কোভিড অতিমারীর পরবর্তী সময়ে সমগ্র বিশ্ব যখন পূর্বের সেই চেনা ছন্দে কিছুটা ফিরে এসেও ফের ছন্দপতনের দোরগোড়ায়, যখন চিরাচরিত শিক্ষাব্যবস্থার গতিশীলতার অভিমুখ অনেকটা পাল্টেই গিয়েছে বলা যায়, সর্বপরি যখন প্রশাসনিক ও একাডেমিক দুটো ক্ষেত্রেই কাজের পদ্ধতি অনলাইনের মাধ্যমেই হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) একটা বড় অবদান বর্তমান প্রেক্ষাপটে রয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
কোভিড অতিমারীর পরবর্তী
এই বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্ব যখন পূর্বের সেই চেনা ছন্দে কিছুটা ফিরে এসেও ফের ছন্দপতনের দোরগোড়ায়, যখন চিরাচরিত শিক্ষাব্যবস্থার গতিশীলতার অভিমুখ অনেকটা পাল্টেই গিয়েছে বলা যায়, সর্বপরি যখন প্রশাসনিক ও একাডেমিক দুটো ক্ষেত্রেই কাজের পদ্ধতি অনলাইনের মাধ্যমেই হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) একটা বড় অবদান বর্তমান প্রেক্ষাপটে রয়েছে বলতেই হয়। সমগ্র কোভিড অতিমারী কালে শিক্ষা প্রক্রিয়ার উৎকর্ষ সাধনে, শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে, বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর পাঠক্রমের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে, শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রসঙ্গত সম্প্রতিককালে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠদানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য SCERT এর সাথে যৌথ সহযোগিতায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ওপর স্বল্প সময়ের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। তথাপি ICT প্রকল্পের উপর পিপিপি মডেলে বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারে সড় গড় করবার জন্য কিছু শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও সমগ্র বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ভারতের একাদশ শিক্ষা পরিকল্পনায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিধি কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন - ১) প্রযুক্তিভিত্তিক সাধারণ শিক্ষা প্রশাসন ২) শিখনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ৩) প্রযুক্তি ভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া ৪) সঠিক শিখন কৌশল ও শিখন ব্যবস্থার কার্যকারিতা মূল্যায়ন ৫) তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়টিকে পড়াশোনার বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যক্রমে স্থান দেওয়া ইত্যাদি। বহু পূর্বে বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত কাজই হস্তকৃত ছিল। কিন্তু বর্তমান সময় কালে সমস্ত ব্যবস্থাটি তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয় প্রশাসন সংক্রান্ত সামগ্রিক কাজকর্ম পরিচালনায় ICT এর ভূমিকা অগ্রগণ্য বলা চলে। এর জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার সময়ে সময়ে তৈরি করা হয়েছে ও হচ্ছে, কোভিড অতিমারি সময়কালে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন লার্নিং অ্যাপ এসেছে, টিভির বিজ্ঞাপনে মাঝে সাঝেই যা চোখে পড়ে। অন্যদিকে বিদ্যালয় স্তরের পঠন পাঠন এবং পরীক্ষা, মূল্যায়ন সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনাতেও ICT এর সমান গুরুত্ব রয়েছে। কোভিড কালে প্রায় সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থাটি অনলাইন লার্নিং এর ওপর নির্ভরশীল ছিল। পরবর্তী সময়ে মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর ভর করেই নির্দিষ্ট সময়েই পড়ুয়াদের কাছে এবার প্রগতি পত্র তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ICT এর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সমস্ত পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় দরকারি যাবতীয় তথ্যের নিবন্ধীকরণ বা students database management ব্যবস্থাটি সাধিত করা অনেকটাই সহজ হয়েছে। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অডিও ভিসুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে ই লার্নিং পদ্ধতিতে শিক্ষাদান তো রয়েছেই। ICT এর অন্যতম প্রয়োগ হিসেবে বর্তমানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার থাকবার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ডিজিটাল লাইব্রেরি করবার পরিকল্পনাও করা হয়তো আগামীতে হতেই পারে। পাশাপাশি বিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ই-মেইলের মাধ্যমেই অতিদ্রুত এখন এক স্তর থেকে অন্য স্তরে সরকারি নির্দেশিকা এসে পৌঁছায়। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ থেকে শিক্ষক বদলি যাবতীয় নির্দেশিকাও ই - মেলের মাধ্যমেই খুব সুন্দর ভাবে সাধিত হচ্ছে। ICT এর অন্যতম অংশ হিসেবে integrated financial management ও integrated salary management system ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন, ই - পেনশন সহ আরো যাবতীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ বর্তমানে করা হয়ে থাকে। কভিড অতি মারি সময়কালে বিভিন্ন ধরনের audio video,web based conferencing এর মাধ্যমেও বিদ্যালয় শিক্ষা প্রশাসনকে সচল করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সজাগ ও সচেতন করার জন্য বিদ্যালয়ের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন স্তরেও একটি ইউনিট বা অধ্যায় হিসেবে এটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের অধ্যাপনা করবার ক্ষেত্রে একেবারে প্রাথমিক পর্বে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ICT সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান থাকা নূন্যতম আবশ্যিক যোগ্যতার মধ্যেই রাখা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, সময় ও সভ্যতা যেভাবে দিনে দিনে এগোচ্ছে ও বদলাচ্ছে, তাতে আগামীতে বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মীকে যে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি কে সাদরে গ্রহণ করতেই হবে এখন থেকেই যেন তা জানান দিচ্ছে।
(লেখক শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক )
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct