জম্মু-কাশ্মীরের সরকারি নীতি সমর্থন করেছেন। বিজেপির ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদের’ বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে আজ তারা নারাজ। পাছে ‘হিন্দু’ মানসিকতায় আঘাত লাগে! যে কেজরিওয়াল একদা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজপথে শুয়ে অনশন করেছিলেন, তিনিই আজ কেন্দ্রীয় আধিপত্য সহ্য করে উপরাজ্যপালের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। ভোটে জিততে প্রকাশ্যে হিন্দু দেব–দেবীর পূজার মন্ত্রোচ্চারণ করছেন। আর পাঁচটা দলের সঙ্গে আজকের আপ পার্থক্য শূন্য। বরং বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে যার জন্ম, পাঁচ রাজ্যের ভোটের প্রাক্কালে আজ সেই আপকে বিজেপির ‘বি টিম’ বলে কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে।
তবু কেন এভাবে এত দ্রুত ভিন রাজ্যে সাড়া ফেলেছে এই দল? একটা কারণ, দিল্লিতে তাদের উন্নয়ন ও শাসনের ‘মডেল’। রাজধানী হওয়ার সুবাদে তা সারা দেশে প্রচার পেয়েছে। প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত দিল্লিবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের এই নতুন ‘মডেল’ কেজরিওয়াল সফল করতে পেরেছেন। সেই সঙ্গে দুর্নীতি দূর করতে সাধারণ সরকারি পরিষেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেও তিনি সফল। প্রচারের জোরে এই ‘মডেল’-এর খবর পৌঁছে গেছে রাজ্যে রাজ্যে। সেটাই তাঁর দলের জনপ্রিয়তার ভিত। পাঞ্জাব, গোয়া ও উত্তরাখন্ডে আম আদমি পার্টি কতটা সফল হবে, সেই উত্তর অদূর ভবিষ্যতের গর্ভে। সাফল্য পেলে আগামী দিনের জাতীয় রাজনীতি রং বদলে চনমনে হয়ে উঠবে। বিজেপির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য জোটের নেতৃত্বদানের প্রশ্নে কংগ্রেসের দাবি অস্বীকার করে হইচই ফেলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে তুলে ধরেছেন জোটের মুখ হিসেবে। তিন রাজ্যে সফল হয়ে আপ বিকশিত হলে সর্বভারতীয় প্রভাবশালী দল হিসেবে তাদের অস্বীকার করা কঠিন হবে। কংগ্রেস নিজের ক্ষয় ঠেকাতে না পারলে বিজেপির বিপ্রতীপে জোটের নেতৃত্বদানের প্রশ্নে কেজরিওয়ালও তখন হয়ে উঠতে পারেন অন্যতম দাবিদার। (সমাপ্ত...)
সৌজন্যে: প্র. আ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct