বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন সুপেয় জলের বেশিরভাগই রয়েছে মাটির একেবারে নীচে। অতীত কাল থেকেই মানুষ এমন সব অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছে যেখানে মাটির উপরের ভাগেই সুপেয় জল পাওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর ৯০% লোক এমন এলাকায় বাস করে যার কমপক্ষে ১০ কিমির মধ্যে সুপেয় জলের ব্যবস্থা বর্তমান। উত্তরোত্তর সংখ্যা বাড়ছে মানুষের। খুব স্বাভাবিক কারণেই জলের চাহিদা মেটাতে তাই মাটির নীচ থেকে জল উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে জলস্তর নেমে যাওয়ার অাশঙ্কা নিয়ে লিখেছেন সেখ সেতাবুদ্দিন। আজ প্রথম কিস্তি।
আজকের বিশ্ব নানান সমস্যায়
জর্জরিত। হাজারো নতুন জটিলতা। আর অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের হাতছানি। কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিশ্ব-মানবতা।
খুব নির্ভর মনে ভেবে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, এসব করুণ পরিণতির নেপথ্যে আমাদের অপরিকল্পিত জীবনাচার আর অন্তহীন লকলকে লোভ। মাত্রাছাড়া চাহিদা এক্ষেত্রে বেশ বড় একটা ফ্যাক্টর। বা বলা ভালো প্রধানতম সূচক। করোনা নিয়ে এমনিই বিশ্ব ছন্দহীন। মানুষের লাগামহীন প্রাপ্তিচ্ছা আর প্রকৃতির উপর নিদারুণ নির্যাতন বিপদ আরও বাড়াবে। নিঃসন্দেহে। যদি না আমরা এখনই সে সব নিয়ে সচেতন হই! একইসাথে অন্যকে সচেতন করার কাজটি না করলেও সমূহ বিপদ অত্যাসন্ন।
না, অহেতুক আতঙ্ক তৈরি করার উদ্দেশ্যে মোটেই এই লেখা নয়। সামান্যতম সচেতনও যদি করা যায় তারই প্রয়াসমাত্র।
ইতিপূর্বে আমরা ‘তেলের জন্য যুদ্ধ’ পর্যন্ত করতে দেখেছি মানব ‘সভ্যতা’কে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সত্য স্পষ্ট যে সেই যুদ্ধগুলো তথাকথিত ‘উন্নত’ জাতিরাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব ফায়দা অর্জনের খেলা। এরপর আমাদের অসচেতনতা জলের জন্য যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়ার উপক্রম ঘটালে অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। সুতরাং জলের পরিমিত ব্যবহার অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দেওয়া থেকে ডাঙায় তুলতে পারে
মানবসভ্যতাকে।
কিন্তু ‘জলের জন্য লড়াই’ হবে কেন?
আসুন তা নিয়ে দু’চার কথা পাড়া যাক।
আমাদের এই পৃথিবীতে প্রায় ৩২৬ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্যালন জল আছে। মানে? -- ৩২৬ এর পর আঠারোটি শূন্য যোগ করলে এই হিসেবের অর্থটা স্পষ্ট হয়। এই সুবিশাল পরিমাণ জল বিদ্যমান ভিন্ন ভিন্ন আকারে। ভিন্ন ভিন্ন আধারে।
যেমন সমুদ্রের বিভিন্ন স্তরে জল জমে বরফ হয়ে আছে। কিম্বা বাতাসের জলীয় বাষ্প আকারে আছে।
এতো বিপুল পরিমাণ জল থাকা স্বত্বেও মূল সমস্যা হলো এই জলের ৯৭ শতাংশই লবণাক্ত। অপানযোগ্য। ২ শতাংশ সুমিষ্ট জল বরফ আকারে জমে আছে। আর সমগ্র মানবজাতি তাদের দৈনন্দিন সার্বিক কাজকর্ম সমাধা করে মাত্র ১% তরল মিষ্টি পানযোগ্য জল ব্যবহার করে।
কিন্তু আশঙ্কার জায়গাটা হলো অন্যত্র। ১০০ ভাগের এক ভাগ সুপেয় জলও ক্রমশ শেষ হয়ে যাচ্ছে! বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন সুপেয় জলের বেশিরভাগই রয়েছে মাটির একেবারে নিচে। এই জল উত্তোলন করা খুব সহজ কাজ নয়। ইতিহাস থেকেই জানতে পারি অতীত কাল থেকেই মানুষ এমন সব অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছে যেখানে মাটির উপরের ভাগেই সুপেয় জল পাওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর ৯০% লোক এমন সব এলাকায় বাস করে যার কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সুপেয় জলের ব্যবস্থা বর্তমান।
উত্তরোত্তর সংখ্যা বাড়ছে মানুষের। তালমিলিয়ে বাড়ছে তার বহুবিধ উন্নয়নের আয়োজন। আর গুনগত মানসম্পন্ন জীবনের প্রয়োজন বাড়িয়েছে বহুগুণে বিশুদ্ধ জলের চাহিদাকে। একটি তথ্যে জানা যায় গত ১০০ বছরে পৃথিবীতে জলের ব্যবহার বেড়েছে ৭ গুণ। খুব স্বাভাবিক কারণেই জলের চাহিদা মেটাতে তাই মাটির নিচ থেকে জল উত্তোলন করা হচ্ছে। অ্যাকুইফারস বা ভূগর্ভস্থ জলস্তর বলা হয় মাটির নিচে থাকা জলকে। এই ভূগর্ভস্থ জল ‘ইচ্ছেমতো তোলার’ কারণে বাড়ছে বিপদ। আর শঙ্কা।
এর ফলে কোন অঞ্চলের মাটি বসে যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে জল উত্তোলনের কারণে মেক্সিকো সিটির কোন কোন জায়গা প্রতিবছর ৯ ইঞ্চি করে বসে যাচ্ছে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে শেষ ১০ বছরের ২৯ ট্রিলিয়ন গ্যালন ভূগর্ভস্থ জলের মজুদ কমে গেছে। অধিক ব্যবহারের কারণে আর কিছুদিনের মধ্যেই ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে - আশঙ্কার প্রহর গোনা সে কারণেই। কমে গেছে বৃষ্টিপাত আর তুষারপাতের পরিমাণও। ফলে বিশ্বের সকল অঞ্চলের নদী ও হ্রদ শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। (ক্রমশ...)
(লেখক প্রাবন্ধিক ও স্কুল শিক্ষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct