আপনজন ডেস্ক: ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য আগে থেকেই চরম মাত্রায় ছিল। করোনা মহামারির কারণে সেটাই আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সরকারের করোনা ত্রাণ তহবিল থেকে মোটা অংকের অর্থ চুরি হয়ে গেছে। মানুষের হাতে যে দু-চার পয়সা ছিল তাও ফুরিয়ে এসেছে।
মুদি মালের দামও আকাশচুম্বী। ফলে কোটি কোটি মানুষের ঘরে খাবার নেই। খোদ সরকারের এক রিপোর্ট মতে, এই মুহূর্তে ক্ষুধায় ধুঁকছে দুই কোটিরও বেশি নিু আয়ের মানুষ। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও বাজে রূপ নিতে পারে। এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি দপ্তর সেন্সাস ব্যুরোর রিপোর্টটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ২০২০ সালে দরিদ্রের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ।
এটা মোট জনগণের প্রায় ১১.৪ শতাংশ। করোনা মহামারির কারণে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্রদের আর্থিক দুর্দশা কাটাতে চলতি বছরের শুরুর দিকেই বিশাল অংকের একটা ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি শুরু করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরকার। এই কর্মসূচির ফলে বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম (স্বামী-স্ত্রীর দেড় লাখ ডলার) আয়ের মার্কিন নাগরিকরা মাথাপিছু এক হাজার ৪০০ ডলারের চেক পান। আর সপ্তাহে ৪০০ ডলার করে ফেডারেল ভাতা পান বেকাররা।
করোনা সহায়তার কিছু কিছু অর্থ বিতরণও করা হয়েছে। তবে কাজ না থাকায় ও খাদ্যপণ্যের বেড়ে যাওয়ায় সে সব অর্থ দ্রুতই ফুরিয়ে গেছে। এতে আবারও আর্থিক অনটনে পড়েছে অসংখ্যা পরিবার। নতুন করে ত্রাণের অর্থ বিতরণের সম্ভাবনা না থাকায় বিপদে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর জরিপ বলছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকেই যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। ফলে রাস্তার মোড়ের ফুডব্যাংকগুলোই ছিল তাদের শেষ ভরসা।
সামনের দিনগুলোতে নিুআয়ের পরিবারগুলো আরও চাপের মুখে পড়তে পারে। চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট পেমেন্টের অর্থের ওপর ভর করে এখনো কোনো রকমে চলছে এই পরিবারগুলো।
রিপোর্টটি প্রস্তুত করতে চলতি ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত জরিপ চালায় ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর হাউজহোল্ড পালস সার্ভে। ওই জরিপেই উঠে এসেছে, দেশটিতে মাঝেমধ্যে বা প্রায়ই যথেষ্ট খাবার না থাকা পরিবারের সংখ্যা চলতি মাসে ৯.৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রে এখন খাদ্যপণ্যের দাম এক বছরের আগের তুলনায় ৬.৪ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর ফলে খাদ্যের খোঁজে লাজ-লজ্জা ভুলে পথে নামতে হয়েছে অনেককেই। এ কারণে ফুড ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অপুষ্ট ও কম খাদ্য পাওয়া শিশুদের সাহায্য করা ক্লিনিকগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
দেশটিতে বছরে দেড় লাখ ডলারের কম উপার্জনকারী দুই অভিভাবক বিশিষ্ট পরিবার চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট পেমেন্টের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এর আওতায় ছয় বছরের কম বয়সি প্রতিটি শিশুর জন্য মাসিক ৩০০ ডলার এবং ১৮ বছরের কম বয়সি প্রতিটি শিশুর জন্য মাসিক ২৫০ ডলার পান বাবা-মা। বার্ষিক দেড় লাখ ডলারের চেয়ে বেশি আয় করা পরিবারগুলো কিছুটা কম অর্থসহায়তা পান।
ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর জরিপ অনুসারে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেশির ভাগ অভিভাবকই এ ধরনের সহায়তার অর্থ খাবারের পেছনে খরচ করেছেন। জরিপে আরও দেখা গেছে, এ ধরনের অর্থ সহায়তা স্থায়ী হলে শৈশবকালীন দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব।
পরিবারগুলোর কাছে বর্ধিত চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটের নির্ধারিত সব শেষ সহায়তা গত ১৫ ডিসেম্বর পাঠানো হয়েছে। এই কর্মসূচি ২০২২ সালজুড়ে চালিয়ে যেতে চান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে তার প্রস্তাবটি সিনেটে বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct