পশ্চিম তীরে রয়েছে জেরুসালেম শহর। যাতে তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান রয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকাই একমাত্র দেশ যে এ ব্যাপারে ইসরাইলের সাথে আছে। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম করছে।তবে ফিলিস্তিন ইসরাইল বিবাদ না মিটলে ফিলিস্তিনের জনগণের অবস্থা আরও সঙ্গীন হতে পারে। তা নিয়ে বিশ্বের মোড়ল দেশগুলির কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের কাছে ফিলিস্তিনে মানবতা লংঘিত হলেও তার কোনও মূল্য নেই। আমেরিকা যেহেতু কোনওভাবেই ইসরাইলকে চটাতে চায় না, তাই অন্য কোনও দেশও চায় না তারা ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে আমেরিকার বিরাগভাজন হোক। এই মনোভাবের পরিবর্তন না হলে ফিলিস্তিনে মানবতার বিসর্জন হবে। তা নিয়ে লিখেছেন জান্নাত খাতুন।
ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত।
ফিলিস্তিনের পূর্বে রয়েছে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, জর্দান ও সৌদি আরব। পশ্চিমে আছে আফ্রিকার আরব দেশ মিশর। এই পুরো অঞ্চল তেল সমৃদ্ধ। ফিলিস্তিনের উত্তর পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর। যার তীরে সাইপ্রাস, তুরস্ক, গ্রিসসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো অবস্থিত। ইউরোপ থেকে সড়কপথে আফ্রিকা যেতে হলে ফিলিস্তিনই একমাত্র রাস্তা। ফিলিস্তিন এশিয়া ও আফ্রিকার দরজা। ফিলিস্তিন এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মাঝে অবস্থিত। এটাই ফিলিস্তিনের একমাত্র ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা নয়। এর আরো সুবিধা আছে ফিলিস্তিনের দক্ষিণ অংশ ‘গালফ অব আকাবা’ বা আকাবা উপসাগরের সাথে সংযুক্ত। আকাবা উপসাগরের এক পাশে সৌদি আরব।
অন্য পাশে মিশরের সিনাই উপত্যকা যা সুয়েজ খাল পর্যন্ত বিস্তৃত। আকাবা উপসাগরের সামনে রয়েছে লোহিত সাগর। মিশর ও ফিলিস্তিন ব্যতীত অন্য কোনও একসঙ্গে দেশ ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগর তীরবর্তী নয়। ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্যক জাহাজগুলো প্রথমে লোহিত সাগরে আসে তারপর সুয়েজ খাল পার হয়ে ভূমধ্যসাগরে যায়। ইউরোপ ও এশিয়ার বাণিজ্যের মেরুদণ্ড সুয়েজ খাল ফিলিস্তিন থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। সে হিসেবে সুয়েজ খালে নজর রাখা কিংবা সুয়েজ খাল বন্ধ করে দিকে দেয়ার জন্য সাইপ্রাসের চেয়েও উত্তম জায়গা হচ্ছে ফিলিস্তিন। এছাড়া সুয়েজ খালের পরিবর্তে সুয়েজ খালকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য যদি আরেকটি খাল খনন করতে হয় তাহলে তা শুধুমাত্র ফিলিস্তিনেই সম্ভব। কারণ মিশরের পর ফিলিস্তিনই একমাত্র দেশ যা একসাথে লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী।
ফিলিস্তিনের দক্ষিণে রয়েছে নজব এলাকা। যা ফিলিস্তিনের আয়তনের প্রায় অর্ধেক এখানে জনসংখ্যা অত্যন্ত কম। ফিলিস্তিনের মধ্যস্থানে অবস্থিত পশ্চিম তীর। একে পশ্চিম তীর বলা হয় কারণ এটা জর্দান নদীর পশ্চিম থেকে অবস্থিত। পশ্চিম তীরের পুরো এলাকা জর্দান পর্বত মালার উচুঁ নিচু পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত। জর্দান নদী ফিলিস্তিনের পূর্ব দিকে অবস্থিত। যা ফিলিস্তিন ও জর্দানের সীমান্তও। জর্দান নদী গোলান পর্বতমালা থেকে শুরু হয়ে সি অফ গ্যালিলিতে যায় তারপর সেখান থেকে মৃত সাগরে প্রবাহিত হয়। সি অফ গ্যালিলির পাশে অবস্থিত গ্যালিলি আপার জর্দান ভ্যালি ও জারজিল ভ্যালি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সি অফ গ্যালিলি পানযোগ্য পানির অনেক বড় উৎস। পশ্চিম তীরের সাথে ফিলিস্তিনের অবস্থিত ফিলিস্তিনের উপকূলীয় এলাকা শ্যারেন প্লেন। এই এলাকাও চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী। পশ্চিম তীরে রয়েছে জেরুসালেম শহর। যাতে তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান রয়েছে। বর্তমানে ইসরাইল পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি নির্মাণ করছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। জাতিসঙ্ঘসহ বেশির ভাগ সংস্থা ও দেশ এটাকে বেআইনি মনে করে। অন্যদিকে আমেরিকাই একমাত্র দেশ যে এ ব্যাপারে ইসরাইলের সাথে আছে। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অভিয়োগের চেয়ে তাদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের প্রতি। কারণ তারা সব ধরনের প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকা সত্ত্বেও নিজেদের প্রথম কিবলা রক্ষা করছে না। উল্টে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছে।
দিনের পর দিন দেখা যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা নির্বিচিারে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করছে অবৈধভাবে। আর সেখানকার ফিলিস্তিনিরা এবার সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন। ফিলিস্তিন ইসরাইল বিবাদ না মিটলে ফিলিস্তিনের জনগণের অবস্থা আরও সঙ্গীন হতে পারে। তা নিয়ে বিশ্বের মোড়ল দেশগুলির কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের কাছে ফিলিস্তিনে মানবতা লংঘিত হলেও তার কোনও মূল্য নেই। ইসরাইলের প্রতি সহানূভূতির মূলে আমেরিকা। আমেরিকা যেহেতু কোনওভাবেই ইসরাইলকে চটাতে চায় না, তাই অন্য কোনও দেশও চায় না তারা ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে আমেরিকার বিরাগভাজন হোক। এই মনোভাবের পরিবর্তন না হলে ফিলিস্তিনে মানবতার বিসর্জন হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct