এহসানুল হক,বসিরহাট,আপনজন: সিলিকোসিসেও মৃত্যু-মিছিলের বিরাম নেই বসিরহাটের মিনাখা থানার অন্তর্গত গোয়ালদহ এলাকায়। দীর্ঘকাল ধরে রোগে ভুগে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে শ্রমিকরা। এ রোগ যার বুকে বাসা বাঁধে তাঁর জীবনের নিশ্চয়তা নেই। গোয়ালদহ গ্রামের বহু মানুষ এখন স্বজনহারা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।মিনাখাঁর ধুতুরদহ পঞ্চায়েতের দেবীতলা, গোয়ালদহ, ধুতুরদহ গ্রামের শতাধিক সিলিকোসিসে আক্রান্ত পরিবারের মানুষ। সিলিকোসিসে একের পর এক মৃত্যু হয়েছে। কোনও পরিবার সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে, বেশির ভাগই পায়নি। প্রতি ভোটেই প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু হাতে আসে না কিছুই। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, সিলিকোসিসে মৃত ৯ জনের পরিবার এককালীন ৪ লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য পেয়েছে।সিলিকোসিসে আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সহিদুল পাইক, রিয়াজুল পাইক, শহিদুল মোল্লার দাবি, সিলিকোসিসে ইতিমধ্যে একবছরে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনটি গ্রামে বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ক’দিন আগে গোয়ালদহে মারা গিয়েছেন সালাউদ্দিন মোল্লা। মৃতের স্ত্রী আনোয়ারা বিবি তিন সন্তানকে নিয়ে দরমার ভাঙাচোরা ঘরে কোনও রকমে থাকেন। রোজগেরে মানুষটার মৃত্যুর পরে সন্তানদের নিয়ে দুরবস্থায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। ভোটের কথা শুনে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে আনোয়ারা বলেন, ‘‘স্বামী অসুস্থ হওয়ার পরে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি ঠিকই, কোনও নেতাকে তো পাশে পাইনি! সন্তানদের নিয়ে কী ভাবে বাঁচব এখন, কেউ খোঁজ রাখে’। গ্রামের মানুষ শহিদুল ইসলাম বলেন,আমরা মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এবং গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় গোয়ালদহ গ্রামে গড়ে তুলি একটি দুই বেডের সেবা কেন্দ্র। সিলিকোসিস আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীর প্রয়োজন ২৪ ঘন্টার অক্সিজেন। এমনিতে গরিব তার উপর দিনে চারটে অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নানা ওষুধ-খাদান শ্রমিকের পরাবার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হতে শুরু করেছে। সেই সময় আমরা এবং বিভিন্ন সংগঠন অক্সিজেন এবং ওষুধের ব্যবস্থা করি কিন্তু তা দরকারের থেকে অতি সামান্য। এত মানুষকে এভাবে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা কোন সংগঠনের সম্ভব নয়। তাই আমরা রাস্তার লড়াইয়ের সাথে কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। হাইকোর্টের কেসের মূল আবেদন করেন আক্রান্ত শ্রমিকরাই । সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত গ্রাম এবং মৃতের সংখ্যা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct