“আমি জানি গণতন্ত্র হল সেই পন্থা যেখানে একজন দুর্বলও সবলের ন্যায় সমান সুযোগ পায়”: গান্ধীজি
আমজনতার রাজনীতি
ক্রমবর্ধমান এই মনুষ্য লড়াই, বিবাদের উৎস রাজনৈতিক দলগুলির মতবিরোধ হলেও, অযাচিত এই হিংসা ও লড়াই বহিঃপ্রকাশ সাধারণ মানুষের মধ্যেই হয়। আমজনতার এই অহেতুক রাজনৈতিক বিবাদে জড়িয়ে পড়া উচিত কি না টা ভেবে দেখার সময় এসেছে। নির্বাচনে ভোট দান সবার এক গণতান্ত্রিক অধিকার। বর্তমান যুগের আমজনতার রাজনীতির একাল সেকাল নিয়ে আলোচনা করেছেন ওড়িশার আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রের এগ্রিকালচারাল ইকোনমিস্ট মোশারফ হোসেন.....
যুগ যুগ ধরে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা বিশ্ব রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সবার হাতে ক্ষমতা ও নির্বাচনী অধিকার সমসাময়িক গণতন্ত্রের এক অন্যতম সৌন্দর্যতা। যখন দেশের শাসক কুল আমজনতার ভোটের মাধ্যমে
পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে অহিংস আবহে নির্বাচিত হয়, তখন গণতন্ত্রের
সুফল প্রকাশ পায়। রাজতন্ত্রের একচ্ছত্র আধিপত্য যখন গণতন্ত্রে
রূপান্তরিত হয় তখন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের মনে আসে সাহস,
অংশীদারত্ব এবং অধিকার। গান্ধীজি তাইতো বলেছিলেন “আমি জানি গনতন্ত্র হলো সেই পন্থা যেখানে একজন দুর্বলও সবলের ন্যায় সমান সুযোগ পায়”।
কিন্তু এই গণতন্ত্র কে বাস্তবায়িত করতে যখন হিংসা, হানাহানির ঘটনা
সামনে আসে, তখন গণতন্ত্রের মৌলিকতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। আজ সারাদেশে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে হিংসা ও মৃত্যুর ঘটনা অহরহ । ক্রমবর্ধমান এই মনুষ্য লড়াই, বিবাদের উৎস রাজনৈতিক দলগুলির মতবিরোধ হলেও, অযাচিত এই হিংসা ও লড়াই বহিঃপ্রকাশ সাধারণ মানুষের মধ্যেই হয়। আমজনতার এই অহেতুক রাজনৈতিক বিবাদে জড়িয়ে পড়া উচিৎ কি না টা ভেবে দেখার সময় এসেছে। নির্বাচনে ভোট দান সবার এক গণতান্ত্রিক অধিকার।
সাধারণ মানুষ একজন প্রত্যাশী কে নির্বাচিত করবে প্রতিনিধি হিসাবে এবং
একটা সরকার মানুষের সেবা করার ছাড়পত্র পাবে।
এবার ভোট পরবর্তী সময়ে যারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী বা সদস্য তারা অবশ্যই তাদের দলের এজেন্ডা কে আগে বাড়িয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবে, তাতে ভুলের কিছুই নেই। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ, যাদের রুটি রুজির জন্য সংঘর্ষ প্রতিনিয়ত, তারা অহেতুক কেনো রাজনৈতিক লড়াই বিবাদে সামিল হবে? তারা কেনো ক্ষমতায় আসীন সরকারের কাজের ক্ষুরধার মূল্যায়ন ও গঠনমূলক
সমালোচনা করবে না? এটাই আমজনতার রাজনীতির মূলমন্ত্র হওয়া উচিত নয় কি? যখন সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে রাজনীতি ভিত্তিক বিবাদ কে প্রশ্রয় না দিয়ে, সরকারের বা নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রতি একটা গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নেবে, সেদিন সরকারেরও সেবাদানের গুন যে অনেকাংশে বেড়ে যাবে
সেটা বলা বাহুল্য।
কেন আমরা একটা নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক অবস্থান নিয়ে একজন
সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করবো না? আমরা যখন এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে
চলবো তখন উন্নয়নের গতি আনতে ডান বামের প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হবে। তাতে আখের লাভ কিন্তু ওই আমজনতারই।
তাইবলে কি আমি আদমি কি কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত
হতে পারবে না? অবশ্যই পারবে, কিন্তু সেই রাজনৈতিক সমর্থনের জায়গাটা
যেন কখনই উন্নয়নের সাথে আপস না করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে । আসল
সমর্থনের রাজনীতি তো আমরা বাক্সবন্দী করে দিয়েছি নির্বাচনের সময়।
কেন জানিনা আমরা বড্ডো একপেশে, সর্বদা একটা পক্ষ নিয়ে প্রতিক্রিয়া
দিতে ভালোবাসি ।
আমরা ভুলেই যাই সব কয়েনের দুটো দিক আছে । দুটো
দিককে নিরপেক্ষতার আয়নায় তুলে ধরলে, যে কোনো বিষয় কে আরো
সামগ্রিক করে তুলে ধরা যায় এবং তাতে সমস্যার সমাধান অনেকাংশে
সর্বগ্রাহী এবং ফলপ্রসূ হয়ে থাকে । এই দিকটাকে আমাদের অনুধাবন করতে
হবে।
আমজনতার রাজনীতি ভোট দান এবং ভোট পরবর্তী সময়ে সরকারের কাজের
নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ও খামতির দিকগুলো তুলে ধরাতেই সীমাবদ্ধ থাকায়
বাঞ্ছনীয়। এটাও রাজনীতিতে অংশগ্রহণের একটা প্রকার, যেটা আমজনতার জন্য খুবই প্রযোজ্য। আজ গ্রামবাংলার সমাজের প্রায় সর্বস্তরে মানুষের মধ্যে এক বিষাক্ত রাজনৈতিক বিভেদের তীব্রতা সহজেই অনুমেয়।
আমরা কতবার শুনতে পাই নির্বাচনী হিংসায় আমেরিকা তে কেউ বলি হয়েছেন বা রাজনৈতিক হিংসায় ইউরোপে কেউ ঘরছাড়া? অথচ আমাদের দেশে এরকম ঘটনা আকছার, কারণ ওই আমজনতার ভুল রাজনীতি. যেদিন আমরা এইসবের উর্ধে উঠতে পারবো, সেদিন দেশের রাজনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে, আমজনতার উন্নয়ন হবে আরো জোরদার। অতএব চাবিকাঠি সে আমজনতার হাতেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct