মহামারির প্রতি ২৬ ঘণ্টায় একজন করে শত কোটিপতির জন্ম হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০ অতিধনীর সম্পদ দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতি সেকেন্ডে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে ১৫ হাজার ডলার করে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিতে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের জীবনমান খারাপ হয়েছে। অস্বস্তির কারণ হচ্ছে এই অসমতা। বয়সের কারণে নয়, করোনায় কার মৃত্যু হচ্ছে, সেটা পরিমাপের শক্ত একটা মাপকাঠি এখন আয়বৈষম্য। ২০২১ সালে গরিব দেশগুলোতে করোনায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন নাবিল আহমেদ। আজ শেষ কিস্তি।
অতিধনীদের জন্য বড় একটা
মওকা হচ্ছে মহামারি। অর্থনীতি বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল অঙ্কের টাকা ছেড়েছে, কিন্তু শেয়ারবাজার স্ফীতির মাধ্যমে সেগুলো অতিধনীরা নিজেদের পকেটে পুরে নিয়েছে। এর মধ্যেই তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা, ব্যক্তিমালিকানা, শ্রমিকের অধিকার খর্ব করা, করপোরেট কর হার কমানো, শ্রমবাজার উদারকরণের মতো ব্যাপারগুলো পুরোদমেই চলেছে। এর বিপরীতে, অসমতা আরও গভীর হওয়ায় শতকোটি মানুষকে ভুগতে হয়েছে। কিছু দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গরিব মানুষেরা ধনীদের চেয়ে চার গুণের বেশি মারা গেছে। ৩৪ লাখ কালো আমেরিকানের জীবনমান এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। মহামারি শুরুর আগে এ সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। একটা প্রজন্মের প্রচেষ্টায় যে লিঙ্গসমতা তৈরি হয়েছিল, মহামারিতে সেটাও নষ্ট হয়েছে। অনেক নারী ঘরে লিঙ্গ সহিংসতা নামের দ্বিতীয় মহামারির শিকার হয়েছেন।
‘টিকা-বর্ণবাদ’ সব অসমতার ক্ষেত্রে জ্বালানি জুগিয়েছে। এখন আইএমএফ টিকার ব্যাপারে যে কঠোর নীতি চাপিয়ে দিয়েছে, তাতে ৮০টির বেশি দেশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমরা ভুল সব কারণে ইতিহাস নির্মাণ করি। বিশ শতকের শুরুর দিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদে অসমতা যে চূড়ায় পৌঁছেছিল, এখন আবার সেই অবস্থায় পৌঁছেছে। উনিশ শতকের শেষভাগের গিল্ড যুগকে এরই মধ্যে সেটা ছাপিয়ে গেছে। এই ধরনের ব্যর্থতা থেকেই নতুনের জন্ম হয়। নয়া উদারবাদ এখন যেন উন্মাদের প্রলাপ। বর্তমান যুগের অভূতপূর্ব এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য অসাধারণ ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ দরকার। অর্থনৈতিক অসমতা এবং লিঙ্গ ও বর্ণবৈষম্যকে পরাস্ত করার জন্য প্রতিটি সরকারের একুশ শতকীয় পরিকল্পনা থাকতে হবে। সামাজিক আন্দোলন সেটাই দাবি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী এবং উপনিবেশের জাঁতাকল থেকে মুক্তির পর এই শিক্ষাটাই সামনে এসেছিল। মানুষের জীবন বাঁচাতে বাস্তব অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা সম্ভব। আর্জেন্টিনার দৃষ্টান্ত আমরা এখানে আনতে পারি। এই মহামারিতে অতিধনীরা যে পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে, ‘সংহতি করের’ আওতায় তারা তা থেকে বড় একটা অংশ জনগণকে যাতে ফিরিয়ে দেয়, তার উদ্যোগ সরকারগুলোকে নিতে হবে। এটা সূচনা। সম্পদের অসমতা একটা যৌক্তিক স্তরে নামিয়ে আনার জন্য পুঁজি ও সম্পদের ওপর আনুপাতিক হারে কর আরোপ করতে হবে। (সমাপ্ত...)
লেখক অক্সফামের স্ট্র্যাটেজি ও কমিউনিকেশন প্রধান নির্বাহী
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct