সঞ্জীব মল্লিক,বাঁকুড়া,আপনজন: ভোটের সময় শাসক থেকে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলি একটু বেশি সহানুভূতিশীল হয় এমন অভিযোগ করে থাকেন অনেকেই। আর সেই ভোট যদি হয়ে থাকে বিধানসভা ভোটের মতো রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লড়াই সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে নারাজ নয় কেউই। ভোটের হিসেব নিকেশ মাথায় রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও নেমে পড়ে রাজনীতির ময়দানে। প্রাধান্য দেওয়া হয় বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু থেকে জাতিগত আবেগ এমন কি ধর্মীয় আবেগ কেও। আর এ রাজ্যের সেই ইস্যুর অন্যতম ইস্যু হল এরাজ্যের আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক। রাজ্যের জঙ্গল মহল তো বটেই, বীরভূম, হুগলি, বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী মানুষের বসবাস রয়েছে। কাজেই ভোটকে নিজেদের দিকে রাখতে মরিয়া রাজ্যের শাসক থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। আর সে কথা মাথায় রেখেই চলে বিভিন্ন কর্মসূচী, প্রাধান্য দেওয়া হয় আদিবাসী মানুষের আবেগকে, সাহায্যে নামে দেওয়া হয় প্রতিশ্রুতি, কিন্তু ভোট পরবর্তী সময়ে তা না কি লক্ষ্য করা যায়নি, এমনটাই অভিযোগ অনেকের। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে সেই ছবিটা যেন কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঁকুড়া সফরে এলেন ভারতের গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ, বাঁকুড়ায় এসে একটি ‘মূর্তিতে’ মালা দিলেন যা বিরসা মুন্ডার মূর্তি বলেই দাবী বিজেপির। পাশাপাশি অবশ্য সেই সঙ্গে সেখানে রাখা বীরসা মুন্ডার ছবিতেও মালা দেন অমিত শাহ। পরের দিনই ঠিক সেখানেই উপস্থিত হয় শাসক দলের মন্ত্রী বিধায়ক থেকে দলীয় কর্মীরা। ছিলেন তৎকালীন জেলার এক মন্ত্রী,জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ বিভিন্ন নেতৃত্ব এবং দলীয় কর্মীরা। গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করা হল সেই চত্বর যেখানে অমিত শাহ শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা আদিবাসী দের ভগবান তুল্য বীরসা মুন্ডাকে। সেখানে হাজির করানো হয়েছিল বীরসা মুন্ডার বংশধরদের ও! তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবী করা হল ওই মূর্তি আসলে বীরসা মুন্ডা মূর্তিই নয়, একজন শিকারী মানুষের মূর্তি। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় সেখানে বীরসা মুন্ডার মূর্তিও বসানো হবে তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য। তবে তারপর অবশ্য গড়িয়েছে অনেক জল, রাজ্যের কুর্শিতে বিপুল জনাদেশ নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় বসেছে তৃণমূল, তবে আজো বসেনি বীরসা মুন্ডার মূর্তি। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি ভোটের আগে শুধুই কি আদিবাসী আবেগকে করা হয়েছে ব্যবহার?
তবে শুধু এখানেই শেষ নয়। গত ২০২০ এর নভেম্বরে বাঁকুড়ার চতুর্ডিহি গ্রামে আদিবাসী ব্যাক্তি বিভীষণ হাঁসদার বাড়ির মাটির দাওয়াতে পাত পেড়ে মধ্যাহ্ণ ভোজন সারেন ভারতবর্ষের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ দিলীপ ঘোষ, বাঁকুড়ার সাংসদ ডাঃ সুভাষ সরকার এবং অনেকেই। ভোজন শেষে আদিবাসী ব্যাক্তি বিভীষণ হাঁসদা অমিত শাহকে জানান তার মেয়ের শারীরিক অসুস্থতার কথা। খোদ দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আশ্বাস দেন দিল্লীর এইমস্ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে তার মেয়ের। তবে পিছিয়ে থাকতে নারাজ শাসক তৃণমূল শিবিরও পরে তারাও সেখানে হাজির হন। তাঁরাও সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানার বিভীষণ হাঁসদার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। এমন চিকিৎসার প্রয়োজনে যে কোন সময় তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যও বলা হয়। সেই মতো অবশ্য প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু দিন মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্যও পেয়েছেন বিভীষণ বাবু। তবে দিন যতই গড়িয়েছে তা ততই নাকি কমেছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে সবই রাজনীতি লাভ ক্ষতির হিসাব না প্রকৃতই পাশে থাকার বার্তা?
যদিও শাসক তৃণমূলের দাবি, তৃণমূলের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহন কর্মাধ্যক্ষ শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আমাদের দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় আদিবাসী সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে তাদের জন্য সবরকম সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করেছেন,বিরোধী দল ভোটে আগে পৌঁছেছিল তাদের নামে অপপ্রচার চালালেও শেষমেষ আদিবাসী ভাই-বোনেরা কিন্তু তাদের কথা বিশ্বাস করেনি।
অন্য দিকে বিজেপির দাবী করেছে বাঁকুড়ার বিধায়ক নীলাদ্রী শেখর দানা জানান,”পশ্চিমবঙ্গের শুধু রাজনীতির পালাবদল ঘটে,মানুষের জীবনে কোন পালাবদল ঘটে না,একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিল জঙ্গলমহল হাসছে,এখন সেখানে গেলে বোঝা যাবে কি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলমহল”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct