আচারের শিশি
শ্রীমতী নীতি রানী সোম
______________________
মায়ের ডায়েরী থেকে: “এই লেখা আমার মায়ের। মা যখনই সময় পেতেন লিখতেন। বলাবাহুল্য আমার এই লেখালেখি মামাবাড়ি থেকে পাওয়া। আমাদের ইচ্ছা মায়ের গল্পটা প্রকাশ করার।”: শীলা সোম
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, মেয়েরা যে যার কাজে বাইরে।
তাদের বাবা অবসর নিয়েছেন ঠিক ই, কিন্তু মেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁর রোজ বেড়োনো চাই। অর্থাৎ বাড়িতে আমি একা। সবেমাত্র ভাত ঘুম এসেছে, বাইরে হৈ হট্টগোল শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো। বারান্দায় বেড়িয়ে দেখি একদল ছেলেমেয়ে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো, ‘ঠাকুমা ,তুমি কী ছাদে কিছু দিয়েছ? হনুমান এসেছে।
আমার মনে পড়ে গেলো, হ্যাঁ আমি তো একটা আচারের শিশি রোদে দিয়েছি। তড়িঘড়ি ছাদে গিয়ে দেখলাম শিশি টা নেই। আমাদের বাড়ির কিছু দূরে কিছু লোকের জটলা। মনটা খারাপ হয়ে গেলো কাল ই বানিয়ে ছিলাম আচারটা। আমার ছেলে আচার খেতে খুব ভালোবাসে। কাজের সুবাদে সে বাইরে থাকে। বিয়ে হয়েছে, একটা পাঁচ বছরের নাতি আছে। ছুটি নিয়ে আসবে বলেছে তাই আচার বানিয়ে ছিলাম।
নীচে নেমে এলাম। আর কী করা যাবে! এমন সময়ে বাইরে চীৎকার, ঠাকুমা ও ঠাকুমা। চীৎকার শুনে বাইরে এসে দেখি, ছোট ছেলেমেয়েদের ভীড়। ওরাই আবার ফিরে এসেছে, একজনের হাতে আমার সেই আচারের শিশিটা। বলল দ্যাখো তো এটা তোমার কীনা? আনন্দে বলে উঠি, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ এই শিশি টা ই তো আমি রোদে দিয়ে ছিলাম। ওরা বলল এই নাও ধরো, শিশিটা হনুমান ওদের বাড়ির উঠানে রেখে দিয়ে চলে গেছে। শিশিটা ভাঙেনি দেখে খুব আনন্দ হোলো। আচার মেয়েরাও ভালোবাসে। সবাই কে দিতে পারবো মনে করে হাত বাড়িয়ে শিশিটা নিতে গেলাম। ভাবলাম ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে, আচার খেতে তো ওরা ও ভালোবাসে। বললাম এই শিশিটা হনুমান ভেঙে ও তো দিতে পারতো। ভাঙেনি যখন তখন তোমরা সবাই মিলে এই আচার টা খাও। একসাথে চীৎকার করে উঠলো কচি কাঁচার দল, থ্রী চিয়ার্স ফর ঠাকুমা, হিপ হিপ হুররে। সবাই মিলে আনন্দ করে আচার খেতে লাগলো, বললো খুব ভালো হয়েছে ঠাকুমা।
বিকেলে সবাই ফিরে এলে ঘটনাটা বললাম। মেয়েরা বলে উঠলো পুরো শিশিটাই দিয়ে দিলে? আমরা তো খেয়ে ই দেখলাম না। বললাম হনুমান ভেঙে দিলে তো খেতেই পারতিস না। ওরা চেঁচামেচি করেছে বলেই শিশিটা রেখে পালিয়েছে। কর্ত্তা শুনে বললেন, ভালো করেছো, বাচ্চারা আনন্দ করে খেয়েছে এর থেকে বেশি আর কী হতে পারে?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct