কুতুবউদ্দিন মোল্লা,ক্যানিং,আপনজন: ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী শহর ক্যানিং। একদা বাণিজ্যের জন্য ব্রিটিশ আমলে প্রাণ কেন্দ্রের রুপ নিয়েছিল ক্যানিং শহর।আর সেই কারণেই বিট্রিশ আমলেই পৌরসভার তকমা পেয়েছিল।তবে দেশ স্বাধীনের অনেক আগেই সেই পৌরসভা তকমা কোন এক অজ্ঞাত কারণে হারিয়ে ফেলেছে। পৌরসভা তকমা হারালেও ক্যানিং তার নিজস্বতায় আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার এবং মাছের জন্য সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে কদর ও বহর বাড়লেও বর্তমানে বিট্রিশ আমলের ক্যানিং শহরের ঐতিহ্য চাপা পড়ছে প্লাষ্টিক আর ময়লা আবর্জনায়।
ক্যানিং শহর পৌরসভার তকমা হারিয়ে পঞ্চায়েতের অধীনস্ত। মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্যানিং শহরের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার পাহাড় জমছে। আর সেই ময়লা আবর্জনা থেকেই দুষণ ছড়াচ্ছে সমগ্র ক্যানিং শহরে।যার জেরে অতিষ্ট মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত নাগরিক সহ নিত্য যাতায়াত কারী লক্ষ লক্ষ যাত্রী সাধারণ এবং দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা।
মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সেখানে সেখানে প্লাষ্টিক ময়লা আবর্জনা ফেলছেন সাধারণ মানুষ।এমনকি রেহাই মিলছে না খোদ মহকুমা শাসকের দফতর সংলগ্ন রাস্তা, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর,ক্যানিং সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র,মাছ ও সবজি বাজার,পথের সাথী এমনকি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অবস্থিত কোভিড হাসপাতাল লাগোয়া যাতায়াতের রাস্তা। ফলে সুন্দরবনের প্রাণকেন্দ্র ক্যানিং শহর যে দুষণে ভরপুর তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
উল্লেখ্য এই মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নির্দিষ্টভাবে ময়লা ফেলার কোন জায়গা নেই। এলাকাবাসীদের দূষণের হাত থেকে এবং প্লাষ্টিক ময়লা আবর্জনা থেকে মুক্তি দিতে মাতলা ১ পঞ্চায়েত পৌরসভার ধাঁচে ময়লা পরিষ্কারের জন্য ৫ টি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত শহরের অলিগলিতে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে। নির্দিষ্ট ভাবে ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় সেই সমস্ত ময়লা আবর্জনা মাতলা নদীর চরে ফেলা হয়। সেখানেও আবর্জনা স্তুপের পাহাড় জমেছে। জমেছে ক্যানিং মাছ-সবজি বাজার, কোভিড হাসপাতাল, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সামনে যাতায়াতের ঝাঁ চকচকে ঢালাইয়ের তৈরী কংক্রিটের রাস্তার দুপাশে এবং রাস্তার উপরে। ঢালাই রাস্তার উপর এতোটাই ময়লা আবর্জনা জমা হয়েছে যে রাস্তা রয়েছে কি না তা বোঝার অবকাশ নেই। আর সেই ময়লা আবর্জনার উপর কুকুর,শূকর,গরু সহ বিভিন্ন কাক পক্ষীদের অবাধ বিচরণ।অবাধ বিচরণের জন্য সেই সমস্ত ময়লা আবর্জনা প্রকাশ্যে জনবহুল রাস্তার উপর ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে দূষণের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে চলেছে।কার্যত প্লাস্টিক ময়লা আবর্জনার কারণে ক্যানিং শহর তার মুখ ঢেকে ফেলছে ক্রমাগত।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ ক্যানিং শহরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় চরম অবক্ষয়ের পথে ঐতিহ্যবাহী ক্যানিং শহর। ময়লা আবর্জনা থেকে কবে মুক্ত হবে ক্যানিং শহর?এমন প্রশ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। তবে এ বিষয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হরেন ঘোড়ুই। ইতিমধ্যে ক্যানিং শহরকে স্বচ্ছ নির্মল শহর গড়তে তৎপর হয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন ‘‘এ বিষয়ে মাতলা নদীর চরের বেশকিছু জায়গা চিহ্নিত করে স্থায়ী ভাবে ভ্যাট তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে সলিড ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে এই বর্জ্য নিষ্কাশন করা যায়।ইতিমধ্যে সেই প্রোপোজাল ক্যানিং ১ বিডিও ও মহকুমা শাসককে জানানো হয়েছে।’
অন্যদিকে ক্যানিং ১ বিডিও শুভঙ্কর দাস জানিয়েছেন ‘মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নিকাশী ব্যবস্থার সমস্যা থাকায় ময়লা জমছে ঠিকই,তবে পঞ্চায়েত সেগুলো তৎক্ষণাত পরিষ্কার করে ফেলছে।তা ছাড়াও পঞ্চায়েতের তরফে একটি প্ল্যান জমা দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে।কি ভাবে ওই সমস্ত ময়লা আবর্জনা সঠিক পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা যায় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা যায় সেটা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct