মুদাসসির নিয়াজ: ৬ আগস্ট ২০১৯ জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা তুলে দিয়ে ভূস্বর্গ কাশ্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। অবশ্য এর নেপথ্যে অনেক রকম যড়যন্ত্রের তত্ব ও তথ্য উঠে এসেছে। এবার সেই জম্মু-কাশ্মীরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র গুলমার্গ ও সোনমার্গের মতো ঈর্ষণীয় ও দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ জমি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিল কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন এখন বকলমে কেন্দ্রের হাতেই রয়েছে। তাই সম্প্রতি প্রশাসনিক এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, গুলমার্গ ও সোনমার্গ মিলিয়ে মোট ৭০ হেক্টর জমিকে’স্ট্যাটেজিক জোন’ করে দেওয়া হল। তার মানে এবার থেকে ওইসব এলাকার দখল পুরোপুরি সেনাবাহিনীর হাতে চলে যাবে। এমনকী বস্তুতন্ত্রের পক্ষে স্পর্শকাতর বা সংবেদনশীল অঞ্চলেও এবার পরিকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে সেনারা । স্বভাবতই কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর প্রতিবাদে সুর চড়িয়েছে। তারা একযোগে পর্যটন এলাকায় স্ট্যাটেজিক জোন গড়ার নামে সেনার হাতে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান জমি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, গুলমার্গ, সোনমার্গ, পহেলগাঁও প্রভৃতি হল জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকার সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এমনিতেই সেনাবাহিনী সমগ্র উপত্যকার বহু জায়গায় প্রচুর জমি নিয়ে রেখেছে। তাই নতুন করে এই বহুমূল্যবান সম্পত্তি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে না দিতে কেন্দ্রকে আর্জি জানিয়েছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলো । অর্থাৎ পর্যটনের জন্য বরাদ্দ এলাকা পর্যটকদের জন্যই ছেড়ে রাখা উচিত। তা না হলে সমগ্র উপত্যকার জমির বিন্যাস বদলে যাবে। যার প্রভাবে জনবিন্যাসেও আমূল রদবদল ঘটে যাবে বলে আশঙ্কা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর।উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন খাত থেকে সেখানকার অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। প্রচুর ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হয়, তারা নানা খাতে কাজ করে রুটি-রুজির সংস্থান করে। তাছাড়া পর্বতবহুল জম্মু-কাশ্মীরের রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ আমদানি হয় এই পর্যটন খাত থেকেই। তাই পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। এর মধ্যে অন্য কিছু ঢুকিয়ে পুরো বিষয়টাকে জটিল করে তুলে হীন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ছক কষছে মোদি-শাহের সরকার। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে রাজ্যটির বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা হরণের পর থেকেই রিয়েল এস্টেটকে উৎসাহিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। আসলে তাদের অভিসন্ধি হল কাশ্মীরের মুসলমান প্রধান জনবিন্যাসকে হেরফের করে দেওয়া। কেন্দ্রের এহেন সংকীর্ণ ও বিদ্বেষী মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএমসহ সব দল। তাদের অভিযোগ, কাশ্মীরকে সেনাবাহিনীর দুর্গে পরিণত করতে চাইছে মোদি-শাহ জুটি। জানা গিয়েছে, গুলমার্গে ৫২ হেক্টর এবং সোনমার্গে ১৮ হেক্টর জমি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। অথচ কাশ্মীরবাসীর ক্ষোভ প্রশমনে মিথ্যা মর্যাদা নাকি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তাই সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলো অমিত শাহকে এই দ্বিচারিতা বন্ধের আহান জানিয়েছে।
(লেখক সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct