নিজস্ব প্রতিবেদক,হাওড়া,আপনজন: একসময় হাওড়াকে শেফিল্ড অফ ইস্ট বলা হত। সেই গরিমা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শিল্পে হাওড়ার সেই মর্যাদা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। হাওড়ায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের সিনার্জি’র উদ্বোধন করে মঙ্গলবার একথা বলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। মঙ্গলবার ১৪ ডিসেম্বর হাওড়ার শরৎ সদনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের সিনার্জি অনুষ্ঠিত হয়। এর সূচনা করে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। তিনি বলেন, একসময় শিল্পে হাওড়ার যে সুনাম ছিল, হাওড়ার সেই মর্যাদা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। হাওড়াকে আবার শিল্পে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। রাজ্য সরকার হাওড়া জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। শিল্পের মানচিত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য হাওড়া তৈরি আছে। শিল্পে যাতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি তারজন্যই এই সিনার্জির আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বিনিয়োগকারী শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, শিল্পে যাতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি তারজন্য ২০১৩ থেকে সিনার্জির মাধ্যমে জেলায় জেলায় আমরা পৌঁছে যাচ্ছি। আজকে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। ট্রেড লাইসেন্স এখন অনলাইনে করার সুবিধা মিলছে। আগামী দিনে অনলাইনে আরও পরিষেবা পাওয়া যাবে। আমরা সবসময় আপনাদের সঙ্গে থেকেই এগিয়ে যেতে সাহায্য করব।
সিনার্জির মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের কোথায় কি অসুবিধা তা দেখে সমাধান করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একসময় হাওড়া শিল্পে এগিয়ে ছিল। মাঝের সময় পিছিয়ে পড়ে। এখন তা এগিয়ে নিয়ে যাওতার চেষ্টা হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থা এবং পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে হাওড়া জেলা শিল্পন্নয়নে তৈরি আছে। শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিক ও আধিকারিকদের ১০০ শতাংশ টিকাকরণ করা হয়েছে। উৎকর্ষ বাংলার অধীনে যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে ফাউন্ড্রি কাস্টিং অপারেশন এবং জুয়েলারি প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। এদের বিভিন্ন ফাউন্ড্রি জুয়েলারি সংস্থায় পাঠানো হবে।
উলুবেড়িয়ায় চেম্বার অব কমার্স এবং পশুপালন দপ্তরের সহায়তায় শাটলকক উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই কাস্টার বৃদ্ধি উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এদিন মন্ত্রী জানান, একসময় হাওড়াকে শেফিল্ড অফ ইস্ট বলা হত। সেই গরিমা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শাটেলকক, পোলো বল শুধু ভারত নয় সারা বিশ্বে রপ্তানি হতো। এই ক্লাস্টারের উদ্যোগপতিরা এলে সরকার তাদের সাহায্য করবে। কিভাবে সাহায্য করা হবে সে ব্যাপারে এদিন উদ্যোগপতিদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও চন্দ্রনাথবাবু জানান। এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, হাওড়া জেলা ক্ষুদ্র শিল্পে সারা বিশ্বের কাছে শেফিল্ড হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে হাওড়ায় শিল্পের পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়। ২০১১ সালে বাংলার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় শিল্পের অগ্রগতির চেষ্টা করেন। বিভিন্ন পরিকল্পনা নেন। শিল্পপতিরাও এরপর বাংলায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেন। হাওড়া জেলায় আগামী ২ বছরে শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ হতে চলেছে এবং প্রায় ১ লক্ষ ৫২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বেকারদের কর্মসংস্থানের কথা সরকার বারবার ভাবছেন। ৬০০ বছরের পুরনো হাওড়া একসময় অপরিকল্পিত শহর ছিল। ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে গেটওয়ে হাওড়া শহর তার অতীতের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে আগামী দিনে আরও উন্নতি করবে। এদিন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সার্বিক উন্নয়ন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস তিনি নিয়েছেন। ৬০০ বছরের প্রাচীন শহর হাওড়াকে একসময় মিনি শেফিল্ড বলা হতো। আজ হাওড়াকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস মুখ্যমন্ত্রী নিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা শিল্পোদ্যোগীরা এখানে এগিয়ে আসুন। শিল্পের অনুকূল পরিবেশ এখানে রয়েছে। শিল্প করার ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। যা যা পরিকাঠামো এখানে দরকার সব ব্যবস্থা করা হবে। শিল্প প্রসারে মুখ্যমন্ত্রী কোনও আপস করবেন না। হাওড়া আগামী দিনে পূর্ণাঙ্গ শেফিল্ডের রূপ পাবে। আরও শিল্পপতিরা এখানে এগিয়ে আসবেন। মমতার নেতৃত্বে বাংলা বিশ্ব বাংলায় রূপান্তরিত হবে। উল্লেখ্য, হাওড়ায় অনুষ্ঠিত এদিনের সিনার্জিতে অন্যান্যদের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো, রাজ্যের মুখ্যসচিব ডাঃ এইচ কে দ্বিবেদী, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজেশ সিনহা, হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর, গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায়, পুর প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারপার্সন ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী সহ জেলার বিধায়করা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct