পড়াশোনাতে আগ্রহ বাড়াবার জন্য, অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য, সকল স্তরের পড়ুয়াদের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এর উদ্যোগে গৃহীত “বাংলার শিক্ষা দুরভাসে” প্রকল্প টি পড়ুয়াদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর পড়ুয়ারা টোল ফ্রি নম্বর এর মধ্যমে সকল বিষয়ের নিজেদের জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের সমাধান অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলীর কাছে খুব সহজেই জেনে নিতে পারছে। বর্তমান প্রেক্ষিত নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস শব্দদ্বয়ের সাথে বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব তথা আমাদের দেশের সকল নাগরিক, ছাত্র ও যুব সমাজ খুব ভালোভাবেই সুপরিচিত। কোভিড অতিমারির প্রভাবে ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে এখন অবধি সামাজিক জনজীবন অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত ও সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও অনেকটাই পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কো ভি ডের ভয়াবহ বিভীষিকাময় আতঙ্কের কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় পড়ুয়ারা ক্লাস রুমের পাঠ গ্রহনের স্বাদ আস্বাদন থেকে যেমন বঞ্চিত, তেমনি তাদের বছরভর নিরবিচ্ছিন্ন সার্বিক মূল্যায়নের অন্তর্গত প্রস্তুতিকালীন, গঠনগত, ও পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নও সঠিকভাবে হয়নি বললেই চলে। স্মার্ট ফোনের সাহায্যে ভার্চুয়াল বা অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষাদান এবং বিভিন্ন সময়ে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর দ্বারা পড়ুয়াদের সার্বিক মূল্যায়ন কিছুটা হলেও আশানুরূপ উদ্দেশ্য পূরণ কিছুটা করতে পেরেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের দরজা পড়ুয়াদের জন্য বন্ধ থাকার কারণে তাদের শিশু-কিশোর মনে মানসিক, প্রক্ষোভিক, নৈতিক, সৃজনাত্মক বিকাশে একটা বাধার সৃষ্টি হয়েছে বৈকি। শুধু তাই নয়, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সু অভ্যাস গঠন, পারস্পারিক সহযোগিতাবোধ তৈরী, বন্ধুত্ব সু দৃর করন প্রভৃতি নানান সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী থেকেও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে একঘেয়েমি র সৃষ্টি হয়েছে,অনেক পড়ুয়ারা অবসাদের শিকার হচ্ছে। মাঝে দু একবার বিদ্যালয় এর দরজা খুলেছে, কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য এবং খুবই সীমিত সময়ের জন্য। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিদ্যালয় পড়ুয়াদের একঘেয়েমি কাটাবার জন্য, পড়াশোনাতে আগ্রহ বাড়াবার জন্য, অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য, সকল স্তরের পড়ুয়াদের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এর উদ্যোগে গৃহীত “বাংলার শিক্ষা দুরভাসে” প্রকল্প টি পড়ুয়াদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর পড়ুয়ারা টোল ফ্রি নম্বর এর মধ্যমে সকল বিষয়ের নিজেদের জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের সমাধান অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলীর কাছে খুব সহজেই জেনে নিতে পারছে। “ বাংলার শিক্ষা দুরভাসে” প্রকল্প টি শিক্ষক শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। সমগ্র রাজ্যের গ্রাম শহর নির্বিশেষে অগণিত পড়ুয়ারা টোল ফ্রি নম্বর 18001232823 এ ফোন করে মুহূর্তেই যে কোন প্রশ্নের উত্তর সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে পেয়ে যাচ্ছে। পড়ুয়া দের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষা প্রশাসনের নির্দেশমতো স্থানীয় প্রশাসন গুলো নিজেদের বিদ্যালয় এর শিক্ষক-শিক্ষিকাগণের মাধ্যমে বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী কে এই বিষয়ে জানাতে প্রয়োজনীয় সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচিত বাংলা সংবাদ চ্যানেলগুলোতেও নির্দিষ্ট সময়ে লাইভ প্রোগ্রামে ছাত্র-ছাত্রীরা টোল ফ্রি নাম্বার এ ফোন করে সরাসরি সে সময় চ্যানেলে উপস্থিত অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলীর কাছে তাদের নানান অজানা প্রশ্নের উত্তরও পেয়ে যাচ্ছে। এক কথায় কোভি ড কালে পড়াশোনার মূল স্রোত থেকে যখন অধিকাংশ পড়ুয়া বিচ্ছিন্ন- বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল, ঠিক সে সময় “ বাংলার শিক্ষা দুর ভাসে” এবং “ বাংলার শিক্ষা ক্লাসরুম” এই দুটি সাধু উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এই বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশ দেবার জন্য শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দিষ্ট সময়ে ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং ও দেওয়া হয়েছে। যাই হোক, পড়ুয়াদের মনে নতুন করে উৎসাহ, উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে উক্ত উদ্যোগগুলো। কোভিড অতিমারীর একেবারে শেষ লগ্নে এসে বিদ্যালয়গুলোর দরজা যখন নতুন করে খোলার অপেক্ষায় অপেক্ষারত, ঠিক তার প্রাকমুহুর্তে শিক্ষা দপ্তরের এই অভিনব প্রয়াস পড়ুয়াদের নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করবার কাজ করে চলেছে। তবে উক্ত দুটো উদ্যোগের পাশাপাশি পড়ুয়াদের “মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সিলিং” করবার জন্য একই রকম ভাবে ভিন্ন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করলে হয়তো সকল পড়ুয়াদের “মানসিক স্বাস্থ্য” সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া সম্ভব হতো, অন্তত এই সমগ্র েকাভিড কালের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে। তবে একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-শিক্ষক পারস্পারিক উপস্থিতির যে উজ্জ্বলতা, সেটা হয়তো এই সময়ে সম্পূর্ণ সম্ভব না হলেও, অনস্বীকার্য ভাবে এ কথা বলা যায়, উপরিউক্ত উদ্যোগগুলো পড়ুয়াদের অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী হয়েছে। এর মাধ্যমে পড়ুয়াদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের সাথেও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এক কথায়, রাজ্য শিক্ষা দপ্তর থেকে জেলা শিক্ষা দপ্তর হয়ে বিদ্যালয় গুলোর মাধ্যমে একেবারে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সাধিত হয়েছে উক্ত উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে। যায় ইতিবাচক ফল মিলছে পড়ুয়াদের শিশু-কিশোর মনে। আশা করা যায়, কো ভি ড পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় এর দরজা খুললে সকল পড়ুয়া ই যেনো পূর্বের মতোই তাদের সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক, সহজাত পরিবেশ আবার যেনো ফিরে পায়।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক শিক্ষক, ভূগোল বিভাগ, বালা পুর উচ্চ বিদ্যালয়, তপন ,দক্ষিণ দিনাজপুর)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct