নাজিম আক্তার,চাঁচল,আপনজন: সদ্যোজাত শিশু বদলের অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল মালদহের চাঁচলে। ক্ষুদ্ধ পরিজনেরা ওই নার্সিং হোমে তালাও ঝুলিয়ে দেন। শনিবার দুপুরে মালদহের চাঁচল-আশাপুর রাহ্য সড়কের রায়পাড়ায় অবস্থিত দিশারী নার্সিং হোমের ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়ে পৌঁছায় চাঁচল থানার পুলিশ। একই সময়ে চাঁচলের মহকুমাশাসকেও দেখা গিয়েছে। দেখা গেছে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাসকেও। প্রসূতির পরিবারে অভিযোগ, চিকিৎসকের নথিতে পুত্রসন্তান লেখা। কিন্তু তাদের কন্যাসন্তান দেওয়া হয়। তারপরেই শিশু বদলকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি সন্তান প্রসবের জন্য হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা রাজেশ আগরওয়াল তার স্ত্রীকে চাঁচল দিশারী নার্সিং হোমে ভর্তি করান। তারপর রেশমী দেবীর অস্ত্রপচার হয়। অস্ত্রপচারের সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রীকান্ত মাঝি পরিবারকে কিছু জানাননি।পরে পরিবারের লোকেরা জানতে পারেনন, তাদের কন্যা সন্তান হয়েছে।কিন্তু প্রসব হওয়ার দুদিন বাদে শনিবার নার্সিং হোমের শংসাপত্র দেখেই পরিবারের চোখ কপালে ওঠে।রেশমী দেবী কন্যা সন্তান নয়, পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। নথিতে ডাক্তারের হাতে লেখা ‘বয় বেবি’ স্পষ্ট। নীচে ডাক্তার শ্রীকান্ত মাজির সইও রয়েছে। আর এমনটা কেন হল, চিকিৎসককে পরিবারের তরফে জিজ্ঞাসা করা হলে,তিনি নাকি আলোচনা করে জানাবেন বলে জানান। চিকিৎসকের এমন আচরণ দেখে ক্ষিপ্ত ও সন্দেহ জাগে পরিবারের। প্রসূতি রেশমি দেবীর স্বামী রাজেশ আগরওয়াল বলেন, প্রসব যন্ত্রণার পর স্ত্রীকে দিশারি নার্সিং হোমে নিয়ে আসি।চিকিৎসকের পরামর্শে সিজার হয়। সিজারের পর চিকিৎসক কিছু জানাননি।
পরে নার্সিং হোমের স্টাফরা আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে বলে জানান। কিন্তু ছুটি নেওয়ার সময় শংসাপত্রে ‘বয় বেবি’ লেখা আছে দেখে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে,তিনি এড়িয়ে যান। চিকিৎসক দুর্ব্যবহার করেন। আমরা চাই আমাদের প্রকৃত সন্তানকে হাতে তুলে দেওয়া হোক। এবিষয়ে থানা ও মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছি। ঘটনা নিয়ে চিকিৎসক শ্রীকান্ত মাজিকে ধরা হলে, সংবাদমাধম্যের কাছে মুখ লুকিয়ে বলেন, সন্তান কি হয়েছে আমি জানিনা। নার্সরা জানেন। ওরাই বলতে পারবেন।শংসাপত্রে ‘বয় বেবি লেখা সই নাকি তার নয় বলে দাবি করেছেন চিকিৎসক।দিশারী নার্সিং হোমের কর্তৃপক্ষ মামুনুর রশিদ জানান, শংসাপত্রে নার্সরা লিখেছেন, চিকিৎসক তাতে সই করেছেন। ভুল হয়েছে। বিষয়টা আমরা দেখছি। নার্সিং হোমে এমন ঘটনা চলাকালীন হঠাৎ ওই নার্সিং হোমে এসে পৌঁছান চাঁচলের মহকুমা শাসক কল্লোল রায়। সাথে ছিলেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাস।বিষয়টি নিয়ে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিককে ধরা হলে তিনি জানান, নার্সিং হোম স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে কিনা তা পরিদর্শনে আসি।মৌখিক আকারে শুনতে পাই এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনও কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। তবে এই ঘটনাকে ঘিরে নার্সিং হোম চত্বরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। নার্সিং হোমের দরজা লাগিয়ে দিতেও দেখা যায়।ঘটনাস্থলে চাঁচল থানার পুলিশ পৌঁছায়।
চাঁচল শহরের বুকে দিশারী নার্সিং হোমে শিশু বদলের অভিযোগকে ঘিরে নার্সিং হোমের পরিষেবা প্রশ্ন তুলছেন মহকুমাবাসী। পাশাপাশি এমনও অভিযোগ উঠেছে, সুপার হাসপাতালের পাশেই দিশারী। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ হাসপাতালের পরিষেবা বাদ দিয়ে সেই নার্সিংহোমেই বেশি সময় দেন। এছাড়া হাসপাতালে আসা প্রসূতিদের ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। ার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে একাধিকবার বেনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, উঠেছে এমন অভিযোগও। তবে এবার শিশু বদলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় নতুন করে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তাহলে কি মোটা টাকার বিনিময়ে সেখানে শিশুপাচারের চক্র সক্রিয়, উঠছে এমন প্রশ্নও। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct