পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জীববৈচিত্রের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন, সুন্দরবন যেমন পরিবেশগত দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে, আমাদেরও তেমন দায়িত্ব সুন্দরবনকে বাঁচানো। সুন্দরবন মানে নিছক গাছপালা নয়; বরং উদ্ভিদ, প্রাণী, কীট-পতঙ্গ ও জীব-অণুজীবের একটি জটিল ও স্পর্শকাতর পরিবেশ ব্যবস্থা, স্থল ও জলজ পরিবেশের মিশ্রণ। সুন্দরবনের এই স্পর্শকাতরতার ব্যাপারে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতেই হবে। ‘যুব ম্যানগ্রোভ সপ্তাহ’ পালনের মধ্যে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার। আজ শেষ কিস্তি।
সম্প্রতি ১৩ জানুয়ারিতে
প্রকাশিত Forest Survey of India (FSI) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ম্যানগ্রোভ হারিয়ে ফাঁকা হচ্ছে সুন্দরবন,এই আশঙ্কাই উঠে এসেছে। সুন্দরবনে ২০২১ সালে ২০১৯ এর তুলনায় প্রায় ২ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে ম্যানগ্রোভ এর ঘনত্ব কমেছে। ২০১৭ সালে যেখানে দ্বীপ অঞ্চলে ৯৯৯বর্গ কিঃমিঃ এলকা জুড়ে ঘন ম্যানগ্রোভ ছিল সেখানে ২০১৯ সালে কমে দাঁড়ায় ৯৯৬ বর্গ কিঃমিঃ তে এবং ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৯৯৪ বর্গ কিঃমিঃ তে । পরিবেশবিদদের মতে লবণতার আধিক্য এবং ঘুর্ণিঝড়ের প্রাদুর্ভাব এই অরণ্য হ্রাসের জন্য দায়ী। তবে রিপোর্টে আশার খবর হিসাবে জানা গেছে ২০১৯ এর তুলনায় সমগ্র সুন্দরবনের এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ বর্গ কিঃমিঃ। ২০১৯ সালে যেখানে এই এলাকা ছিল ২,১১২ বর্গ কিঃমিঃ সেখানে ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,১১৪ বর্গ কিঃমিঃতে। প্রসঙ্গত, এই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ এর তুলনায় দেশে সামগ্রিকভাবে অরণ্য এলাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২,২৬১ বর্গ কিঃমিঃ। এর মধ্যে বনভূমি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫৪০ কিঃমিঃ এবং বৃক্ষ আচ্ছাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২১ কিঃমিঃ । রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৮০.৯ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা জুড়ে বনভূমি ও বৃক্ষ আচ্ছাদন রয়েছে যা দেশের ২৪.৬২% ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে অবস্থিত । এলাকা অনুযায়ী মধ্য প্রদেশে দেশে বৃহত্তম বনভূমি রয়েছে, পরবর্তী স্থানে রয়েছে যথাক্রমে অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা ও মহারাষ্ট্র । আমরা আমাদের বিজ্ঞান ভাবনার দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি দেখি তবে অবশ্যই জানব, ম্যানগ্রোভ বন লবণাক্ততার প্রাদুর্ভাব কমিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা এবং মানুষের স্হায়ী জীবনযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
পাশাপাশি নদী অধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন, মৎস্যচাষ, কৃষি, বন ধ্বংস, লবণ উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ম্যানগ্রোভ গাছ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। যদি ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ করা না যায়, ভবিষ্যতে সমগ্র পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃত সুন্দরবনের স্বীকৃতিও অনেকটা অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। ঠিক এই কারণেই নদীর পাড়ের মানুষ থেকে গবেষণাগারের গবেষক, পরিবেশবিদ্, সোশ্যাল ওয়ার্কার, সাংবাদিকবন্ধু সর্বোপরি যুব সমাজের প্রয়োজনীয়তা আজ সুন্দরবন রক্ষার্থে একান্তই কাম্য।(সমাপ্ত...)
লেখক শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct