রহমতুল্লাহ,মুর্শিদাবাদ,আপনজন: ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ইউনাচলন্ত ট্রেনের চাকার ভিতর ছুড়ে ফেলে বেলডাঙার বেগুনবাড়ির বাসিন্দা নাজিমুদ্দিনকে খুন করা হলেও কোন হেলদোল নেই রেল কর্তৃপক্ষের। পরিবার সূত্রে জানা গেছে ২০ দিন আগে হায়দরাবাদ যান নাজিমুদ্দিন। তাঁর নিজের একটি চার চাকা গাড়ি ভাড়াতে চালাতেন । তাঁর প্রতিবেশী আলী নামক এক ব্যক্তি নার্সিং কোচিং সেন্টার চালান। আলীকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে চালক হিসেবে কাজ করতেন নাজিমুদ্দিন। আলী বিভিন্ন জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষিণ ভারতের বিশেষ করে হায়দারাবাদের নার্সিং কলেজে ভর্তি করানোর কাজ করে থাকেন। তিনি পরীক্ষার সময় ছাত্র ছাত্রীদের সাথে করে নিয়ে যান। এ বৎসর তিনি নাজিমুদ্দিনকে পাঠিয়েছিলেন ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে। এ দলে ছিলেন মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার ছাত্র -ছাত্রী। হায়দরাবাদ থেকে ফিরে মালদহ জেলার ছাত্র ছাত্রীরা শিয়ালদহ থেকে অন্য ট্রেন ধরেন। মুর্শিদাবাদ জেলার ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে নাজিমুদ্দিন শিয়ালদহ থেকে রাত ৮টা ১০ এর শিয়ালদহ লালগোলা ট্রেন ধরেন। বেথুয়াডহরি স্টেশনে সমস্যার সূত্রপাত । ট্রেনে এক বৃদ্ধার কাছে কিছু মরিচ ছিল। ট্রেনের একই কামরায় ১০/১২ জন ছানা ব্যবসায়ী ঘোষ ছিল। ঐ কামরাতেই ছিলেন নাজিমুদ্দিন সহ তাঁর কয়েকজন বন্ধু। ট্রেন বেথুয়াডহরী ছাড়ার পর ঐ বৃদ্ধা কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন তাঁর কিছু মরিচ কেউ চুরি করে নিয়েছে। বৃদ্ধার কান্নাকাটি শুনে নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান এবং জানতে চান তাঁর কত টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। বৃদ্ধা জানান দু আড়াইশো টাকার মরিচ চুরি হয়েছে। নাজিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে গরীব মানুষ বলে দুশো টাকা দিয়ে দেন। তার পর যাত্রীদের মধ্যে কেউ নিয়েছে কি না তার জানার জন্য খোঁজা শুরু করেন। অবশেষে খোঁজ পাওয়া যায় এক ছানা ব্যবসায়ী মরিচ চুরি করেছে। তখন নাজিমুদ্দিন এর সাথে ছানা ব্যবসায়ীদের বচসা শুরু হয়। এর পর ট্রেন দেবগ্ৰাম স্টেশনে দাঁড়ালে ছানা ব্যবসায়ীরা নাজিমুদ্দিন ও তাঁর দুই বন্ধু রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে জোর করে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়। ব্যপক মারধর করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে রসিক রাজা ও অমিত কর্মকারকে ছেড়ে দেয়। তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়ে, আর সেই সময় নাজিমুদ্দিনকে ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দেয়। ট্রেন নাজিমুদ্দিন এর দেহকে দু টুকরো করে চলে যায়। এক দিকে বুক-মাথা আর অন্য দিকে থাকে কমর থেকে নীচের অংশ।
নাজিমুদ্দিন এর বাবা অটোরিকশা চালক। নাজিমুদ্দিনরা চার ভাই এক বোন। নাজিমুদ্দিন সবার ছোট। বয়স ২২। দুই সন্তান। দেবগ্ৰাম রেলস্টেশনে ট্রেনের চাকার তলায় অন্যায় এর বিরুদ্ধে লড়াকু জীবনের সমাপ্তি ঘটে এই ভাবে।
ঘটনাটি কোন তথাকথিত বড় মিড়িয়া গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেনি। শাসক দল সহ কোন রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে জোরালো ভাবে সরব হয়নি। এসডিপিআই এর রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন মাত্র। তাঁরাও কোন কর্মসূচি নেয়নি।
নাজিমুদ্দিন এর বড় ভাই আব্দুর রহিম কৃষ্ণনগর জিআরপি থানায় এফআইআর করেছেন ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার। কিন্তু জিআরপি এখনও কোন পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেনি। সবার প্রশ্ন নাজিমুদ্দিন এর পরিবার কি আইনের ন্যায়বিচার পাবেন না।
লালগোলা শিয়ালদহ লাইনে দেবগ্ৰাম বেথুয়াডহড়ী এলাকার ঘোষেরা প্রায় সাধারণ যাত্রীদের জুলুম নির্যাতন করে এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয় না এ অভিযোগও দীর্ঘদিন করে আসছেন সাধারণ মানুষ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct