উচ্চমাধ্যমিক ও হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা ২০২২ ( ভূগোল )
অধ্যায়-বায়ুর কার্য
__________________________________
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রশ্নমান - ৫
১. মরু অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ গুলি আলোচনা করো।
উত্তর :- মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে উচ্চভূমি থেকে যে জলধারা সৃষ্টি হয় সেগুলি নুড়ি,কাঁকর, বালি কাদা একত্রিত করে একটি করদম ধারায় পরিণত হয়ে ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয় এবং বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করে। নিম্নে আলোচনা করা হলো -
১. বদভূমি :- অর্ধশুস্ক এলাকায় বারংবার বায়ু প্রবাহের দ্বারা ভূমিভাগের শিলারাশির বাঁধন শিথিল হয় এবং হটাৎ বৃষ্টিপাত সৃষ্ট জলধারা কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিভাগ কে বলে বদভূমি।
বৈশিষ্ট :- ক . গভীর সংকীর্ণ খাত, নালিকা দেখা যায়।
খ . খুব অনুর্বর প্রকৃতির।
উদাহরণ - ভারতের চম্বল উপত্যকা।
২. বাজাদা :- মরু অঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে জলধারা বাহিত একাধিক পলল ব্যাজনি একত্রিত হয়ে যে প্রায় সমতল ভূমি গড়ে তোলে তাকে বলে বাজাদা।
বৈশিষ্ট :- ক. নুড়ি, বাকি, কাদা সঞ্চয়ে গড়ে ওঠে।
খ. ঢাল খুব কম হয়(3-4°)।
গ. পেডিমেন্ট ও প্লায়ার মধ্যবর্তী অংশ।
ঘ. প্রধানত সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত।
ঙ. বাজাদা স্পেনিও শব্দ, যার অর্থ inclination বা অবণমিত স্থান।
উদাহরণ - আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি।
৩. প্লায়া :- মরু অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একাধিক জলধারা কোনো পর্বত বেষ্টিত অবনমণ ভূমিতে সঞ্চিত হলে সেখানে যে লবনাক্ত জলের সৃষ্টি হয় তাকে বলে প্লায়া।
বৈশিষ্ট :- ক. বায়ুর অপসারণে এই হ্রদের সৃষ্টি হয়।
খ. খয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে সৃষ্টি হয়।
গ.এগুলি অস্থায়ী প্রকৃতির।
ঘ. প্লায়া হলো মরু অঞ্চলের ক্ষয় কার্যের নিম্নসীমা।
ঙ. ক্ষেত্রমান কয়েক বর্গ মিটার থেকে কয়েক বর্গ কিমি হয়।
চ. কেন্দ্রমুখী জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
ছ. প্লায়া স্পেনিও শব্দ, যার অর্থ লবনাক্ত হ্রদ।
উদাহরণ - মেক্সিকো তে বলসোন, আফ্রিকা তে শটস, অস্ট্রেলিয়া তে প্যান, আরবে সবখা, যুক্তরাষ্ট্র লা- প্লায়া, দক্ষিণ আমেরিকা তে সালিনা নামে পরিচিত।
৪. বলসন :- মরু পার্বত্র ভূমির পাদদেশে নিম্ন ভূমি সুক্ষ বালি ও ধুলো দ্বারা পূর্ণ হয়ে থাকে। বায়ু দ্বারা সৃষ্টি ধুলো ও বালি মরুভূমিতে হটাৎ বৃষ্টির জলের মাধ্যমে বাহিত হয়ে নিম্ন ভূমিতে সঞ্চিত হয়। একে বলে বলসন।
বৈশিষ্ট :- ক. স্পেনিও শব্দ বলসন এর অর্থ শুস্ক নিম্ন ভূমি।
খ. মনে প্লায়া হ্রদের সর্বশেষ অবস্থা।
গ. গভীরতা কম হয়।
উদাহরণ :- যুক্তরাষ্ট্রর আরিজনা।
৫. ওয়াদি :- মরু অঞ্চলে বালিরাশির মধ্যে হটাৎ বন্যার জল প্রবাহিত হলে সেই জলধারা বেডিখন স্থায়ী হয় না। তবে চিহ্ন স্বরূপ খাত টি পরে থাকে, একে বলে ওয়াদি।
বৈশিষ্ট :- ক. তলদেশ প্রশস্ত হয়।
খ. পার্শদেশ খুব খাড়া হয়।
গ. লম্বায় কয়েক মিটার হয়।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমি।
৬. পেডিমেন্ট :- মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশ ও বাজাদার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ঢালু খয়প্রাপ্ত শিলাময় ভু ভাগ্ ক বলে পেডিমেন্ট।
বৈশিষ্ট :- ক. ঢাল বেশি হয়, 1-7°।
খ. ক্ষুদ্র প্রস্তর খন্ড, বালি, পলির দ্বারা গঠিত।
গ. তিন ভাগে বিভক্ত - আবৃত, মিলিত, ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট।
ঘ. ১৮৭৭ সালে গিলবার্ট প্রথম নামকরণ করেন।
ঙ. নিচের অংশে পলিগঠিত বাজাদা অবস্থান করে।
চ. খয়কাজের ভূমিকা বেশি থাকে।
উদাহরণ :- সাহারা মরুভূমি।
৭. মরু গম্বুজ :- মরুভূমি তে বৃষ্টিপাটের ফলে ক্ষয় থেকে খাড়া এবং অনেকটা উত্তোলন ঢাল বিশিষ্ট যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে বলে মরু গম্বুজ।
উদাহরণ - যুক্তরাষ্ট্রর দক্ষিণ পশ্চিমে মোহেত মরুভূমির ফিসা গম্বুজ।
৮. শিলা পাখা :- মরু অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে আলগা নরম শিলা দ্রুত ক্ষয় পেয়ে জলের সঙ্গে বয়ে যায়। পরে জলধারার খাত বড়ো হলে পার্শ্বখয়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ কে বলে শিলা পাখা।
বৈশিষ্ট :- ক. খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
খ. তলদেশ উত্তল হয়।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমি।
২. বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপ আলোচনা করো।
উত্তর :- দীর্ঘ সময় ধরে অপসারণ, সংঘর্ষ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। নিম্নে আলোচনা করা হলো ------
অপসারনের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ----
১. অপসারণ সৃষ্ট গর্ত :- মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারনের ফলে যে বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে বলে অপসারণ সৃষ্ট গর্ত।
বৈশিষ্ট :- ক. বিশাল অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে।
খ. বিস্তার ১ মিটার থেকে কয়েক কিমি হয়।
উদাহরণ - যুক্তরাষ্ট্র বাফেলো গর্ত, মঙ্গলিয়ার পিয়াং কীয়াং গর্ত, মিশরের কোয়াতারা।
২. মরু সড়ক :- নুড়ি বালি অপশারণের ফলে মরু পৃষ্ঠে কথা এক মসৃন সমতল পৃষ্ট তৈরি হয়। এইরূপ সম্পূর্ণ শিলা পৃষ্ট কে বলে মরু সড়ক।
বৈশিষ্ট :- ক. পলল পাখার ওপরিভাগ।
খ. যথেষ্ট কঠিন হয়ে থাকে।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমি।
৩. মরু প্রলেপ :- মরু সড়কে থাকা অনেক শিলা লৌহ সংযোজনের কারণে লোহিত বর্ণ বা মাঙ্গানিজ
সংযোজনের ফলে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। জারণ পক্রিয়া মাধ্যমে শিলা গুলি এইরূপ রং ধারণ করে বলে একে মরু প্রলেপ বলে।
উদাহরণ - উটা আরিজনা প্রদেশ।
অবঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
১. জিউগেন :- মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পর পর প্রায় অনুভূমিক ভাবে অবস্থান করলে যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে ওপরকার কঠিন শিলাস্তর ফাটল ও দারুনের সৃষ্ট হয়। অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নিচের কোমল শিলাস্তর কে দ্রুত ক্ষয় করে সেখানে খাটের সৃষ্টি করে। ওপরকার কঠিন শিলাস্তর চ্যাপ্টা মাথাযুক্ত টিলারূপে অবস্থান করে, একে জিউগান বলে।
বৈশিষ্ট :- ক. উচ্চতা ৩-৩০ মিটার.
খ. ছোট ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে।
উদাহরণ - সোনেরান মরুভূমি
২. ইয়ারদাঙ :- ভু পৃষ্ঠের সাথে কঠিন ও কোমল শিলা সমান্তরাক ভাবে অবস্থান করলে এবং বায়ু শিলাস্তরের সাথে সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হলে বায়ু অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নরম শিলাস্তর কে সহজে ক্ষয় করে ফেলে। ফলে উল্লুম্ব শিলাস্তর পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উঁচু খাড়া দেওয়ালের মতো অবস্থান করে। একে বলে ইয়ারদাঙ।
বৈশিষ্ট :- ক.উচ্চতা ৬-৭০ মিটার।
খ. মস্তক দেশ সূচলো।
গ. ১৯০৩ সালে হেডেন সর্বপ্রথম সন্ধান পান।
ঘ. তুর্কি শব্দ, যার অর্থ উঁচু বাঁধ।
উদাহরণ - তাকলামাকান মরুভূমি
৩. ইনসেলবার্গ :- মরুভূমি তে ক্ষয়ীভবনের ফলে কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, কিন্তু কঠিন শিলা গুলি বিশেষত আগ্নেয় শিলা যেমন গ্রানাইট, নিস্, ক্ষয় প্রতিরোধ করে খাড়া ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। খাড়া শিলা কে বলে ইনসেলবার্গ।
বৈশিষ্ট - ক. পার্সজ নামকরণ করেন।
খ. ইনসেলবের্জ কথার অর্থ দ্বীপ শৈল।
গ. ছোট ইনসেলবর্গে কে বলে টর, গম্বুজ আকৃতির হলে বলে বর্ণহাটস।
ঘ. পরিণত মরুভূমির পরিচয় বহন করে।
উদাহরণ - কালাহারী মরুভূমি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct