সুইচ অফ
শঙ্কর সাহা
__________
হঠাত ফোনটা রেখে দেয় তুলিকা। বারে বারে ফোন করলেও তুলিকা ফোনটি রিসিভ করেনা। তুলিকা যে কতটা অভিমানী তা হয়তো এই দীর্ঘ সাত বছরের সম্পর্কে রাজদ্বীপ বেশ বুঝতে পেরেছে।
“ প্লিজ! এমন করোনা তুলিকা, তুমি ভুল ভাবছো আমায়? ” রাজদ্বীপের এই মেসেজটি আজও শেষ স্মৃতি রয়ে যায় তুলিকার ফোনে। সেদিন ছিল শুক্রবার। বি.এড. এর পরীক্ষা শেষে তুলিকা বিকেলে মিলেলিয়ান পার্কে রাজদ্বীপের সঙ্গে আজ দেখা করার কথা। সবই ঠিকঠাক ছিল।অফিস থেকে বেরিয়ে তাদের বিকেলে দেখা হবার কথা। সেইদিন অফিসে স্টাফ কম আসায় সকাল থেকে ভীষণ কাজের চাপ। ‘হয়তো আজ ওভারটাইম ডিউটি করতে হবে,কি করে তাকে আজ বলি!সে তো শুনবে না আমার কথা” এমনই ভাবতে থাকে রাজদ্বীপ।
“ আমি বেড়িয়ে গেছি রাজদ্বীপ। বাড়িতে মা একা আছেন! দেরি করবে না কিন্তু? “ –তুলিকার মেসেজে রাজদ্বীপ বিব্রত হয়ে পড়ে। কি বলবে তাকে? সে তো যথেষ্ট অভিমানী। তার এখনো অফিস থেকে বেড়োতে দেরী আছে। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে ছয়টা। হঠাত রাজদ্বীপের মেসেজ,” অপেক্ষা করো ! আমি এই আসছি।ভীষণ কাজের চাপ। ফিরে সব বলছি!”
-“ তোমায় আর আসতে হবেনা, আমি বেড়িয়ে গেছি ।রাখছি”-বলে ফোনটি কেটে দেয় তুলিকা।
-আমি বেরিয়ে গেছি তুলিকা। একটু অপেক্ষা করো।
-আমি তোমায় আসতে বলেছি? প্লিজ রাজদ্বীপ। ! তুমি দায়িত্বজ্ঞানহীন, জাস্ট ক্যাজুয়াল তুমি সব ব্যাপারে। আমি দেখা করতে চাই না।রাখছি!
-রেখো না। এত অবুঝ হচ্ছো কেন তুমি? কী এমন করলাম! ভালোবাসা দেখাতে এসো না তো আর আহ্লাদ করোনা। তুমি ফিরে যাও। পরে কথা হবে। রাখছি। বলে ফোনটি সুইচ অফ করে দেয় তুলিকা।
- না, আমি আসবোই। মরে গেলেও আসবো...একটু খানিই তো পথ বাকি, ফিরে যেওনা! ।প্লিজ তুলিকা……বাড়িতে ফিরে ফোনটি সুইচ অফ করেই রেখে দেয় তুলিকা।রাত তখন দশটা। পাশের ঘরে টিভিতে নিউজ দেখছেন তুলিকার মা! আজ জাতীয় সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে, নিহত সাত। নিহতের মধ্যে একজন রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাঙ্কের কর্মী রাজদ্বীপ সান্যাল……।বয়স ত্রিশ। খবরটি শোনা মাত্র তুলিকা স্তম্ভিত হয়ে যায়।এই ঘটনার পরথেকে আর কারো সাথে একটি কথাও বলেনি তুলিকা। হাতের মোবাইলটি সুইচ অন করে দেখে রাজদ্বীপের শেষ মেসেজ, “ মরে গেলেও আসবো............!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct