আপনজন ডেস্ক: স্বাধীনোত্তর বাংলায় বাংলা সাহিত্যে আবদুল আজীজ আল-আমানের সাহিত্য সম্ভার এক অপরিহার্য সম্পদ, এই মূল্যায়নটি উঠে আসে গত ১১ ডিসেম্বর 'বাংলার জনরব' আয়োজিত আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে। এদিনের প্রাঞ্জল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক হিস্ট্রি এ্যান্ড কালচারের বিভাগীয় প্রধান প্রোফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার স্বনামধন্য অধ্যাপক সাইফুল্লাহ সামীম এবং আবদুল আজীজ আল-আমানের স্নেহধন্য ব্যক্তি বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার শেখ আব্দুল্লাহ সা'দী।
আলোচনার শুরুতে আমন্ত্রিত বক্তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন বাংলার জনরবের মুখ্য সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলাম। এরপর বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক তথা কথাশিল্পী সেখ আব্দুল মান্নানের পরিচালনায় বক্তারা আবদুল আজীজ আল আমানের সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ তাঁর বিদগ্ধ আলোচনায় দুই বাংলায় আব্দুল আজীজ আল-আমানের সাহিত্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে খেদ প্রকাশ করে বলেন, আজকাল মিডিয়ার যুগে তাঁর সাহিত্য সম্ভার সহজলভ্য নয়। যা গুগলে আপলোড থাকা দরকার ছিল। বাংলার জনরব আয়োজিত এহেন অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি দাবি রাখেন যাতে আগামীতে আবদুল আজীজ আল-আমানের দুষ্প্রাপ্য সাহিত্য সহজলভ্য হয় তার সুব্যবস্থা করার। তাঁর এই দাবি প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা অধ্যাপক সাইফুল্লাহ সামীম আবদুল আজীজ আল-আমানের সাহিত্য ও তাঁর অনবদ্য 'হরফ প্রকাশনী' এর ইতিবাচক ভূমিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে কয়েকটি আশার কথা শোনান। তিনি বলেন আজীজ সাহেবের সুযোগ্য পুত্র তাঁর পিতার সমগ্র সাহিত্য সম্ভার পুনরোদ্ধার করে তা নতুন করে সঙ্কলিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে সঞ্চালক আব্দুল মান্নান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সংস্কৃতি সংসদ'-এর অন্যতম উদ্গাতা সাইফুল্লাহ সাহেবকে অনুরোধ করেন যে কিভাবে আবদুল আজীজ আল-আমানের সাহিত্য বেশি বেশি করে পাঠকের কাছে পৌছে দেওয়া যায় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের। এই অনুরোধের সপক্ষে সাইফুল্লাহ সাহেব জানান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁরই এক ছাত্র ইতিমধ্যে আবদুল আজীজ আল-আমানকে নিয়ে গবেষণা করছেন, যা প্রায় সম্পন্নের পথে। খুব শিঘ্রই ওই গবেষণা পত্র গ্রন্থাকারে প্রকাশিত পাবে। আর ওই গ্রন্থটি প্রকাশ পেল আবদুল আজীজ আল-আমান সাহেবকে জানার এবং চেনানো পথ আরো সুগম হবে।
প্রাজ্ঞ কবি গীতিকার সেখ আব্দুল্লাহ সা'দী তাঁর বক্তব্যে আবদুল আজীজ আল-আমানের সাথে তাঁর পরিচয়কে কেন্দ্র করে কিছু মূল্যবান স্মৃতি রোমন্থন করে আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান আবদুল আজীজ সম্পাদীত 'গতি' পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক এমদাদুল হক নূরের সৌজন্যেই তিনি আজীজ সাহেবের সাহচর্য লাভ করেছিলেন। একবার আজীজ সাহেব সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ রচনা করে কৃতার্থ হয়েছিলেন বলেও জানান। তিনি বলেন, আজীজ সাহেবের অনুপস্থিতির অনুভূতি তিনি এখনও মর্মে মর্মে অনুভব করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বাংলার জনরবের মুখ্য সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলাম তাঁর কৈশোর জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন ছাত্রাবস্থায় তিনি একবার পয়গম্বর হজরত মুহাম্মদ সা.-এর ওপর বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি ওই প্রতিযোগিতার জন্য সেদিন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মরহুম আজীজ আল-আমান সম্পাদিত ' কাফেলা' পত্রিকা পড়ে। তিনি আরও বলেন, আজীজ আল-আমান শুধু বিদগ্ধ পণ্ডিতই ছিলেন না, তিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমন্বয়ের প্রতীক। তিনি তাঁর হরফ প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলা বেদ, পুরাণ, গীতা, বাইবেল, কুরআন ইত্যাদি প্রকাশ করে সমাজে বৌদ্ধিক সমন্বয়ের পথকে মজবুত করেছেন ।
সাহিত্য সম্পাদক সেখ আব্দুল মান্নান বলেন, মরহুম আবদুল আজীজ আল-আমান আপামর বাঙালির মধ্যে বাংলা সাহিত্য চর্চার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নকে সাকার করে চলেছেন তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি 'নতুন গতি'র সম্পাদক এমদাদুল হক নূর। তিনি বছর বছর তাঁর সম্পাদিত বার্ষিক ঈদ সংকলনে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ লেখক লেখিকাদের তুলে আনার যেভাবে আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তা প্রশংসনীয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct