বিহারে বিজেপি ও জেডিইউয়ের এবং হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ মমতার হাত ধরে তৃণমূলে
আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবাংলায় যখন বিজেপি নেতাদের দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে, তখন অন্য রাজ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বকে সফলভাবে ভাঙিয়ে দেশজুড়ে শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মাস কয়েক আগে যে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরে গিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করার পর জানিয়েছিলেন, বিজেপিকে হঠাতে বিরোধী ঐক্য জোরদার করতে হবে। বিজেপি বিরোধী শক্তি জোরদার করতে দু মাস অন্তর দিল্লির আসার কথাও জানিয়েছিলেন। মমতা নিয়মিত এখন দিল্লি সফর করছেন। কিন্তু বিজেপি শক্তির ঐক্যের বদলে ফাটল ধরিয়ে চলেছেন একের পর এক রাজ্যে।
অসমের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবকে তৃণমূলে যোগ করিয়ে অসম কংগ্রেস ভাঙনের যে সূত্রপাত করেছিল তৃণমূল, সেই প্রবণতা অন্যান্য রাজ্যেও দেখা যাচ্ছে। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের ছায়াতলে এসেছেন। তার সঙ্গে আরও বহু নেতাও যোগ দিয়েছেন। একইভাবে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের এক ব্রাহ্মণ নেতা যোগ দিয়েছেন ঘাসফুলে। এভাবে কংগ্রেস নেতাদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় উজ্জীবিত হয়ে পড়ে তৃণমূল। দিকে দিকে অন্য রাজ্যে জোরকদমে প্রসারিত হতে চলেছে তৃণমূল। তবে তৃণমূলের এই দল ভাঙানো নিয়ে প্রবল কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে অধীর চৌধুরির অভিযোগ,‘অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেস ভাঙাচ্ছে তৃণমূল। আদতে মোদীজিরই হাত শক্ত করছেন দিদি।’
তৃণমূলের লক্ষ্য দেশজুড়ে মমতার প্রভাব বাড়ানো। সেই কাজে আপতত বেশ সফল বলা যেতে পারে। কারণ, মঙ্গলবারই প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ কীর্তি আজাদ যিনি গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি মমতার হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন। বিহারে শুধু খীর্তি আজাদ নন, তার সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন নীতিশ কুমারের দল জেডিইউয়ের প্রাক্তন সাংসদ পবন ভার্মা। নীতিশ কুমার যখন সিএএ বিরোধিতার জন্য প্রশান্ত কিশেরাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন তখন একই সঙ্গে বহিষ্কার করেছিলেন পবন ভার্মাকে। তাই বিহারে নীতিশ কুমার আর কংগ্রেস উভয়কেই ভাঙাতে সক্ষম হল তৃণমূল। এভাবে তৃণমূল একের পর এক রাজ্যে নিজেদের দাপট দেখিয়েই চলেছে। যে হরিয়ানায় এখন ব্যাপকভাবে কৃষকে বিক্ষোভ চলছে, সেখানে কংগ্রেস ক্রমশ জমি শক্ত করছিল। সেই সময় হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ অশোক তানওয়ারও যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
পবন বর্মা, কীর্তি আজাদের পর মঙ্গলবার তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অশোক তানওয়ার। আর তার ফলে দেশের রাজনীতিতে তৃণমূল চমক দেখিয়ে দিল। হরিয়ানায় তৃণমূলের কোনও সংগঠন না থাকা সত্ত্বেও অশোক তানওয়ারের কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহল। এই অশোক তানওয়ার হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। একসময়ে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই নেতা। তবে হরিয়ানায় ভূপেন্দর সিং হুডা এবং কুমারী সৈলজার মতো নেতৃত্বের সঙ্গে মনমালিন্য হওয়ার জেরে কংগ্রেস ছাড়েন তানওয়ার। সম্প্রতি তিনি ‘আপনা ভারত মোর্চা’ গঠন করেছিলেন। তবে, এ দিন অশোক তানওয়ার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জোড়া-ফুলে যোগ দেন।
তার এই তৃণমূলে যোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি হরিয়ানা যেতে চাই। অশোকজি আমায় যখনই ডাকবেন তখনই যাব। হরিয়ানা আমার রাজ্য দেখে খুব দূরে নয়। তবে তার আগে আমাদের রাজ্যে আসবেন অশোকজি। এখন ওঁর গোটা পরিবারই আমাদের তৃণমূলের পরিবার।
এই কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করারর প্রয়াস অব্যাহত থাকায় এখন আর বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মুখে ঐক্যর বাণী শোনা যাচ্ছে না। ফলে, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে দেশ দখলকে তৃণমূল পাখির চোখ করলেও কংগ্রেস তাতে কতটা সায় দেয় সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন: