আপনজন ডেস্ক: রাজ্যে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত সংখ্যালঘুদের এগিয়ে নিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চাকরি ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের সংরক্ষণ দেয়। এই ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের সবাই অবশ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির সরকারি ব্যক্তি মমতার সেই সদিচ্ছাকে বাস্তাবয়িত করতে দিচ্ছেন না। আর তা না করতে দেওয়ার ফলে বারে বারে ওবিসি-এ সংরক্ষণ বাস্তবায়নে বঞ্চনার অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠল ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি’র বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পিএইচডি করার জন্য যে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘কোনও যোগ্য ওবিসি-এ প্রার্থী পাওয়া যায়নি।’
ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ রিসার্চ স্টাডিস ডিপার্টমেন্ট অফ ইংলিশ ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত মেধা তালিকা প্রকাশ করে তাতে ওবিসি-এ এর জন্য কোনও ‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজে না পেলেও অন্যান্য সংরক্ষিত আসনে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পায়। আর তা সংরক্ষণ নীতি মেনেই প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ উঠেছে, ওবিসি-এ র জন্য একটি আসন সংরক্ষিত থাকলেও তা মানা হয়নি। আর এর ফলে ‘যোগ্য প্রার্থী’ খুঁজে না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে ওই সংরক্ষিত আসনকে সাধারণ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওবিসি-এ রা বঞ্চিত হবেন বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে বিশেষত সংখ্যালঘু মহল থেকে। অথচ, ‘আপনজন’ ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি ও ইন্টারভিউয়ের তালিকা করে দেখেছে, ইংরেজিতে পিএইচডির জন্য বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে ইংরেজিতে পিএইচডি করার জন্য অনলাইন ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে ডাক পাওয়া প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের তারিখ ও সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। গুগল মিট-এর লিঙ্ক দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় ১৬ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর অবধি কোন সময়ে কাদের অনলাইন ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। সেই ইন্টারভিউয়ের পর অবশেষে মেধা তালিকা প্রকাশ করে।
১৬ ও ১৭ নভেম্বর প্রতিদিন ২২জন করে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়। আর ১৮ নভেম্বর ১৭জনকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়। এদের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, যে ৬১জনকে ইন্টারভিউতে ডাকা হয়েছিল তাদের মধ্যে চারজন মুসলিম। এদের মধ্যে তিনজন মহিলা। ১৬ নভেম্বর ডাক পান সেখ জুবায়ের। ১৭ নভেম্বর ডাক পান নেহা পারভিন ও মারিয়াম খাতুন। আর ১৮ নভেম্বর ডাক পান আফরিন হায়াত। সূত্রের খবর, এদের কেউ নেট বা সেট উত্তীর্ণ, কেউ জেআরএফ। এদের মধ্যে ওবিসি-এ তালিকা ভুক্ত থাকার দাবি জানানো হলেও তাদেরকে ওবিসি-এ-র যোগ্য প্রার্থ হিসেবে বিবেচিত করা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, ফের একবার উচ্চ শিক্ষা অর্জনে মুসলিমদের বঞ্চিত করারর অভিযোগ উঠল। যদিও এ ব্যাপারে ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার কিংবা উপাচাের্যর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন, ইতনি সমান চোখে দেখেন হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সবাইকে। তাই তিনি কোনওভাবেই চান না হাতি বৈষম্য। সেই বার্তা দিয়েই শুধু মমতা ক্ষান্ত হননি, ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী জিসেবে প্রথম শপথ নেওয়ার পর তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন রাজ্যের পশ্চাদপদ সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আইনের বেড়াজালে সরাসরি মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ওবিসি-এ মুসলিমদের জন্য রাজ্য সরকারের চাকরি ও শিক্ষায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে তৃণমূল সরকার। সেই সঙ্গে রাজ্যের প্রায় সিংহ ভাগ মুসলিম এখন ওবিসি-এ অথবা ওবিসি-বি তালিকাভুক্ত। মূলত সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার চাকরি ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ ওবিসি-এ তালিকাবুক্তদের সংরক্সন দিয়েছে। এই ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের সবাই অব্যশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির সরকারি ব্যক্তি মমতার সেই সদিচ্ছাকে বাস্তাবয়িত করতে দিচ্ছেন না। আর তা না করতে দেওয়ার ফলে বারে বারে ওবিসি-এ সংরক্ষণ বাস্তবায়নে বঞ্চনার উঠছে। কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, পিএইচডি-তে ভর্তির জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তাতে ইতিহাস বিভাগের জন্য একটি করে আসন ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি এর জন্য সংরক্ষিত ছিল। ওবিসি আসনে বহু নেট-সেট এমনকী জেআরএফ উত্তীর্ণরা আবেদন জানান। কিন্তু ইতিহাসে পিএইচ করার জন্য যে ফল প্রকাশিত হয় তাতে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জানানো হয় কোনও যোগ্য ওবিসি-ও ও ওবিসি-বি প্রার্থী নেই। এর পর বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তার পর প্রবল চাপে পড়ে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তির জন্য সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে। তাতে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি ক্যাটেগরিতে দুজন মহিলার নাম সংশ্লিষ্ট করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct