কাশ্মীর মানে ভূস্বর্গ। কাশ্মীর মানে এক উদাস স্বপ্নে ভেসে আনন্দে বিভোর হওয়া। কাশ্মীর মানে সাদা বরফের ঢাকা প্রান্তর, সবুজ ঢাকা অথবা উলঙ্গ উচ্চ পাহাড়। এক দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যভরা স্বর্গ কিন্তু বাস্তবে কাশ্মীর মানে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে আতঙ্ক। সন্ত্রাসীবাদীদের হামলা-মৃত্যু অথবা সীমান্তরক্ষীদের গোলাগুলিতে মৃত্যু। সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীদের-অনুপ্রবেশকারীদের হামলা, কত শত মায়ের পুত্র, কত স্ত্রীর স্বামী, কত পুত্রকন্যার পিতার রক্তাক্ত দেহ অথবা সেনাবাহিনীর এ কে ৪৭-এর গুলির শব্দ। কাশ্মীরের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি পাহাড় পর্বত উপত্যকার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে এমনই আতঙ্ক। সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকা ঘুরে এসে নিজের সরেজমিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এস এম শামসুদ্দিন। আজ পঞ্চম পর্ব।
কাশ্মীরের গুলমার্গ এক অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক সুন্দর জায়গা। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৫-৬ ঘন্টার পথ। প্রশস্ত রাস্তার পাশে পাশে আপেল বাগান ।সকালে বের হয়ে যে পথ ধরে গুলমার্গ যাওয়ার কথা সে পথ বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা। কোনও গাড়ি যাওয়ার অনুমতি নেই। কদিন আগেই ওই এলাকায় সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে কয়জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। হঠাৎই এলাকা উত্তপ্ত। ড্রাইভার ইমরান বলল আইসা কাভি কাভার হোতা রাহতা হায়।
লেকিন ঘুমনেওয়ালক কোয়ি ডার কি বাত নেহি ।
আগত্যায় আমরা যে পথে চলেছি সেই পথের ধারে আপেল বাগানে ঘোরা ছাড়া উপায় কি। যে দিকে কাশ্মীরের সুস্বাদু এবং উন্নতমানের আপেল হয় সেই দিকে যাওয়ার আর সৌভাগ্য হল না।
দূর থেকে সাদা বরফে ঢাকা আকাশ ছুঁয়া পাহাড় আর রাস্তার দু পাশে খাদ আর অসংখ্য পাইন, আখরোট, আঙ্গুর, ডালিম গাছ দেখতে এগিয়ে গেলাম ।
গুলমার্গের কাছাকাছি যেখান থেকে ক্রমশ চড়াই পাহাড়ের পথ শুরু সেখান থেকে ড্রাইভার টিকিট কাটলেন, পারমিট দেখিয়ে চেকপোস্ট পারকরে এগিয়ে যেতে লাগল। যেমন আকা বাঁকা সাজানো গোছানো পথ। পাশের পাইন দেবদারু গাছ গাছালি বুক ভেদ করে উঠেই চলেছি উৎরাইয়ের পথে গাছের ফাঁক ডিউই দেখা যাচ্ছে সুউচ্চ পাহাড়ের মাথাজুড়ে ঢাকা সাদা বরফ। একসময় আমরা গিয়ে পৌছালাম গুলমার্গ। সারিসারি গাড়ি বাস ভ্রমণে আসা মানুষের ভিড়। বাস থেকে নামতে ঘোড় সওয়ারী করবার জন্য কচোয়ানদের বায়না দাম দস্তুর, আমরা ক্রমশ এগিয়ে চললাম পাশে উঁচু নিচু উপত্যকার দিকে। পাশেই এক ফাঁকা মাঠের উপর এক মন্দির। পাশ থেকে এক কাশ্মিরী যুবক বলল ইয়ে সব শুটিং প্লেস। ইয়ে মন্দির মে শুটিং হুযাথা। এক এক করে নানান সিনেমার নাম বলে গেল। একটু এগিয়ে আমরা বেশ উঁচু ঢিবির উপরে উঠলাম। এক আপেল বিক্রেতা এসে বললেন। আমরা এক কেজি আপেল নিলাম ৩০ টাকায়।
আপেল খেতে খেতে দেখতে লাগলাম কাশ্মীরের সৌন্দর্য। বেশ দূরে ঐ দেখা যাচ্ছে সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়। সঙ্গীরা বললো আমরা রোপ ওয়ে দেখতে যাবো ।ওখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে। ঘোড়ায়ালা যা দাম বলছে তা অপেক্ষা ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার অনাভ্যাস বসত আঘাতের শঙ্কায় সে ভাবনা বিদায় দিয়েছি আগেই। ওরা তরুণ হাঁটা বা ঘোড়ায় চড়ার আমেজ নিতে ওরা বায়না ধরলো। রোপ ওয়েতে চড়ে পাহাড় চূড়ায় উঠে বরফ দেখা বা খেলার আনন্দ নিতে কে না চায়। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমেই শুনেছি যে ভিড় ওখানে হয়েছে ফলে টিকিট দেওয়া বন্ধ। অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করছে।টিকিট ব্ল্যাক করছে আবার কেউ কেউ।
সঙ্গীরা সকলে পা পা করে চোখের দেখা দেখতে হেঁটেই এগিয়ে গেলো আমরা নেমে এসে এক উঁচু জায়গায় বসে দেখতে লাগলাম ।
এক কাশ্মিরী ফেরিওয়ালা চশমা ফেরি করছে ।পা পা করে এগিয়ে এলো কাছে।
অস্সালামুয়ালাইকুম।
নাম কেয়া হ্যায় ।
বলল আসপাখ মির।
আশফাক ভাই ইধার কোয়ি ডিস্টার্ব ইয়ানী পুলিশকা জুলুম ইয়া সৈনিক কা জুলুম আইসা কুচ হোতা হ্যায় ?
নেহি সব ।ই ধার এইসা কুচ নেহি ।
আপ কাঁহা রাহতে হ্যায়।
ইঁহাসে তোডি দের আগে পাহাড়ি সে নীচে এক গাঁও মে ।
অপকে সাথ আউর কোন কোন রেহতে হ্যায় ।
মেরা বিবি আউর এক বেটা। আউর আব্বা আম্মা ।
কুছ লিজিয়ে না সাব ।
কেয়া লেঙ্গে ভাই ।
পাওয়ার ওয়ালা চশমা পেহেনতে হায় হাম।
আরো কিছু এটা সেটা কথা ।হটাৎ মেঘ এলো ভেসে মাথার উপর ।বৃষ্টি পড়ছে এক দু ফোঁটা।উঠে পড়লাম -এগিয়ে গেলাম সামনে নানান রকম দোকানের দিকে ।ওরা গেছে অনেক আগে ,এই ঠান্ডায় ভিজলে আর রক্ষে নেই ।কখন যে ফিরবে কে জানে।
আশফাক মির উঠে এলো সাথে ।
-মেরা আব্বাকা তাবিয়েত ঠিক নেহি হ্যায় ,আব্বু আউর আম্মিকে লিয়ে দুআ কারনা
বলাটা এতই আন্তরিক ছিল যে আমার অন্তর ছুঁয়ে গেল ।
ভাবলাম নেওয়ারত কিছুও নেই ওর কাছে যে নিয়ে কিছু সাহায্য করবে ।পকেট থেকে ২৫০ টাকা নিয়ে ওকে দিতে গেলাম ।ও কিছুতেই নেবে না
বলল নেহি সব ম্যায় তো আপসে দুআ করনেকি গুজারিস কি ।পয়সা কা নেহি ।ইয়ে দেখিয়ে মেরা পাশ কিৎনা রূপীয়া হ্যায় বলেই সে পকেট থেকে এক মুঠো টাকা বার করলো পকেট থেকে।
আপ রাখ লিজিয়ে ।
আরে তুম রাখলো ।
নেহি সব ইয়ে লেনা ঠিক নেহি।নেহি লে সকতা ।
আরে ভাই কোয়ি বাত নেহি ।সমাজল তুমহারা আব্বা মেরা আব্বা জায়সা । উনকে তোড়া সাথে দিযা।
ও শুনবে না ।নেবে না ফেরত নেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি ।
এরই মাঝে বৃষ্টি এলো ঝমঝমিয়ে ।সঙ্গে বৃষ্টি ক্রমশ শীল পড়ার মতো পড়ছে ।সঙ্গীরা ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে ।তারপর ও কোথায় মিলিয়ে গেল আর পেলাম না।বৃষ্টি থামলো কিছু পরে।পাশেই হোটেলে আমাদের সঙ্গে আনা ভাত ডাল সবজি মাছ পরিবেশনের ব্যবস্থা হল।একে দুপুরের খাওয়ার খেয়ে উঠে এলাম যা যাঁর জন্য নির্দিষ্ট ট্রাভেলা গাড়িতে।বৃষ্টির পর বেশ জাঁকিয়ে শীত ।
আমরা এবার ফেরার পথে ,সেই অপরূপা প্রকৃতির বুক দিয়ে তাঁর পরিপাটি করে রূপচর্চায় সজ্জিত লাবণ্য দেখতে দেখতে পাহাডের চূড়া থেকে নিচে।অনেকটাই পথ ,পথ আর যেন শেষ হয় না । প্রশস্ত জাতীয় সড়ক ধরে আবার শ্রীনগরের বুক ছুঁয়ে 100 কি মি পথ পাড়ি দিয়ে গুলমার্গের পথে কেশর আর কিসমিস খবানি ,কাশ্মিরী কালো আঙ্গুর , কাশ্মিরী মশলার দোকান রাস্তার পাশে পাশে। আমরা বাস থামিয়ে গেলাম ওই দোকানে। নানান মশলা সহ নানান সামগ্রী কেশর কিনলাম।
কেশর দেওয়া চা এক আলাদা স্বাদ গ্রহণ করে ফিরে চললাম ।
বেশ কিছুটা যাওয়ার পর ড্রাইভার বললো ইয়ে বহুত ডেঞ্জার ডিস্ট্রিক্ট হ্যায় অনন্তনাগ। ইধারকা আদমি বহুত ডেঞ্জার। কুচ না কুচ হোতা রাহতা হ্যায় ।মনে মনে ভয় হলো সত্য সত্যিই । বেশ জমজমাট শহর অনন্ত নাগ শহর।
হোটেল নূর মহলে যখন পৌঁছালাম তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি আটটা ।
এক পাহাড়ের গায়ে হোটেল নুরমোহল ।একদিকে উচ্চ পাহাড়। হোটেলের সামনে প্রশস্ত রাস্তা তারই পাশে নদীর পেটদিয়ে বয়ে চলেছে বরফগলা শিতলতম জলের প্রবাহ তারই সঙ্গে আবার একশ ছুঁয়া বিশাল পাহাড় ।
রাস্তার সংলগ্ন হোটেলে আমাদের গাড়ি থামলো ।হোটেলের লোক এসে যে যাঁর লাগেজ পৌঁছে দিলো যে যাঁর নির্দিষ্ট ঘরে।
হোটেল নুরমোহল বেশ সুন্দর হোটেল।
বেশ রুচি সম্পন্ন ।মনোরম হটেল।
হোটেলের ঘরগুলো বেশ সুন্দর ,সমস্তরকম আধুনিক ব্যবস্থার কোনও অভাব নেই ।এখানে বেশ শীত ।দুটো কম্বলেও কাঁপুনি আসছে ।
সকাল হতেই বারান্দা দিয়ে দেখছি ররিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে ।সকালের চা পান করে বাইরে এলাম । হোটেলে রিসেপশনে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে একটা গাড়ি সুমো গাড়ি ঠিক করলাম ,বলল দু হাজার টাকা লাগবে ।সকলে আমরারেডি হয়ে গাড়িতে উঠলাম । ওই যুবক ছেলেটির কি নাম শাহিদ না সরফরাজ হবে আমাদের নিয়ে চললো বেশ কয়েকটা অদেখা জায়গা দেখাতে। কলকল রবে পাহাড়ের বুক বেয়ে বরফ গলা জলের স্রোত বইছে রাস্তার পাশে নদী বেয়ে ।আমরা এগিয়ে গেলাম অজানা পথে ।এখানে মেঘের সাথে খেলা যায়- গায়ে মুখে মেঘ উড়ে এসে আদর করে যায়।
ড্রাইভার কাশ্মীরী যুবকটি আপন মনে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল ইধার সে অমরনাথ মন্দির পূজা ডেনেকে কে লিয়ে যাতা হ্যায়।
আমাদের আগে আগে কয়েকটি মিলিটারি গাড়ি ভর্তি মিলিটারি এগিয়ে চলেছে আমরা পিছে পিছে ।
রাস্তার পাশে পাশে বড়ো বড়ো গাছের মাথায় খড় বাঁধা ।কি ব্যাপার খড় গাছের মাথায় এমন গোছানো বাঁধা কেন ,প্রশ্ন জাগে মনে ।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করতে বলল যাব ইধার বরফ গিরতা হ্যায় তাব
পুরা পেড পৌদা রাস্তা ভার যাতা হ্যায়।উস অকাত ভেড়া বাকরা কে
খানেকে লিয়ে ইয়ে রাখদেতে হায় ।
বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর এক গ্রাম না নগর বলব বেশ ঘর বাড়ি দোকান রয়েছে এমন জায়গায় আমাদের নামিয়ে বললেন জাইয়ে ।জলদি আজানা।
আমরা গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম পাহাড়ের নীচে এক সাজানো বাগানের কাছে । সাজানো বাগানের পাশ দিয়ে স্রোতস্বিনী বরফগলা জলের স্রোত বয়ে চলেছে ।বেশ শীত শীত ।ওই অদূরে পাহাড়ের বুক মুখ ঘিরে মেঘ এসে জমাট বাঁধছে ।দুএকফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে ।আমরা আবার ফিরে চললাম গাড়ির কাছে ।গাড়ি এবার আমাদের নিয়ে চললো এগিয়ে ।বললাম অভি কাহাঁ লেকে যা রেহে হ্যাঁয় ।
-অভি হাম বেতাব ভ্যালি যাবো ।এদিকে রাস্তা চওড়া হলে কি হবে পাহাড়ের বীভৎস ভয়ঙ্কর খাদ আর বরফ গলা জলের স্রোত ধারা দেখার মতো বীভৎস সুন্দর ।
সুপার হিট ছবি বেতাবের শুটিং হয়েছিল । সেই যুবক বয়সে বেতাব হিন্দি ফিল্ম দেখা স্মরণ করে এই জায়গার সাথে মেলালাম ।চারিদিকে পাহাড় মাঝে বেশ প্রশস্ত জায়গা তার মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে নদীর জল বয়ে যাচ্ছে ।হ্যাঁ এই সেই জায়গা তো ।কিছুটা দাঁড়াবার পর বৃষ্টি এলো - আমরা উঠে পড়লাম গাড়িতে ।আমরা আর নীচে না গিয়ে এগিয়ে গেলাম সামনে। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলা পাকিস্তান সীমান্ত জেলা। ভারতের শেষ জেলা এরপর পাহাড় উপত্যকা ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূরত্বে পাকিস্তান বর্ডার । আর এই জেলার শেষ গ্রাম ফিরসেলেনা ।রাস্তার দুপাশ জুড়ে এক ছোট্ট গ্রাম । ড্রাইভার বলল এই গ্রামেই আমার বাড়ি ।এখন থেকে বেশ কিছুটা দূরে অনেকটা পথ পর হয়ে গিয়ে পৌছালাম সেটা কাশ্মীরের শেষ দর্শনীয় স্থান ।শুধু পাহাড় ভয়ঙ্কর পথ জল গড়িয়ে আসর কলকল শব্দ ।দলবদ্ধ ভাবে খেয়ালী মেঘ পেটে জলধারণ করে প্রসবের অপেক্ষায় ঘুরে ফিরছে । এই শেষ সীমান্ত জায়গাটির সৌন্দর্য আবর্ণনীয়। বেশ কিছু সামগ্রী র দোকান রয়েছে ।ভ্রমণে আসা মানুষের ভিড় ।কেউবা কফি চা চিপস খাচ্ছে ।কেউবা এগিয়ে গিয়ে ঝর্ণার নীচে মাঝে দঁড়িয়ে ছবি নিচ্ছে স্মৃতিকে তরতাজা করে রাখার উদ্দেশ্যে।আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফেরার পথ ধরলাম ।
বেশ চনমনে আপন জীবনের ছন্দে ওরা বেশ সুস্থ স্বাভাবিক ।কে বলবে কাশ্মীর মানে আতঙ্ক গুলি বারুদের গন্ধময় স্থান।
ড্রাইভার এক তরতাজা যুবক । বাবা মা ভাইবোনের সঙ্গে থাকে ।গুলমার্গ কলেজের ছাত্র সে ।মাসে এই গাড়ি চালিয়ে পাঁচ হাজার টাকা পায় ।
ইধার কোয়ি ডিস্টার্ব হ্যায়।
কেইসা ডিস্টার্ব। কুচ নেহি এইসা।
হাম আপনা জিন্দেগী জিনেকে লিয়ে মেহনত আউর রোজি রোটিকে চাক্কার মে রাহতে হায় বাবু।
জম্মুকাশ্মীর কেন্দ্রোশাসিত রাজ্য ।দুটি বিভাগ ,জম্মুর ১০টি জেলা আর কাশ্মীর উপত্যকার ১০টি জেলা । ।
সীমান্তবর্তী জেলা অনন্তনাগ ,কুলগ্রাম, পুলওয়ামা, বারামুলা ।
সীমান্তবর্তী মাত্র দু বা তিনটা জেলায় কিছু কিছু রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটে তবে যা ঘটনা ঘটে সেগুলো রসিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সাংবাদিকরা প্রচার প্রসার করে বলে স্থানীয় একাধিক কাশ্মিরী মানুষের অভিযোগ ।
বেশ কয়দিন কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেবেডিযে আমরাও উপলব্ধি করলাম সে কথা। বিবাদ হিংসা মৃত্যু কোন রাজ্য বা দেশে হয় কিন্তু তার জন্য সম্পূর্ণ রাজ্যাটাই সন্ত্রাসবাদীদের মৃগয়াক্ষেত্র বলে যাঁরা প্রচার প্রসার করে তাঁদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি বা অন্যকোনও উদ্দেশ্য আছে বলেই মনে হয় ।
হোটেল নূর মহলে ফিরে বিকালে আমরা গেলাম হজরত শাহ জৈনউদ্দিন ওয়ালী রহ. এর মাজারে ।
শোনাযায় হজরত জৈনউদ্দিন ওয়ালী রহ.এর এক মহান কাশ্মীরী সাধক। পাহাড়ের উচ্চ চূড়ায় এক গুহার ভিতরে সাধনা করতেন।এবং সেখানেই তাঁর সমাধি হয় ।
কাশ্মীর ব্যাপী তাঁর কামিলিয়াত ও অলৌকিক শক্তির কর্মকান্ডের বহু ঘটনা শোনা যায়।
সুপার হিট হিন্দী ছায়াছবি সালমান খান ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী অভিনীত “বাজরাঙ্গি ভাইজান” এর বিশেষ শুটিং হয়েছিল । এবং গানের শুটিংও এখানে হয়েছিল।
আমরা গাড়ি ঠিক করে গেলাম ওই মাজারে ।একসময় অসংখ্য সিঁড়ি চড়ে পাহাড়ের চূড়ায় মূল মাজারের কাছে পৌছালাম আমরা ।আগে সংখ্যা সিঁড়ি চড়েই উঠতে হতো এখানে।অতি সম্প্রতি একবছর আগে মূল রাস্তা থেকে মাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে । আমাদের গাড়ি
গিয়ে পৌঁছালে মাজারের কাছে ।
আমরা কিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলাম মাজারের কাছে ।কয়েকজন এগিয়ে এলেন জিজ্ঞাসা করলাম ।আন্তরিকতা দেখালো বেশ । আমরা ওযু করে এগিয়ে গেলাম ।একজন বলল এই চওড়া বারান্দায় এখানে বাজরাঙ্গি ভাইজান ছবির শুটিং হয়েছিল ।এখানে কাওয়ালির শুটিং হয়েছিল ।
আমরা নীচে বারান্দা ধরে এগিয়ে গেলাম। ওহ ,মাজারের খাদেমদের শেষ নেই একাধিক খাদেম কুচ ডেকে জাইয়ে। বিল নিয়ে অথবা এমনিতেই টাকা চাইছে।পাহাড়ের নীচে গুহা কেটে মূল মাজারের কাছ পপর্যন্ত গেছে ।দুপাশে বসার জায়গা । একেবারে মূল মাজারের কাছে গিয়ে দেখলাম দরজাটা এতটাই ছোট ও নিচু মনে হলো মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। দরজার সামনে গিয়ে প্রবেশ করার মুখে কেমন যেন ছটফটানি লাগলো যে ছুটে পালিয়ে আসতে পারলে বাঁচি ।
আমি প্রায় দৌড়ে চলে এলাম ,আমার সঙ্গীরা বললো কি হল।
মাথা হেঁট করে ঢোকা ,আল্লাহপাকের কাছে ছাড়া কোথাও মাথা হেঁট করা যায় না ,আমি ঐভাবে ভিতরে প্রবেশ করব না তোমরা যাও ভিতরে ।
না, ওরাও গেল না।আমরা বাইরে থেকে দুআ করে চলে এলাম হোটেলে।
বৃষ্টি পড়ছে ঝমঝমিয়ে ,কাঁপুনি লাগছে।
হটেলের ম্যানেজার আরও কয়েকজন কাশ্মীরের মানুষ বসে আছেন হোটেলের লনে ।আমি এসে বসলাম ওদের পাশে।
পরিচয় পর্ব সেরে আড্ডায় যোগ দিলাম ওদের সঙ্গে ।
৩৭০ কে বাদ কেইসা হ্যায় আপ ?
আরে ভাই ছড়িয়ে ,হাম আম আদমি জিনেকি লিয়ে কম কারকে জিতে হ্যায়, জি রাহাহু। ইয়ে সালে জিৎনা সিয়াসত ওয়ালে হ্যায় সবকে সব চোর হ্যায়।
ইয়ে সব খুদকে লিয়ে শোচতে হ্যায় ,এম আদমিকে লিয়ে নেহি ।
ফারুক আব্দুল্লাহ কেইসা হ্যায়।
-আরে ভাই সাব ওমর আউর মেহবুবা মুফতী সাভকে সাব কে সব লুঠ লিয়া, আমকে লিযে নেহি কুচ নেহি কিয়া।
সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার জম্মু কাশ্মীরের অধিবাসীদের পাওয়া স্পেশাল অধিকার ৩৭০ ধারা তুলে সেখানে উন্নয়ন করতে সচেষ্ট হয়েছে। সংবিধানে উল্লেখিত তাঁদের এই স্পেশাল আধিকার কেন ,
এর পিছনে কি ইতিহাস আছে ,
ভারত কেন সারা বিশ্বজুড়ে সমালোচনা অব্যাহত।কাশ্মিরবাসী মনে করে এই অধিকার হরণ করাকে ভারত সরকারের বিশ্বাস ঘাতকতা । কারণ জম্মু কাশ্মীর ভারত ভুক্তির সময়ে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং প্রধানমন্ত্রী জহরলাল ,সর্দার বললভ ভাই প্যাটেলের সঙ্গে যে চুক্তি করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হচ্ছে এই ধারাকে উঠিয়ে দককাশ্মীরের আম লোকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ।এবং এই আড্ডায় কাশ্মীরের ওই মানুষগুলোর মুখেও সে কথা শুনলাম,কি বলছে ওরা ।
এরা বলছে কেন্দ্র সরকার আদানি আম্বানি ও বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চক্রান্ত করে কাশ্মীরের জমিনে ওদের জমি হাতে তুলে দিতে চাইছে।
আখরোট ,খবানি ,কাশ্মিরী মশলা,আঙ্গুর , কেশর চাষের কোটি কোটি টাকার বিদেশী ব্যবসা হাতাতে চাইছে । এই চক্রান্তের জন্যই ৩৭০ ধারা তুলে দিতে চাইছে ।
আমরা জম্মু ও কাশ্মীর বাসী তাই ঠিক করেছি এখানকার জমি জম্মু ও কাশ্মীর বাসী ছাড়া জমি বিক্রি করা যাবে না ।
এখানে ভারতের যে কোনও প্রদেশের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য চাকুরী করতে পারে ,এমনকি গ্যর ভাড়া নিয়ে থাকতেও পারে ,আছেও ,কোনও অসুবিধা নেই ,কিন্তু স্থায়ী ভাবে কেউই রেজিস্ট্রি করে নিজের জমিন কিনতে পারবে না ।
কিন্তু যে ধারা নিয়ে এত বিতর্ক সেই ধারায় কি আছে ,জানা প্রয়োজন ।
সময় আর ইতিহাস।
হায়দ্রাবাদ নালসার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ববিষয়টি যেমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । তাঁর কলমে ৩৭০ ধারা ।
জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে শ্রীনগর তথা কাশ্মীরকে ভারতের অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করছেন (এক্সপ্রেস আর্কাইভ)
৩৭০ ধারা কী ?
৩৭০ ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারাবলে জম্মুকাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়।
স্বাধীনতার পর প্রায় ৬০০টি রাজন্য পরিচালিত রাজ্যের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হয়। ওই আইনে তিনটি সম্ভাবনার কথা রয়েছে। প্রথমত স্বাধীন দেশ হিসেবে থেকে যাওয়া, দ্বিতীয়ত, ভারতের যোগদান অথবা, পাকিস্তানে যোগদান। এ ব্যাপারে কোনও লিখিত ফর্ম না থাকলেও, কী কী শর্তে এক রাষ্ট্রে যোগদান করা হবে, তা রাজ্যগুলি স্থির করতে পারত। অলিখিত চুক্তি ছিল, যোগদানের সময়কালীন প্রতিশ্রুতি রক্ষিত না হলে, দু পক্ষই নিজেদের পূর্বতন অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে।
অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্য এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করে সংবিধানের ৩৭১, ৩৭১ এ ও ৩৭১ এল ধারার মাধ্যমে।
ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ৫ নং উপধারায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্পষ্টত উল্লেখ করে দিয়েছিলেন যে তাঁর সম্মতি ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা আইনে এ রাজ্যের ভারতভুক্তি কোনও সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বদলানো যাবে না। ৭ নং উপধারায় বলা ছিল যে এই ভারতভুক্তির শর্তাবলী ভবিষ্যৎ কোনও সংবিধানের মাধ্যমে বদলাতে বাধ্য করা যাবে না।
ভারতভুক্তি কীভাবে হল?
রাজা হরি সিং প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছিলেন তিনি স্বাধীন থাকবেন, এবং সেই মোতাবেক ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতাবস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। পাকিস্তান সে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল। কিন্তু জনজাতি এবং সাদা পোশাকের পাক সেনা যখন সে দেশে অনুপ্রবেশ করে, তখন তিনি ভারতের সাহায্য চান, যা শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি ঘটায়। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরদিন, ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭, গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন।
এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান ছিল খোলামেলা। ভারতের বক্তব্য ছিল এই ভারতভুক্তির বিষয়টি কোনও একজন শাসকের মতামতের ভিত্তিতে স্থির হতে পারে না, এর জন্য সে জায়গার অধিবাসীদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, “আমার সরকার মনে করে, কাশ্মীর আক্রমণকারীদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার অব্যবহিত পরেই সে রাজ্যের ভারতভুক্তির বিষয়টি রাজ্যের অধিবাসীদের দ্বারা স্থিরীকৃত হওয়া উচিত।” কাশ্মীরের ভারতভুক্তি যে সাময়িক সিদ্ধান্ত, তা ১৯৪৮ সালে জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কিত শ্বেত পত্রে ঘোষণা করে ভারত সরকার। ১৭ মে ১৯৪৯ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং এন গোপালস্বামী আয়েঙ্গারের সম্মতিক্রমে জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাকে একটি চিঠি লেখেন। সে চিঠিতে তিনি বলেন, ভারত সরকারের স্থির সিদ্ধান্ত হল জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান সে রাজ্যের অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়। সেই মতামতের প্রতিনিধিত্ব বহন করার উদ্দেশ্যেই গণপরিষদ গঠিত হয়েছে।
৩৭০ ধারা কীভাবে কার্যকর হয়েছিল?
মূল খশড়া দেওয়া হয়েছিল জম্মু কাশ্মীর সরকারকে। কিছু অদলবদলের পর ৩০৬ এ ধারা (বর্তমান ৩৭০) ২৭ মে, ১৯৪৯ সালে গণপরিষদে পাশ হয়। প্রস্তাব পেশ করে আয়েঙ্গার বলেন, যদিও ভারতভুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও ভারতের তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে যে পরিস্থিতি তৈরি হলে গণভোট নেওয়া হোক, এবং গণভোটে ভারতভুক্তি যদি গৃহীত না হয়, তাহলে “আমরা কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করব না।“
৩৭০ ধারা কি সাময়িক অবস্থান?
সংবিধানের একবিংশ অংশের প্রথম অনুচ্ছেদ এটিই। এ অংশের শিরোনাম হল- সাময়িক, পরিবর্তনসাপেক্ষ, এবং বিশেষ বিধান। ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে। জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা এ ধারা পরিবর্তন করতে পারত, একে বিলোপ করতে পারত বা একে ধারণ করতে পারত। বিধানসভা একে ধারণ করার পক্ষে মত দেয়। আরেকটি ব্যাখ্যা হল- গণভোট না হওয়া পর্যন্ত ভারতভুক্তির সিদ্ধান্ত সাময়িক বলে গণ্য। গত বছর সংসদে এক লিখিত জবাবে ভারত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কোনও প্রস্তাব নেই। ৩৭০ ধারা সাময়িক এবং একে বহাল রাখা সংবিধানের সঙ্গে জালিয়াতি- এ কথা বলে মামলা করেছিলেন কুমারী বিজয়লক্ষ্মী। ২০১৭ সালে এ মামলা নাকচ করে দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শিরোনামে সাময়িক লেখা থাকলেও ৩৭০ ধারা সাময়িক নয়। ১৯৬৯ সালে সম্পৎ প্রকাশ মামলায় ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে মানতে অস্বীকার করে সুপ্রিম কোর্ট।
৩৭০ ধারা কি বিলোপ করা যেতে পারে?
রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ (৩) বিলোপ করা যেতেই পারে। তবে তেমন নির্দেশের জন্য জম্মু কাশ্মীরের গণপরিষদের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৭-তে। ফলে একটা মত হল, ৩৭০ ধারা আর বিলোপ করা যেতে পারে না। তবে এ ব্যাপারে আরেকটি মতও রয়েছে, সেটা হল রাজ্য বিধানসভার সম্মতিক্রমে এই বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
৩৭০ ধারার তাৎপর্য কী?
৩৭০ ধারার ১ নং অনুচ্ছেদ উল্লিখিত হয়েছে, যেখানে রাজ্যগুলির তালিকায় জম্মু-কাশ্মীরকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে ৩৭০ ধারার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধান লাগু হবে। তবে ১৯৬৩ সালের ২৭ নভেম্বর নেহরু লোকসভায় বলেছিলেন যে ৩৭০ ধারার ক্ষয় হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর রাখার জন্য অন্তত ৪৫ বার ৩৭০ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভাবে রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রায় নাকচ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্দেশ মোতাবেক প্রায় গোটা সংবিধানই, সমস্ত সংশোধনী সহ জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর করা হয়েছে। ৯৭টির মধ্যে ৯৪টি যুক্তরাষ্ট্রীয় তালিকা জম্মু কাশ্মীরে লাগু, ৩৯৫ টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ২৬০টি রাজ্যে কার্যকর, ১৩টির মধ্যে ৭টি তফশিলও লাগু রয়েছে সেখানে ।জম্মু কাশ্মীরের সংবিধান সংশোধনের জন্য ৩৭০ ধারাকে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে যদিও ৩৭০ ধারার অন্তর্গত ভাবে রাষ্ট্রপতিরও সে ক্ষমতা নেই। পাঞ্জাবে এক বছরের বেশি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখতে সরকারের ৫৯তম, ৬৪ তম, ৬৭ তম এবং ৬৮তম সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু জম্মুকাশ্মীরের ক্ষেত্রে শুধু ৩৭০ ধারা প্রয়োগ করেই সে কাজ চলে যায়। তালিকাভুক্ত রাজ্যগুলির জন্য আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪৯ নং অনুচ্ছেদ জম্মু কাশ্মীরে লাগু করার জন্য বিধানসভায় কোনও প্রস্তাব পাশ করানো হয়নি, রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তা কার্যকর হয়ে যায়। এসব দিক থেকে দেখলে ৩৭০ ধারা জম্মু কাশ্মীরের অধিকারকে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় খর্ব করে। এখন ৩৭০ ধারা, জম্মু কাশ্মীরের থেকে ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে বেশি সহায়ক।
জম্মু কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার জন্য ৩৭০ ধারার কি কোনও প্রয়োজন আছে?
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের প্রস্তাবনায় কোনও সার্বভৌমত্বের কথা তো বলাই নেই, বরং সংবিধানের উদ্দেশ্য হিসেবে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা বলা রয়েছে। এ রাজ্যের জনগণ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃত, নাগরিক নয়। ৩৭০ ধারা সংহতি বিষয়ক নয়, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক। যাঁরা এর বিলোপ চাইছেন, তাঁরা সংহতি নিয়ে ভাবিত নন, তাঁদের মাথাব্যথা অভিন্নতা নিয়ে।
৩৫ এ ধারা কী?
৩৭০ ধারা থেকেই প্রবাহিত হয় সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে কার্যকর হয়। ৩৫এ ধারানুসারে, জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দা বলতে কী বোঝায়, তাঁদের বিশেষ অধিকারগুলি কী কী, এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার উপর ন্যস্ত রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct