বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দুটি নতুন পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তায় সম্পর্ক বাঁধেন। দীর্ঘদিন একটি পরিবারে একধরনের অভ্যাসে বড় হয়ে নতুন জায়গায় এসে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে আমাদের সমাজব্যবস্থার ফলে এই সমস্যায় বেশি পড়েন নারীরা। মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় এই সম্পর্ক মানামানি আর মানিয়ে চলার ওপর। এই বিষয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন নারী বিষয়ক লেখিকা.... নাজমা আহমেদ
শ্বশুরবাড়ির নতুন লোকজনের সঙ্গে মানিয়ে চলার শিক্ষা কিন্তু পরিবারের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বর বা কনের পরিবার যেভাবে তার দায়িত্ব ও সামাজিকতা পালন করে, পরিবারের সদস্যরা তা-ই দেখে শেখেন।
এখন নবদম্পতি নতুন পরিবারের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেবেন, সেটা নির্ভর করে তাঁদের মানসিকতার ওপর। বিষয়টি খুব সহজ ব্যাপার না। যাঁদের পরিবারের মানুষের সংখ্যা কম, আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগে দূরত্ব আছে বা দূরে থাকেন, তাঁদের জন্য বিষয়টি বেশ কঠিন।
অনেক সময় বাবা-মায়ের বদলির চাকরি বা হোস্টেলে বড় হওয়ার কারণে পরিবারে সময় দিয়েছেন কম। বিভিন্ন কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, একান্ত নিজেদের নিয়ে থাকেন বা আরও অনেক কারণ থাকতে পারে, ফলে আপনার পরিবার থাকে একা। এতে সেই গোটা পরিবার দিনের পর দিন একটা নিরানন্দ সময় কাটায়। এতে হয়তো তাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এমন পরিবারে বছরের পর বছর বেড়ে ওঠার ফলে সন্তানদের নতুন একটি পরিবারে মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে। নবদম্পতিকে এ ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সব সদস্যকে ভালোবাসা, সহজ আর ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সহায়তা করতে হবে।
নতুন বউয়ের প্রথমেই পজিটিভ মানসিকতা হবে, শ্বশুরবাড়ি কোনো শত্রুর বাড়ি বা যুদ্ধক্ষেত্র নয়। আপনার জীবনে আসা সবচেয়ে ‘প্রিয় মানুষ’ বড় হয়েছেন এই পরিবারে। তাঁর সম্মান আর অবস্থান একটু দেখুন। নতুন পরিবারকে আপন করে নিতে পারলে আপনার জীবনসঙ্গীও খুশি হবেন। আপনাদের মধ্যে ভালোবাসার সুযোগ হতে পারে নতুন পরিবারে আপনার সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব।
১) দুই পরিবার নিয়ে কখনো তুলনা করা যাবে না। একদম ভিন্ন পরিবেশ, সামাজিক অবস্থান আর পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে বড় হয়েছেন দুজন। প্রতিটি পরিবারের নিজস্বতা আর সীমাবদ্ধতা থাকে। সময় নিন, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন। প্রত্যেকটা মানুষকে জানুন। প্রয়োজনে আপনার সঙ্গীর সহযোগিতা নিন।
২) ভুল সবারই হয়, তা ক্ষমাসুন্দরভাবে দেখতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় খুব রাগের যথেষ্ট কারন থাকলেও রাগ করা যাবে না। মনের কথা মনেই থাক, সেটাকে বাইরে আনার দরকার নেই। মাথায় বুদ্ধি রেখে যত্নবান স্বভাব দিয়ে নতুন পরিবারের মানুষগুলোর মন জয় করতে হবে।
৩) বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবনের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই কথা মাথায় রাখতে হবে। পরিবারে হয়তো মা বা অন্য কেউ করে দিতেন আপনার কাজগুলো। এখন আপনি দায়িত্ববান মানুষ। নিজেরটা করে অন্যকেও সাহায্য করুন।
৪) সবার সহযোগিতা যেমন কাম্য, তেমন নিজেকেও সহযোগী মনোভাব রাখতে হবে। ছোট এবং বয়োবৃদ্ধ, তাঁদের আপনার ভক্ত করে ফেলুন। এতে সবার মনে পৌঁছানো সহজ হয়ে যাবে। মনোযোগ দিয়ে তাঁদের কথা শুনুন। তাঁদের চাহিদা আর প্রত্যাশা কম। তাঁরা শুধু সময়, মনোযোগ আর ভালোবাসা চান। তাই আপনার জন্য সহজ হবে তাঁদের কাছে পৌঁছানো।
৫) ধৈর্যের কোনো বিকল্প নেই। নতুন পরিবারের লোকজন আপনার দৈনন্দিন রুটিন জানেন না। তাই তাঁদের আপনাকে বোঝার সুযোগ দিন। আপনি সহজ-সুন্দর করে কাছে টানুন পরিবারের সদস্যদের। যাঁকে ভয় লাগবে, তাঁর জন্য চা তৈরি করে নিয়ে যান; পাশে বসুন, কথা বলার চেষ্টা করুন। তাঁর প্রিয় জিনিস কী বা দুর্বলতা কিসে, জানতে চেষ্টা করুন।
৬) সমস্যা হলে অবশ্যই সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করে নিতে হবে। ধরুন, আপনি কিছু জানালেন না, তার জন্য তিনি হয়তো অন্য রকম ভুল-বোঝাবুঝিতে জড়িয়ে পড়লেন। আর সঙ্গীকে বলার ফলে দুজন মিলে আলোচনা করে মিলিয়ে নিতে পারবেন। ৭) বিয়ে মানেই খরচ। নবদম্পতি অনেক সময় পরিবারের ওপর নির্ভরশীল থাকেন। আবার পরিবারগুলো চাওয়া বা প্রত্যাশার মধ্যে থাকে। তাই নবদম্পতিদের একটু স্পেস দিলে তাঁদের জন্য সহজে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা সহজ হবে।
৮) অনেক সময় ছেলেরা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিশেষ অতিথির মতো ভাব ধরে থাকেন। সেটা না করে সবার সঙ্গে মিশুন। ছোটদের সঙ্গে গল্প করুন। ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনার টুকটাক খোঁজখবর নেওয়ার প্রবণতা দেখে আপনার স্ত্রীও নিজেকে শুধরে নিতে চেষ্টা করবেন।
৯) নতুন বউ বাড়িতে যাওয়ার পর শ্বশুর-শাশুড়িরও কিছুটা আন্তরিকতা দেখাতে হবে। একটু একটু করে বুঝে নিতে হবে নতুন বউকে। তবে ছেলে পর হয়ে যাচ্ছে ভেবে অযথা শত্রুপক্ষ হিসেবে নতুন বউকে ভাববেন না। এতে বিপরীত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
ছেলের বউ বা মেয়ের স্বামীকে নিজের সন্তানদের মতো ভাবতে শিখুন। তাঁদের আলাদা ভাবলে সম্পর্ক ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকবে। তাই সময় পেলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। নিজেদের সংসারের গল্প বলুন। এতে তাঁরা দ্রুত আপন হয়ে উঠবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct