মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহের প্রশাসনিক সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা তথা বাংলা জানা জরুরী বা আবশ্যক বলে ঘোষণা করেন। আমাদের রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা! এ বিষয়টি আরো আগেই কার্যকরী হলে বেশি ভালো হতো বলে মনে হয়। যে অঞ্চলে একজন চাকুরীজীবি চাকুরী করে থাকেন, সে যে বিভাগেই হোক না কেন সে অঞ্চলের মানুষের ভাষা বুঝতে না পারলে কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে লিখেছেন মহঃ মোসাররাফ হোসেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মালদহের প্রশাসনিক সভা
থেকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা তথা বাংলা জানা জরুরী বা আবশ্যক বলে ঘোষণা করেন। আমাদের রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা বাংলা! আঞ্চলিক তথা বাংলা ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে কবি, প্রাজ্ঞ দার্শনিক ও মনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য এই প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম’। ভাষার মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাওয়া-পাওয়া সবকিছুরই প্রকাশ মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। একজন শিশু মায়ের মুখের ভাষা থেকে ভাষা জ্ঞান শিখে থাকে। সেই জন্য মায়ের কোলেই শিশুর প্রথম বিদ্যালয় বলা হয়। ভাষা একটি স্পর্শ কাতর বিষয়, বিশেষত আঞ্চলিক ভাষা তথা মনের ভাষা। কারণ তা মুখের ভাষা। মুখের ভাষা কেউ কেড়ে নিলে, সেটা ভীষণ মর্মান্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, আঞ্চলিক তথা বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করেই শুধুমাত্র একটি দেশ তথা ‘বাংলাদেশ’ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় তথা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’র জন্ম। তাই সব দিক বিচার করে মানুষের মুখের ভাষা যে কতটা কার্যকরী এবং জরুরি;সেই সঙ্গে স্পর্শকাতর একটি বিষয়,তা সহজেই অনুমেয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে আঞ্চলিক ভাষা তথা বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি আরো আগেই কার্যকরী হলে বেশি ভালো হতো বলে মনে করি। যে অঞ্চলে একজন চাকুরীজীবি চাকুরী করে থাকেন, সে যে বিভাগেই হোক না কেন সে অঞ্চলের মানুষের ভাষা বুঝতে না পারলে কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধা হয়। কেননা কর্মক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা হলে কাজ থমকে যায় বা কাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়। ফলে সেই অঞ্চল বা সেই রাজ্য, এমনকি গোটা দেশ সব দিক থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ কোনও একটি বিশেষ জাতি বা বিশেষ গোষ্ঠী শিক্ষা ও কর্ম থেকে বঞ্চিত হলে একটি দেশ সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে যায় প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যখন মোগলরা ভারতবর্ষকে শাসন করেছিল, তখন অফিস-আদালতের ভাষা ছিল আরবি-ফারসি আর ইংরেজ শাসনামলে অফিস-আদালতের ভাষা করা হয়েছিল ইংরেজিকে।কোন ভাবেই আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না! পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতির বা গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা আছে। একটি আঞ্চলিক ভাষা একটি শিশুর ব্যক্তিগত,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে।একটি শিশুর প্রথমে তার মাতৃভাষায় মাধ্যমে মনের ভাব আদান প্রদান করে থাকে এবং ধীরে ধীরে বড় হয় শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নীত হলে মাতৃভাষার সাথে সাথে অন্যান্য ভাষার সাথে তার পরিচয় হয় এবং পারদর্শিতা লাভ করে।মাতৃভাষা মায়ের মুখ থেকে পাওয়া ভাষা। এ যেনো মায়ের কাছ থেকে পাওয়া অমৃত সুধা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা সাথে জড়িয়ে থাকে আবেগ। তাই মাতৃভাষার একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।একজন মানুষের সাথে আমৃত্যু জড়িয়ে থাকে মাতৃভাষা। মাতৃভাষা যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষের আনুষ্ঠানিকতা, জীবনচর্যা,কর্মক্ষেত্র সবকিছুতেই আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।পিতা-মাতা তাঁর ছেলে মেয়ের সাথে মাতৃভাষায় কথা বলে। সেই জন্য মাতৃভাষার গুরুত্ব এত বেশি। তাই বেশি বেশি মাতৃভাষা অধ্যায়ন ও চর্চা সামগ্রিকভাবে একজন মানুষকে অধিকতর ও দক্ষ করে তোলে। মাতৃভাষায় দক্ষতা অধিক থাকলে, একজন মানুষ অন্য ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন খুব সহজেই।একজন মানুষ যত বেশি মাতৃভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠে, ততই তার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল বিস্তার ও পরিচিতি লাভ করে। ফলে অন্যান্য ভাষার সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভাষা আদান-প্রদান এবং ভাব বিনিময় তার কাছে সহজ থেকে সহজতর হয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।তাই সব দিক থেকেই আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই সঙ্গে চাকরি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা জানাটা যে কত জরুরী তা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা থেকেই বোঝা যায়। তাই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই! তবে শুধু ঘোষণা করলেই হবে না। কত দ্রুত এই পদক্ষেপ কার্যকারী হচ্ছে, সেটাও দেখার বিষয়! কর্মক্ষেত্রা আঞ্চলিক ভাষার অধিক গুরুত্ব পেলে সামগ্রিকভাবে সমাজ উপকৃত হবে একথা বলাই বাহুল্য।
লেখক বাংলা বিভাগের শিক্ষক,
আইসিআর হাইমাদ্রাসা (উচ্চ মাধ্যমিক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct