আপনজন ডেস্ক: এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কাজাখস্তানে সাধারণ মানুষের আন্দোলনের জেরে পতন হল সেদেশের সরকারের। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় বুধবার পদত্যাগ করলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেরিক আখমেতভ। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। উপপ্রধানমন্ত্রী আলী খান ইসমাইলভ অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার এলপি গ্যাসের উপর থেকে সেই প্রাইস ক্যাপ তুলে নিয়েছিলে সরকার। ফলে এলপি গ্যাসের দাম একদিনে ব্যাপক বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই প্রতিবাদ শুরু হয়। বুধবার প্রতিবাদ সহিংস রূপ নেয়। আন্দোলন দমাতে সরকার প্রথমে সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। তবুও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। পরে পদত্যাগ করে সরকার।
মঙ্গলবার কাজাখস্তানের তেলের শহর বলে পরিচিত মেঙ্গিস্টাতে প্রথম প্রতিবাদ শুরু হয়। পরে তা দ্রুত তেলসমৃদ্ধ দেশটির অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এলপিজির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। মঙ্গলবার দিন পেরিয়ে রাতেও তারা রাস্তায় অবস্থান করেন। সে সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভ ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পরদিন বুধবার তা আরও তীব্র হয়ে উঠে। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয় সরকার। তবে সরকার পদত্যাগ করলেও আন্দোলন থামেনি। বুধবার কাজাখাস্তানের সর্ববৃহত শহরে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় প্রায় ১০০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ইন্সট্রাগ্রামের কাযাখ ব্লগার নামে এক আইডিতে লাইভ ভিডিওতে দেখা যায় আলমাটি শহরে মেয়রের ভবনে আগুন জ্বলছে। এর পাশেই শোনা যাচ্ছিলো বন্দুকের গুলির যাচ্ছিল। অনলাইনে পোস্ট করা আরো ভিডিওতে প্রসিকিউটরের কার্যালয়ও পুড়তে দেখা গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্ডন ভেঙ্গে দিতে দেখা গেছে যদিও পরবর্তীতে সেখানে স্টান গানের বিস্ফোরণ পুরো শহরজুড়ে শোনা গেছে।
রয়টার্সের সাংবাদিক দেখেন, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী আলমাটি শহরের মূল কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন বিশাল ট্রাকে।
টিয়ার গ্যাস ও গ্রেনেড দিয়েও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারেনি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
আটামেকেন, কাজাখাস্তানের ব্যবসায়িক লবি গ্রুপ জানান, ব্যাংক, স্টোর এবং রেস্টুরেন্টে হামলার তথ্য জানা যাচ্ছে।
শহর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ১৯০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে ১৩৭ জন পুলিশ। শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাতজুড়ে উত্তরাঞ্চলীয় শ্যাঙ্কেন্ট এবং তারাজ শহরে সরকারি ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯৫ পুলিশ আহত হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২০০ জনকে আটক করেছে।
অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, আকতবে মেয়র অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ওয়াটার ক্যানন এবং স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে।
দেশটিতে গত শনিবার এলপিজির দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। এরপর দিনদেশটির পশ্চিমাঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ মানজিস্তাউয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে এই বিক্ষোভ আলমাতিসহ দেশটির অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct