কাশ্মীর মানে ভূস্বর্গ। কাশ্মীর মানে এক উদাস স্বপ্নে ভেসে আনন্দে বিভোর হওয়া। কাশ্মীর মানে সাদা বরফের ঢাকা প্রান্তর, সবুজ ঢাকা অথবা উলঙ্গ উচ্চ পাহাড়। এক দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যভরা স্বর্গ কিন্তু বাস্তবে কাশ্মীর মানে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে আতঙ্ক। সন্ত্রাসীবাদীদের হামলা-মৃত্যু অথবা সীমান্তরক্ষীদের গোলাগুলিতে মৃত্যু। সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদীদের-অনুপ্রবেশকারীদের হামলা, কত শত মায়ের পুত্র, কত স্ত্রীর স্বামী, কত পুত্রকন্যার পিতার রক্তাক্ত দেহ অথবা সেনাবাহিনীর এ কে ৪৭-এর গুলির শব্দ। কাশ্মীরের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি পাহাড় পর্বত উপত্যকার চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে এমনই আতঙ্ক। সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকা ঘুরে এসে নিজের সরেজমিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এস এম শামসুদ্দিন। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
সমতল ভূমির উপর প্রশস্ত পথ। আসে পাশে গ্রামের একতলা দোতলা বাড়ি দেখে বোঝার উপায় নেই কাশ্মীরের পথ। শুধু সামনে সুদূরে আকাশের দিকে দেখলে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি দেখলে বোঝা যায় না আমরা বাংলায় নেই বাইরে আছি ।
কাশ্মিরী পোশাকে কাশ্মিরীদের আনাগোনা, মাঝে মাঝেই ঝাও পাইন দেবদারু নানান গাছের বন। আর ধান ক্ষেতের ফাঁকা মাঠ। শ্রী নগরের কাছাকাছি প্রায় ড্রাইভার সুজন চৌধুরী বলল - ইয়ে জ জামিন আপ দেখ রেহে হায় ইয়ে সব জাফরণ কি ক্ষেত হ্যায়।
জাফরান অতি মূল্যবান ফুল থেকে গুলাবি ধরণের এক ফুল শুকিয়ে জাফরান তৈরি হয়। যেগুলো সারা বিশ্বের বাজারে রপ্তানি হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় আমদানি হয় বিদেশি মুদ্রা। পুলওয়ামা জেলার লেটপুরা ,পামপুরা এলাকায় হাজার হাজার বিঘা চাষের জমিন ।
মাঝে মাঝে চাষিদের দোকান শোরুম। ইচ্ছে হলো নেমে কিছু নিই। ড্রাইভারকে বললাম রুকিয়ে চায়ে পি লিজিয়ে ।
বলল -নেহি যাব ওয়াপাস জায়েঙ্গে তাব খরিদ লেনা ,অব রুখনা ঠিক নেহি ।
বেশ কয়েকঘন্টা যাওয়ার পর দেখা গেল দূর থেকে বিশাল পাহাড় বেষ্টিত শহর। রাস্তার পাশ দিয়ে চলেগেছে অগভীর নদী। নদীর তীর ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে আমরা পাহাড়ের কাছাকাছি প্রায় এক পোল পার করে শহরের ভিতরে পাহাড়ের পায়ের নিচ দিয়ে ব্যস্ত জনবহুল শহরের আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে চলেছি। ড্রাইভার বললো হাম আগায়া আউর ১০-১৫ মিনিট কি আন্দার পৌঁছ জায়েঙ্গে হোটেল। গাড়ি তিনটি পর পর গিয়ে থামলো এক ঝিলের ধারে। তখন প্রায় সন্ধ্যা। মাগরিবের আজান শুনতে পাচ্ছি অদূরে কোনও মসজিদ থেকে। মাল পত্র লাগেজ নিয়ে আমরা হোটেল ভিক্টরিয়ার গেটে প্রবেশ করলাম। হোটেল আগেই বুক ছিল। যে যাঁর জন্য নির্দিষ্ট রুমে লাগেজ নিয়ে প্রবেশ করলাম। রাতে ট্রেনের ও তারপর দীর্ঘ পথ বাসের ক্লান্তি, হোটেলের মনোরম ঘর নরম বিছানা দেখে শরীর যেন আহ্লাদে এলিয়ে এলো। আর শরীর বয় না। তর সয় না। শীতের প্রকোপ কাঁপুনি এলো। স্নানের বিশেষ তাগিদ থাকলেও শীতের প্রকোপে সে ইচ্ছার মৃত্যু হল। দায়সারাভাবে হাত মুখ ধুয়ে শীতের কাপড় পরলাম। ডবল কম্বলের পেটে ঢুকেও সে কাঁপুনি থামতে সময় নিল কিছুক্ষন । চা দিয়ে গেল অমরেশদার সেবক। রাত্রি বাড়ার সঙ্গে বাড়ল শীতের প্রকোপ। টি ভি তে বাংলার খবর দেখলাম কিছুক্ষণ। জম্মু এলাকায় প্রবেশ করতে সব ফোন বন্ধ। কোনও টাওয়ার নেই। একমাত্র পোস্ট পেড কানেকশন নাম্বার ছাড়া সব বন্ধ। সুতারং ফোন আসে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। সবজি ভাজা ডাল ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম প্রথম রাত্রিতেই।
কয়দিন তো আযানের শব্দ শোনা যায়নি। ভোরে ফজরের আজানের শব্দ বরাবরের মতোই আজও ঘুমের বিদায় নিল। দরজা খুলে বাইরে উঁকি মারতে
বোঝা গেল কুয়াশাচ্ছন্ন কাশ্মীরের সকালের দৃশ্য। বাঁকুড়ার তিন যুবক আমাদের রাঁধুনি যুবক বেশ আন্তরিক । সকাল হলেই ওদের বেড টি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। দরজায় ঠুক ঠুক শব্দ। বোঝাই গেল চায়ের আমদানি। চা পান করে বেশ আমেজ এলো। এতক্ষনে ঠান্ডার সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়ে নিয়েছি।
ভিতরে ইনার তারপর প্যান্ট, মাথায় শীতের টুপি পরে বের হয়ে এলাম ।
সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে বিদায় নিচ্ছে হিমেল কুয়াশা। বেশ পরিষ্কার। হোটেলে দরজায় কাশ্মীরি ফেরিওয়ালার জ্যাকেট সোয়েটার টুপি শাল নিয়ে হাজির। কেউ সাইকেলে কেউবা মোটর আবার কেউবা মারুতি ভ্যানে একরাশ নানান রকমের শীতের সামগ্রী নিয়ে হাজির। আমরা মূল দরজা খুলে বার হলাম বাইরে। কাশ্মিরী শাল সোয়েটার জ্যাকেট টুপি নাম মাত্র ৩০- ৭০ হাজার টাকায়। প্রথমে ভাবলাম এত কম দামে কি করে হয়।
সব লিজিয়ে না। দ সাল সে ইধারকা হালাত বহুত খারাব । কোয়ি ঘুমনে ওয়ালা নেহি আয়া। খরিদ্দার ভি নেহি হ্যায়।হাম ক্যাইসে জিয়েঙ্গে ।
খুব মায়া হলো শুনে । সত্যি ৩৭০ নিয়ে বিতর্ক ।কাশ্মীর এমনিতেই অশান্ত ।ভ্রমণে আসা বন্ধ । এদের জীবিকা নির্ভর এই ভ্রমণে আসা মানুষের উপর ভরসা । বেশ কয়েকটা জিনিষ কিনলাম ।আমার দেখাদেখি আরো ও সঙ্গীরা এসে ভিড় হলো ।কেনা বেঞ্চ জমে উঠলো সকাল বেলায় ।
সকালের নাস্তা সেরে আমরা প্রস্তুত হয়ে নিলাম । ড্রাইভার সুজন সিং ,মোহাম্মদ ইমরান ,আরো একজন ।ডাল লেকের পাশেই ঢিল চোঁডা দূরত্বে আমাদের এই হোটেল । আমরা চললাম ডাল লেকের পাশে সুউচ্চ পাহাড় ।আঁকা ব্যাংক পাহাড়ের উপরে মন্দিরে । বেশ উচ্চতা ।পাহাড়ের শিখরে উঠলে দেখা যায় শ্রীনগর শহর ।পাহাড়ের শরীরকেটে উঠা পথ বেয়ে যেখানে গিয়ে বাস থামলো সেখান থেকে মূল মন্দিরে পৌঁছাতে আরও প্রায় ২৫০ টা উঁচু সিঁড়ি উঠতে হবে । আমাদের সঙ্গী হাওড়া পঁচানোনতলার রাহুল ভাই ওর মা আর সন্তোষপুরের সমীর ওর স্ত্রী ও বাকসাডা হাওড়ার অনিল নস্কর ওর স্ত্রী টুম্পা ওরা বেশ উঠে গেল সাহস করেই । আমরা কয়জন পাহাড়ের উপর থেকে বিশাল বিশাল শাল দেবদারু গাছের ফাঁক দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি শ্রী নগর শহর আর ডাল লেকের দৃশ্য ।
কিছুক্ষণ পর ওরা নেমে এলো নীচে । বাস ছাড়ল আমরা এবারে চললাম ডাল লেক ধরে থেকে চাশমে শাহী জলধারা কুয়া শাহীগার্ডেন ও হজরতবাল মসজিদ দেখতে । ৩৬কি মি এলাকা নিয়ে প্রশস্ত বিশাল এলাকা নিয়ে ডাল লেক । অসংখ্য শিকারা ঘুরছে ডাল লেক জুড়ে ।আমরা প্রায় অর্ধেকটা ডাল লেকের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম । মাঝে মাঝে শিকারা নৌকায় কাশ্মিরী শ্রমিক লেকে জমা শ্যাওলা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত । লেকের অর্ধেকটা প্রায় জঞ্জাল শ্যাওলা আবর্জনায় বদ্ধ । আর অর্ধেকে চলছে শিকারা নৌকা ।লেকের পাশে পাশে বন্দুলধারী সেনাদের পাহারা একদণ্ডে দাঁড়িয়ে । বেশ কিছুক্ষণ পরে অর্ধেকটা যাওয়ার পর লেক ছাড়িয়ে আমাদের গাড়ি বজঙ্গলের মাঝে প্রসস্থ রাস্তা পার হয়ে থেমে গেলো এক জায়গায় ।এরপর আউর গাড়ি নেহি জায়গা ,আপ পায়দাল নেহি তো অটো মে যা শাকতে হ্যায়।
অগত্যা আমরা নেমে।হাঁটা শুরু করলাম । একেবারে চড়াই উৎরাই পথ ।একটু হেঁটেই হাঁসফাঁস অবস্থা ।পাশ দিয়ে দুটি ফুটফুটে মেয়েকে তাঁদের মা হেঁটে চলেছে।
ভাগ্নে সাহিল বলল দেখ দেখ কি সুন্দর বাচ্চা ।কেমন গুটি গুটি হাঁটছে
হ্যাঁ তাইতো ।
তোমহারা নাম কিয়া হ্যাঁয়।
ওরা বেশ লাজুকে পিছিয়ে গিয়ে মায়ের অঞ্চল ধরে বাচ্চাটি।
জিজ্ঞাসা করলাম আপ কাহাঁসে আয়া।
হাম কার্গিল সে আয়া ।
ওরে বাবা সেই কার্গিল । যুদ্ধ খ্যাত কার্গিল । নামটা শুনেই কেমন যেন আলাদা এক অনুভূতি নানান প্রশ্ন জাগে মনে । অনেক কিছুই জানতে ইচ্ছে হলো । বাচ্চার সঙ্গে মা ও ওদের দাদিমা এসেছে বেড়াতে কার্গিল থেকে শ্রীনগরে।
আচ্ছা যাব ওহ কার্গিলকা যুদ্ধ হোয়্যাথা তাব আপ দেখা থা।
-মাথা নেড়ে বললো হ্যাঁ।
- আপকা কোযি যান পেহচানকা মউত হুয়া থা ?
-হ্যাঁ , হামারা গাঁও কা কুচ আদমিকা মউত হুয়া থা।
সালমা আর ওর মা কেমন যেন এড়িয়ে এগিয়ে যায় । কার্গিল নাম শুনে ভাগ্নে আর ছোট ছেলে ডি এস এল আর নিয়ে ছবি তোলে ওদের ,ওরা বেশ খুশি হয় ।
বেশ কিছুটা উঠছি । হাঁপিয়ে উঠছি ।ওরা এগিয়ে চলেছে ।একটু ওঠার পর পরই দেখছি বন্দুকধারী সেনার উপস্থিতি ।
নামাসতে অপ কাহাঁসে।বাঙাল ,
বাঙালী ,কোন জেলায় বাড়ি আপনার ,
-নদীয়া জেলার বিষ্ণুপুরে ।
নামটা কি যেন ঠিক স্মরণে আসছে না ।বিষ্ণুপদ কি ঐরকম একটা কিছু ।
-ছোট ছেলের বায়না ওর সঙ্গে একটা ছবি তুলবে ।
- ও বলল না বাবু ,আমরা ডিউটিতে আছি । এই অবস্থায় ছবি তোলা যাবে না।আমরা এগিয়ে গেলাম আরো উৎরাই পথে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা ধরে ।
বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে চাশমে সহি ।
মাথা পিছু কুড়ি টাকা টিকিট কেটে উঠে গেলাম চাশমে সহি বাগানে ।উঁচু পাহাড়ের কোলে ডাল লেখার ধার ঘেঁষে এই বাগানের মাঝে জলের ধরা বয়েই চলেছে । কতশত বছর থেকে কে জানে।তবে মুঘল যুগে তৈরি এই কুয়া ।অত্যন্ত পরিশুদ্ধ জলের এই কুয়ার জলের ধরা । ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু কাশ্মীরের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে দিল্লিতে স্থায়ী বসবাস করলেও পানীয় জলের জন্য এখন থেকে জল নিয়ে যাওয়া হতো বলে শোনা যায় । বেশ ঠান্ডা পরিশুদ্ধ এবং সুপেয় মিষ্টি জল । একটা ছোট্ট গম্বুজ মতো তাঁর ভিতর থেকে জল আসছে ।মসজিদের মিনারের মতো গম্বুজ চারকোনা তারই পেটের ভিতর থেকে অবিরাম বয়ে চলেছে জলের ধারা ।আমরা পান করলাম এবং বোতল ভোরে সঙ্গে নিলাম।
সম্ভবত মুঘল যুগে এই কুয়ার সূচনা ।
কুয়ার মাথায় স্থাপত্যকীর্তি দেখে অন্তত সেটা অনুমান করা যায় ।
আমরা যে ধীরে পায়ে নেমে এলাম যেখানে গাড়ি অপেক্ষা করছিল সেখানে।
আমাদের ড্রাইভার জম্মুবাসী ইমরান কিচলু।আমাদের সকলকে নিয়ে চললেন “নিশাত বাগে “।বাদশাহ জাহাঙ্গীরের পত্নী নূরজাহানের ছোট ভাই ছিলেন মীর্জা এসফ ঝা তত্বাবধানে ১৬৩৪ সালে তৈরি হয় এই নিশাত বাগ ।ডাল লেকের পাশেই এই নিশাত বাগ।বাদশাহ শাহজাহান দিল্লীর মসনদে বসার পরই এই বাগ তথা বাগানটি নির্মিত হয়।
এই বাগানের গেটে লেখা আছে ইংরেজী হরফে ও পার্সি ভাষায় ।
“দার গোল নাসিম গুফত সালিশ
গুলজার নিশাত ওয়া ইস দিল -হা
১৬৩৪।
এর কি অর্থ ? আমার জ্ঞান ভাণ্ডারে ডুব দিয়ে উদ্ধার করতে পারলাম না।
শিক্ষিতের মত পড়ে গেলাম বটে কিন্তু জ্ঞানীর মতো জ্ঞান অর্জনে হাঁদার মতো তাকিয়ে থাকলাম - কিছুই বুঝলাম না ।
সাজানো গোছানো অনিন্দ সুন্দর বাগান ।কাশ্মিরী দিনমজুর মালিরা ফুলগাছ লাগানোর জন্য মাটি তৈরিতে ব্যস্ত ।
আসসালামুআলাইকুম নাম কেয়া হায় জনাব ।
-একমুহূর্ত মুখটা তুলে বলল আশফাক দারবি।
- সিড খারিদনা হ্যায়।
-নেহি ।
-কায়সী হায় আপ সব ।
- জি বাস ,আলহামদুলিল্লাহ।
-কোয়ি মুসিবত ।পুলিশ মিলিটারী কা দাবাও এইসা কুছ মেশাল।
-নেহি সাব হাম সব এম আদমী ।আইসা কুছ নেহি ।বুঝলাম এড়িয়ে যেতে চায় ।
একটা দোষ বারো বছরের যুবক চাবির রিং বিক্রি করছে ,কাছে ডাকলাম ।মুখটা ওর শুকিয়ে গেছে ।হয়তো বিক্রি ঠিক হয়নি ।
নাম কেয়া
সূর্বন সিং।
আপ কাঁহাসে ।
হাম গুজরাট সে।
অব লক ডাউন চাল রাহা হায়।
-তিন মাহিনা ইধার রেহেন্গে ফির চলা জায়েঙ্গে।
ক্লাস সিক্সের ছাত্র সে ।
বেশ কয়েকটা চাবির রিং নিলাম ।হয়তো প্রয়োজন ছিলোনা কিন্তু ওর কিছুটা সাহায্য হবে ভেবে নিলাম।
তিন মাস এখানে বরফে ঢাকা থাকে।বরফ পড়ে রাস্তা বন্ধ জনজীবন স্তব্ধ হয় ।স্কুল কলেজ বন্ধ
কিছুক্ষণ গাছের নিচে বসে চলে এলাম।
ইমরান ভাই গাড়ি ঘুরিয়ে এবারে চললাম হজরত বাল মসজিদ দেখতে ।
কাশ্মীরের হজরত বাল মসজিদ এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।ঐতিহাসিক ও জায়গা বটে । একসময় সন্ত্রাসবাদীদের বিস্ফোরণের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল ।
স্বাভাবিকভাবেই এই মসজিদে যাওয়ার আগ্রহ ছিলই ।আমরা যখন মসজিদে গেলাম তখন আসর প্রায় ।ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেউ বসে আছেন ।মসজিদের গেটের পাশে মসজিদের জন্য দান নেওয়ার অফিস ।ভিতরে কেউ নামাজ পড়ছেন কেউ তসবিহ পড়ছেন ।আমি ভাগ্নে ছোট পুত্র বোনের জামাই ডাক্তার মেহবুব ও রাহুল ভাই জুতো খুলে ভিতরে প্রবেশ করলাম । বিশাল প্রশস্ত মসজিদ ।মূল মসজিদের গেটের পাশে রাখা একটা কাঁচের ভিতরে হাতের লেখা আল কোরআন ।পাশে লেখা বোর্ড।কি লেখা এখানে ।দেখলাম বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের নিজের হাতের লেখা আল কোরআন সঙ্গে পার্সি ভাষায় কোরআনের অনুবাদ ।ছবি নিয়ে পুলিশের উর্দিধারী গার্ডকে নবী সা এর দাড়ি মোবারক দেখার ইচ্ছা জানাতে বললেন প্রতি বছর নবী দিবসের আগের দিন থেকে পরপর তিনদিন দেখানো হয় ।আর কয়দিন পরই নবী দিবস ।হিসেব করে দেখলাম আমাদের ভ্রমণের তালিকানুসারে আমরা তখন থাকবো গুলমার্গে ।যেটা এখন থেকে প্রায় ১৫০ কি মি দূরে ।হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় কি ।একদিন পর শুক্রবার ।ঠিক করলাম শুক্রবার জুম্মার নামাজ এখানে এসে পড়ব ।এই পরিকল্পনা করে বের হয়ে ফিরে এলাম হোটেল ভিক্টরিয়ায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct