সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় তা হল- মোবাইল ফোন নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যস্ততা। সারাদিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে। তারা প্রায়ই ভুলে গেছে খোলা মাঠে খেলাধুলা করা, প্রকৃতির মুক্ত বাতাসে পাখির মতো এক প্রান্তর থেকে অপর প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে প্রভৃতি। বর্তমান সময়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার সময় টুকু ছাড়া বাকি সময়টা মোবাইল নিয়েই কাটিয়ে দেয়। আবারও দেখা যায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনার সময়টাতেও মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তা নিয়ে লিখেছেন জয়দেব বেরা।
সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি
সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় তা হল-
মোবাইল ফোন নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যস্ততা। সারাদিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে। তারা প্রায়ই ভুলে গেছে খোলা মাঠে খেলাধুলা করা, বাড়ির দাদু- ঠাকুমারদের কাছ থেকে গল্প শোনা, প্রকৃতির মুক্ত বাতাসে পাখির মতো এক প্রান্তর থেকে অপর প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে, গাছ লাগানো, বাগান করা, সকালে উঠে যোগা করে সূর্য্যি মামার দর্শন করা প্রভৃতি। বর্তমান সময়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার সময় টুকু ছাড়া বাকি সময়টা মোবাইল নিয়েই কাটিয়ে দেয়। আবারও দেখা যায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনার সময়টাতেও মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। যদিও কোভিড কালে প্রায় দুইবছর ধরে তাদেরকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনেই ক্লাস করতে হতো। কারণ এইসময় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কিন্তু এই দুই বছরের অভ্যাস ছাত্র-ছাত্রীদের এতটাই গ্রাস করেছে যে তারা মোবাইল ব্যতীত থাকতে পারছে না। এই মোবাইল ফোনের নেশায় সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে আছে। এই মোবাইল ফোন তাদের পড়াশোনার কাজে লাগছে সেটি যেমন ঠিক; আবার অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে সেটি সিংহভাগ সত্য। ছাত্র-ছাত্রীরা বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন গেম, টিকটকের মতো বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপেতে সারাক্ষণ মেতে রয়েছে। যা তাদের সামাজিক- মানসিক বিকাশে এবং স্বাস্থ্যের পক্ষেও দিন দিন খুবই ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে আসা প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে ১জন শিশু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ে। মোবাইল ব্যবহারের দরুন ছাত্র-ছাত্রীদের সামাজিক-মানসিক এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির পাশাপাশি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎও ক্রমে ক্রমে বিনষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম, একজন দশম শ্রেণীর ছাত্রী এক নাগাড়ে মোবাইল ব্যবহার করার জন্য তার মা তাকে শাসন করেছিল। তার জন্যই ঐ মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল।এছাড়াও দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে মোবাইল নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করছে, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় বাবাকে খুনও পর্যন্ত করে দিচ্ছে। সত্যি ভাবতে অবাক লাগছে আগামী দিনে এ কোন ধরনের যুব সমাজ তৈরি হচ্ছে। স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নের সেই যুব সমাজ তথা ছাত্র সমাজ আজ এইরকম ভাবে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তাই সমস্ত অভিভাবক-অভিভাবিকাদের কে বলবো আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে মোবাইল ব্যবহার করতে নিষেধ করুন। পড়াশোনার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটাই ব্যবহার করতে দিন। প্রথমে খুব বেশি শাসন না করে ভালো ভাবে বাড়ির ছেলে-মেয়েদেরকে বুঝিয়ে বলুন। তাতে কাজ না হলে যতটা শাসনের প্রয়োজন ততটুকু শাসন করুন। এছাড়াও সন্তানদের সময় দিন, তাদেরকে বাড়ির বাইরে খোলা মাঠে খেলতে পাঠান,যোগা করতে বলুন, তাদের সাথে প্রত্যেকদিন কথা বলুন ও তাদের সমস্ত খবর নিন, তাদেরকে ফোন না দিয়ে হাতে বই (কবিতা, গল্প, খেলা, জি.কে, হাসির বই প্রভৃতি শিক্ষা মূলক বই) দিন বেশি করে পড়তে। এক কথায় আপনারা নিজেরাই নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে প্রাথমিক ভাবে কাউন্সেলিং করান। মাঝে মাঝে ভালো কোনো কাউন্সেলর এর কাছেও নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও অনুরোধ জানাই আপনারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মোবাইল দেখতে পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিন এবং তাদেরকে মোবাইল ব্যবহার করতে নিষেধ করুন। এই ভাবে বাড়ির প্রত্যেক অভিভাবক-অভিভাবিকারা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি এই বিষয়ে একটু সচেতন হন তাহলেই দেখবেন আবার সেই স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ছাত্র সমাজ তথা যুব সমাজ গড়ে উঠবে। এবং তাদের সামাজিক-মানসিক বিকাশ এবং ভবিষ্যতও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
(লেখক সমাজতত্ত্ব ও সমাজকর্ম বিষয়ক গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct