ভূতের ভয়ে
আসগার আলি মণ্ডল
____________________
সন্ধ্যা হলেই সারা পাড়া নিস্তব্ধ।দিন চারেক হয়ে গেল রাস্তায় সেভাবে কারোর যাতায়াত চোখে পড়েছে না।সূর্য ডুবলেই যে যায ঘরে ঢুকে বসে থাকে।নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম।কারণ কি ?
অপঘাতে মৃত্যু হওয়া বসন্ত বাবুর আত্মা নাকি সকলকে ভয় দেখাচ্ছে।কেউ দেখেছে গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে। আবার কেউ কেউ দেখেছে পাড়ার বড়ো পুকুরে হাত-মুখ ধুতে।কেউ বা আবার হঠাৎ করে গাছের ডাল ভেঙে পড়তেও দেখেছে। আশি ছুঁই ছুঁই রমাকান্ত বাবুর ভুতের ভয় বড্ড বেশি।বাজারে একটা ছোট মুদির দোকান আছে।দু’বেলা সময় করে দোকান খোলেন।পাড়ায় ভুতের উৎপাত চলছে তিনিও চিন্তিত।যদিও তিনি কোনদিন ভুত দেখেন নি। তবে ভুতে বিশ্বাস আছে।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে পাড়ার পরিচিত যাকেই দেখেন তাকেই বলেন-ভুত তাড়ানোর একটা উপায় খুঁজতে।পরের দিন সকালে পাড়ার দু’একজন মাতব্বরের সঙ্গে রমাকান্ত বাবু দেখা করলেন ভুত তাড়ানোর উপায় আলোচনা করার জন্য।তারা অভয় দিলেন ভুত বলে কিছু হয় না।লোকে যা রটাচ্ছে আসলে ওটা ওদের মনের ভুল।আপনি পাড়ার বয়স্ক ব্যক্তি সবার মনে একটু সাহস যোগান ?
হতাশ রমাকান্ত বাবু সাত-সতেরো চিন্তা করতে করতে দোকানের পথে এগিয়ে চললেন।ভুতের ভয় মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছেন না।মাঝে মাঝে কানাইদের বাগানে দিন দুপুরে কলাগাছ ভেঙে পড়তে দেখেছেন। মজার ব্যাপারটা ঘটলো ঐ দিন সন্ধ্যারাতে।দোকান বন্ধ করে রমাকান্ত বাবু সেকেলে বেতের ডাঁপ লাগানো ছাতা বগলে চেপে ধরে হাতে একটা কেরোসিনের লণ্ঠন জ্বালিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।পাড়া শুনসান।কোন লোকজন ধারেকাছে নেই।খালের উপর বাঁশের সাঁকো পার হলেই রমাকান্ত বাবুর বাড়ি।সাঁকোর ঠিক মাঝ বরাবর যেতেই হঠাৎ বগলের ছাতাতে টান পড়লো।মনে হলো কে যেন পিছন থেকে ছাতাটা ধরে টেনে রেখেছে।রমাকান্ত বাবু আর যায় কোথায়।পিছন ফিরে না তাকিয়ে বাড়ির লোকের প্রতি উদ্দেশ্য করে চেঁচাতে লাগলেন।ওরে তোরা কে কোথায় আছিস রে তাড়াতাড়ি আয়।আমাকে ভুতে মেরে ফেললো। রমাকান্ত বাবুব চিৎকার শুনে ছেলে-ছেলের বউ দুরু দুরু বুকে বাড়ির বাইরে ছুটে এসে অবাক হয়ে যাবার মতো ব্যপার দেখলেন।খালের নিচ থেকে সাঁকোর উপর পর্যন্ত পোঁতা বাঁশে রমাকান্ত বাবুর ছাতার ডাঁপটি আঁটকে রয়েছে।ছেলে-ছেলের বউ মুচকি হাসতে লাগলেন।সব শুনে এবং দেখে রমাকান্ত বাবু নিজেও খুব লজ্জা পেয়ে ছেলে ও ছেলের বউ-এর আগে আগে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct