পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জীববৈচিত্রের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন, সুন্দরবন যেমন পরিবেশগত দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে, আমাদেরও তেমন দায়িত্ব সুন্দরবনকে বাঁচানো। সুন্দরবন মানে নিছক গাছপালা নয়; বরং উদ্ভিদ, প্রাণী, কীট-পতঙ্গ ও জীব-অণুজীবের একটি জটিল ও স্পর্শকাতর পরিবেশ ব্যবস্থা, স্থল ও জলজ পরিবেশের মিশ্রণ। সুন্দরবনের এই স্পর্শকাতরতার ব্যাপারে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতেই হবে। ‘যুব ম্যানগ্রোভ সপ্তাহ’ পালনের মধ্যে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার। আজ প্রথম কিস্তি।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম জীব
বৈচিত্রের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন, সুন্দরবন যেমন পরিবেশগত দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে, আমাদেরও তেমন দায়িত্ব সুন্দরবনকে বাঁচানো। সুন্দরবন মানে নিছক গাছপালা নয়; বরং উদ্ভিদ, প্রাণী, কীট-পতঙ্গ ও জীব-অণুজীবের একটি জটিল ও স্পর্শকাতর পরিবেশ ব্যবস্থা, স্থল ও জলজ পরিবেশের মিশ্রণ। সুন্দরবনের এই স্পর্শকাতরতার ব্যাপারে আমাদের আরও সংবেদনশীল হতেই হবে। ঠিক সেই উদ্দেশ্য নিয়েই সম্প্রতি সুন্দরবনে “যুব ম্যানগ্রোভ সপ্তাহ পালনের” সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে স্বামীজির দর্শন এবং জীবন ও কর্মপদ্ধতি যা তিনি অনুসরণ করতেন তা ভারতীয় যুবদের জন্য বিশেষ অনুকরণীয়।
উল্লেখ্য সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকে আকার আয়তনে কুমীরমারি দ্বীপটি সবচেযে ছোট। পূর্বদিকে রায়মঙ্গল, দক্ষিণ দিকে কোরানখালী নদী, পশ্চিমে সারসা নদী নদী বয়ে গেছে। দ্বীপ ছোট হলেও জনসংখ্যার চোখে পড়ার মতো। ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনের উজ্জ্বলদৃষ্টান্ত থাকা স্বত্বেও মানুষ শিকড়ের টানে জন্মভিটে ছেড়ে যেতে চায় না,এটাই স্বাভাবিক।
দ্বীপটি প্রাকৃতিক ভাবে রাখার জন্য কোরানখালী নদীর চরে পাঁচশো একর নদীর চর সংলগ্ন এলাকা বরাবর ম্যানগ্রোভ প্ল্যানটেশনের কাজ শুরু করা হয়েছে।নদীচরের পাশে স্হানীয়রা এগিয়ে এসেছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। গ্রামের মহিলা থেকে স্কুল পড়ুয়াদের যোগদান চোখে পড়ার মতো।নিজেই নিজেরা ম্যানগ্রোভ প্ল্যানটেশন ডায়লগ তৈরী করছে, তো কেউ বক্তব্য রাখছে।গ্রামের নারীরা ম্যানগ্রোভের চারা রোপণের মাধ্যমে সুন্দরবন রক্ষায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।গ্রামের প্রবীনরা আশাবাদী নতুন ভাবে সেজে উঠবে কোরানখালী নদীর নদীর পাশে এই চর।মাছ,কাঁকড়ার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠবে।সকালসন্ধ্যায় পাখীদের কিচিরমিচিরে গ্রামমুখরিত হয়ে উঠবে।তবে প্রবীনদের আশঙ্কা, মরিচঝাপির রয়েল বেঙ্গল টাইগার এসে আবার এই জঙ্গলে ঢুকবে অবশ্য এটা নিয়ে গ্রামবাসীরা বিশেষ চিন্তিত নয়।এর আগেও বাঘের আগমন ঘটেছে।গ্রামের মানুষরা বনবিভাগকে সাহায্য করেছে বাঘ ধরার কাজে।
সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন ‘সিওপি২৬’ এর তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহতম ম্যানগ্রোভ বনভূমি ‘সুন্দরবন ‘কার্বন প্রশমনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এবং সুন্দরবনকে ‘কার্বন সিংক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্দরবন আশেপাশের লোকালয়গুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলেছে এবং স্থানীয় জনপদকেও প্রতিনিয়ত রক্ষা করছে। পরিবেশে কার্বনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং টিকে থাকার জন্য সুন্দরবন রক্ষা করা সকলের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সিওপি২৬ কে সামনে রেখে এবং সুন্দরবনের জলবায়ুগত কার্যক্রমকে গুরুত্বদিয়ে ১০,৫০০ ম্যানগ্রোভ রোপনের মাধ্যমে ১২-১৮ই জানুয়ারি ২০২২ সপ্তাহব্যাপি যুব ম্যানগ্রোভ সপ্তাহ পালন করা হলো অতিসম্প্রতি। (ক্রমশ...)
লেখক শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct