আপনজন ডেস্ক: ১৯৯৭ সালের এক ডার্বিতে বাইচুং ভুটিয়ার নায়ক হয়ে উঠেছিলেন হ্যাটট্রিক করে। এবার আর এক ডার্বি জন্ম দিয়ে গেল এক নতুন নায়কের। তিনি হলেন কিংবদন্তি জামশেদ নাসিরির পুত্র কিয়ান নাসিরি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ০-১ পিছিয়ে থাকা মোহনবাগানকে ৩-১ জেতালেন। নিজেই করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। ডার্বির নায়ক মাত্র ২১ বছর বয়সেই। গোয়ায় মান্ডবির তীরে স্কিলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যিনি ডার্বির ইতিহাসে নতুন তারা হিসাবে আবির্ভূত হলেন তাঁর শরীরে বইছে ইরানি রক্ত। যদিও কলকাতায় জন্ম। কিন্তু জামশিদের ছেলে তো, ইরানিয়ান ধাত থাকবেই।
সংযোজিত সময়ে জামশেদ-পুত্রের জোড়া গোল সমেত সমতাসূচক গোল, কিয়ান-ময় হয়ে থাকল শনিবাসরীয় ডার্বি। ডার্বির ইতিহাসে চতুর্থতম তারকা হিসাবে হ্যাটট্রিককারীদের তালিকায় নাম তুললেন কিয়ান। আইএসএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠতম হ্যাটট্রিককারী তো বটেই, এটিকে মোহনবাগানের হয়েও সবথেকে কমবয়সী গোলস্কোরার তিনি। তাছাড়া পরিবর্ত হিসাবে নেমে ডার্বিতে হ্যাটট্রিককারী, এরকম নজিরই বা ক’জনের আছে! ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বাকি সময়টুকু কিয়ান-কাহিনি। ৯১ ও ৯৫ মিনিটে পর পর দু’গোল করে ইতিহাস গড়ে ফেললেন জামশিদপুত্র। বড় ম্যাচের ইতিহাসে এর আগে কেউ সুপারসাব হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেননি। আর নজিরবিহীনভাবে কিয়ান চুরমার করে দিলেন পিতা জামশেদের সঙ্গে যে ক্লাবের গর্বের সম্পর্ক, তাদেরই। আশির দশকে নস্ট্যালজিয়ার মাঝদরিয়া ছুঁয়ে বসে থাকা বাঙালি ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে অমলিন হয়ে রয়েছেন জামশেদ নাসিরি-মজিদ বিষকর নামের দুই মহাতারকা। বন্ধু মাজিদ ট্র্যাজেডিকে সঙ্গী করে ইরানে ফিরে গেলেও জামশেদ বাসা বেঁধেছেন ভারতে। রয়ে গিয়েছেন একজন ভারতীয় হয়ে। পুত্র কিয়ানের জন্ম ভারতেই। পিতা ইরানি হলেও কিয়ান ভারতীয়। বেড়ে উঠেছেন ডার্বির মোহময় গল্প শুনে। কিয়ান জানান, “বাবা ডার্বিতে নামার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। সেরকম কোনও ম্যাচ চাক্ষুস করতে পারিনি। তবে সেই সময়ের ফুটবল বিস্ময় জাগাত।” ১৬ বছর বয়সে কিয়ানের মাঠে আবির্ভাব জুনিয়র আইলিগে মহামেডানের জার্সিতে। তারপরে মহামেডানের হয়েই সিনিয়র দলে জায়গা করে নেন। এরপরে মোহনবাগানের যুব দলে নাম লেখান। ২০১৯/২০ আইলিগের স্কোয়াডে ছিলেন সবুজ মেরুন জার্সিতে। তিনিই অবশেষে কুঁড়ি ফুটে ফুল হয়ে ফুটলেন একদম সর্বোচ্চ মঞ্চে, চোখধাঁধানো ইতিহাস গড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct