পিকলুর স্বপ্নভঙ্গ
শংকর সাহা
____________
বয়সে ছোটো হলেও আজ যেন পিকলু এইপাড়ার সকলের পরিচিত নাম। কারো কোনো সমস্যা হলেই সবার আগে ডাক উঠত পিকলুর। কারো পেয়ারা খেতে ইচ্ছে হলে পিকলু, কারো ওপাড়ার দোকান থেকে কিছু কিনে এনে দিতে হবে সেও পিকলু। মুখ বুঝে একভাবে করে যেত সে।তাই এক নামে ডাক পড়ত পিকলুর। বাবা –মা হারা ছেলেটির এ জগত সংসারে নিজের বলতে এই হরিচরণ কাকাই শেষ সম্বল। হরিচরণ পিকলুর বাবার বন্ধু ছিলেন। তাই পিকলুর বাবা-মা মারা যাবার পরে হরিচরণ কাকার ওই দোকান ঘরটিই ছিল পিকলুর একমাত্র ঠিকানা। নিজের বলতে সেই দুকাঠা জমির উপরে ভাঙ্গা বাড়ি।
পিকলু হরিচরণের চায়ের দোকানে কাজ করে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনির পরে দিনে দুমুঠো ভাত আর মাসের শেষে হাতে সামান্য পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দেয় । হরিচরণ আজ আর বেঁচে নেই। গতবছর হরিচরণের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে অগ্নিবেশ আজ বাবার সম্পত্তির মালিক। সারাদিন পিকলুর উপরে নানানরকম খরমাশ খাটিয়ে নেয় অগ্নিবেশ। এইটুকু বয়সের ছেলেকে দিয়ে এমনভাবে খাটাতে তাদের বিবেকেও বাঁধেনা।
পিকলুর বাবা-মার কথা সবসময় মনে পড়ে। যে বয়সে ছেলেরা স্কুলে পড়ে ,মাঠে খেলে সে বয়সে আজ পিকলু অনাথ। কষ্টের মধ্যে থাকলেও যেন সবসময় তার হাসিমুখ। কারো কোনো জিনিসের প্রতি তার বিন্দুমাত্র লোভ নেই। অগ্নিবেশ নানাভাবে পিকলুর পূর্বপুরুষের সেই জমিটি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। সেদিন ছিল শুক্রবার। পিকলু প্রতিদিনের মতো চায়ের দোকানে কাজ করছে হঠাতই পাড়ায় বিনোদ এসে পিকলুকে জানায় তাদের জমিতে কে যেন বেড়া দিচ্ছে। পিকলু ছুটে যায় নিজের পৈতৃক ভিটেতে। সেখানে গিয়ে সে দেখে অগ্নিবেশ উকিল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিকলু জানতে চায়, “কাকু, আমাদের জমিটি কেন কেড়ে নিচ্ছেন ?”
পাশ থেকে অগ্নিবেশ হেসে বলে, “ ও তোর বাবা বেঁচে থাকতে অনেক টাকা ধার নিয়েছিল। এখন তা সুদে- আসলে অনেক হয়েছে। তুই কোনোদিনই সেইটাকা দিতে পারবি না জানি।”
পিকলু সকলের পা ধরে অনুরোধ করে। কিনতু কেউ শোনেনা তার কথা। পরেরদিন ভোর হতেই শহরের ট্রেন ধরেই এক অজানা শহরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় পিকলু। দিশাহীন পথে আজ সে বড়ই একা। জানালার পাশ দিয়ে বাইরের জগতটকে একভাবে তাকিয়ে দেখতে থাকে পিকলু। আকাশের পশ্চিমদিগন্তে মেঘগুলো যেন ছুটে ছুটে যাচ্ছে।
পিকলুর দুচোখ ভরে জল গড়িয়ে পড়ে।
ছোটোবেলার মার কথাগুলো আজ খুব মনে পড়ছে পিকলুর।
দিন থাকতেই আজ যেন পিকলুর চারিপাশটা অন্ধকারে ঢেকে যায়....!!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct