সুখ
শংকর সাহা
_________
বিয়ের তিনমাস না যেতেই বাপের বাড়িতে বিন্নিকে রেখে যায় তার স্বামী। বলে যায় ভাদ্রমাস শেষ হলেই নিয়ে যাবে। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিন্নির কোনো খবর নেয়না। একদিকে বিবাহিত মেয়ে বাপের বাড়িতে এসে থাকে এমন কটুক্তি কম শুনতে হয়নি বিন্নির মা সন্ধ্যাদেবীকে। স্বামী মারা যাবার পর থেকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খুব কষ্টে বিন্নিকে মানুষ করেছেন সন্ধ্যাদেবী। সকলের কাছে ধার দেনা করে মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিলেও হয়তো সুখটুকু তার সহ্য হলনা।
সেদিন মার গলা জড়িয়ে বিন্নি বললে ওঠে,” তাতে কি, না হয় তোমার কাছেই থেকে যাব মা।বিয়ের আগেও এমনই তো থাকতাম আমি” সদ্য কৌশরের গন্ডী অতিক্রম করা বিন্নিকে বোঝাতে পারেনা সন্ধ্যাদেবী। “ এসুখ যে সে সুখ নয়রে মা?”
মা মুখুজ্জ্যেবাড়িতে কাজে গেলে বিন্নি ঘরের থেকে তেমন বের হয়না। বিন্নি বুঝতে পারে, তাঁর শরীরের মাংসটাই যতো বিপত্তির কারণ। এবার শরীরের দিকে কিছুটা উদাসীন হতে থাকে বিন্নি। বিকেল পড়তেই মুখুজ্জ্যেবাড়ি থেকে কাজ সেরে ভাত নিয়ে আসে বিন্নির মা। বারান্দায় মাদুর পেতে মা-মেয়ে খেতে বসে। বিন্নির পাতে দুমুঠো একটু বেশি ভাত তুলে দিতেই মার হাত চেপে বিন্নি বলে, “ আর ভাত দিওনা মা।
বেশি খেলে তোমার মেয়ে যে সুন্দরী হয়ে উঠবে আরও।গরীবের ঘরে সুন্দর যে হতে নেই মা?”
বিন্নির কথা মা বুঝতে পারে। সন্ধ্যাদেবীর চোখ থেকে জল ঝোরে পড়ে। আসলে মেয়ের সুখই তো মায়ের সুখ!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct