এম মেহেদী সানি, গোবরডাঙ্গা: সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত এবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায়। হাবড়ার বাণীপুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা সেবাশ্রমের বৃদ্ধাশ্রমে মারা যান আসমা মেহরা নামে এক বৃদ্ধা। গোবরডাঙ্গার নিমতলা জামে মসজিদের মাধ্যমে ইসলামি রীতি মেনে তার শেষ কৃত্য সম্পন্নের ব্যবস্থা করলেন স্বামী সত্যরূপানন্দজী মহারাজ। বাণীপুর শ্রী রামকৃষ্ণ সারদা সেবাশ্রমে কর্মসংস্থান ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রমে শনিবার রাতে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে এক মুসলিম বৃদ্ধা মারা যান। সূত্রে খবর, মাস চারেক আগে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে ওই বৃদ্ধাশ্রমে চারজনকে পাঠানো হয়। এদের মধ্য থেকে আসমা মেহের নামে এক মুসলিম বৃদ্ধা শনিবার ভোর রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাণীপুর শ্রী রামকৃষ্ণ সারদা সেবাশ্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বামী সত্যরূপানন্দজী মহারাজ জানান ‘মৃত বৃদ্ধা যেহেতু ইসলাম ধর্মের লোক আর আমাদের আশ্রমে থাকতেন তাই শেষকৃত্য তার ধর্মীয় মতেই করা উচিত, সেজন্য গোবরডাঙ্গার নিমতলা জামে মসজিদ কমিটির কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম। মসজিদ কমিটির সম্মতিতে মৌলভী সাহেব এবং কমিটির সদস্যদের যথেষ্ট আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী রবিবার দুপুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।’ স্বামী সত্যরূপানন্দজী মহারাজ আরও বলেন, ‘বৃদ্ধার শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে কোরআন পাঠ করা হয়েছে, আমি অত্যন্ত মুগ্ধ নিমতলা জামে মসজিদ কমিটির সুন্দর আন্তরিকতা এবং সহযোগিতায়।’ প্রয়াত বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে মহারাজ বলেন, ‘পরম করুণাময়ের কাছে আমি প্রার্থনা করি তিনি ভালো থাকুন, যিনি চলে গেছেন তাঁর কেউ নেই, কেউ থাক বা না থাক তো খোদা আছে। সম্পূর্ণ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন স্বামী সত্যরূপানন্দজী মহারাজ।
নিমতলা জামে মসজিদ কমিটির প্রধান হাবিবুর রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমার আশা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব ফিরোজ সরদারের উদ্যোগে সঠিকভাবে মৃত ওই বৃদ্ধাকে কবরস্থ করা হয়। নিমতলা জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল হোসেন বলেন, ‘আশ্রমে থাকা এমন একজন অনাথ মা’কে মহারাজের উদ্যোগে ইসলামী রীতি অনুযায়ী সঠিকভাবে সম্মানের সাথে কবরস্থ করতে পেরে ভালো লাগছে। মহারাজ কে ধন্যবাদ জানাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবার জন্য।’ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যখন ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন এমন ব্যতিক্রমী উদাহরণ সমাজকে নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন সমাজকর্মীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct