আপনজন ডেস্ক: গুরু নানকের জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়ায় দেশজুড়ে তা নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটকে নিশানা করে মোদির এই ঘোষণা বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে খোঁজা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রকৃত রহস্য কি?
যে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে না বলে বারে বারে দৃৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের এই মত পরিবর্তন যে অত সহজে হয়নি তা পরিষ্কার। শুধু তাই নয়, যেভাবে লৌহহৃদয় নরেন্দ্র মোদি ক্ষমা চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে এই কৃষি আইন তাতে নিন্দুকরা বলছেন এর পিছনে রযেছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অার সেটা হতে পারে আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নিয়ে সদ্য প্রকাশিত প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা।
প্রথমত উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে কৃষকদের উপর মন্ত্রী পুত্রের গাড়ি চালিয়ে পিষে মারার ঘটনা নিয়ে বিজেপি ব্যাকফুটে। ইতিমধ্যে ময়দানে নেমে পড়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি থেকে শুরু করে অখিলেশ যাদব। লখিমপুরের ঘটনা আর কৃষি আইন নিয়ে যে উত্তরপ্রদেশের মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসছে তার প্রমাণ মিলছিল কিছুদিন অাগে থেকেই। যে মোদি একসময় বিজেপির ভোট ক্যাচার বলে পরিচিত ছিলেন তার সভায় ভিড় হয়নি। উল্টো দিকে প্রিযাঙ্কা গান্ধির সভায তুলনামূলক বেশি ভিড় হয়েছে। এর পর আরও একটি বিষয় বিজেপিকে নাড়া দিতে পারে তা হল প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা। দেশের বেশ কযেকটি সমীক্ষক সংস্থা উত্তরপ্রদেশে যে প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি খাদের কিনারায় ঠেকে গেছে। তাতে বিজেপির আসন সংখ্যা গতবারের তুলনায় ১০৮টি কমে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার আসন সংখ্যা রয়েছে মোটি ৪০৩টি। এবিপি নিউজ-সি ভোটার সমীক্ষা রিপোর্টে২০২২ সালের ভোটে বিজেপির আসন সংখ্যা প্রায় ১০০ থেকে ১০৮টি আসন কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। জনমত জরিপে বলা হয়েছে, ৩১২টি আসন থেকে দলটি ২১৩-২২১টি আসনে নেমে যেতে পারে। যদিও ন্যূনতম সংখ্যাগরিষ্ঠ ২০২টি আসনের থেকে উপরেই আছে। সমীক্ষায় সমাজবাদী পার্টিকে ১৫২-১৬০ টি আসন জেতার অনুমান করা হয়েছিল, যা আগের বিধানসভা ভোটে প্রাপ্ত ৪৭ টি আসনের চেয়ে অনেক বেশি। এবিপি-সি ভোটার জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, বিএসপি ১৬-২০ টি আসনে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা। আর কংগ্রেস ৬-১০ টি আসন পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সমীক্ষার অঞ্চলভিত্তিক আসন অনুমানের দিকে তাকিয়ে বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের ১৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৫-১৭টি, পূর্বাঞ্চল অঞ্চলের মোট ৯২টি আসনের মধ্যে ৪৭-৫০টি আসন, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৪০-৪২টি আসন এবং আওয়াধ অঞ্চলের ৬৯-৭২টি আসন জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে। মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি ১৬-২০ টি আসন জিততে পারে এবং কংগ্রেস আবার হতাশা দেখতে পাবে এবং ৬-১০ টি আসন পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
টাইমস নাও-পোলস্ট্রাটের জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশকে ধরে রাখতে সক্ষম থাকলেও স্বস্তিতে থাকবে না। সমাজবাদী পার্টি দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ইউপি বিধানসভার ৪০৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ২৩৯-২৪৫ টি আসন পাবে এবং সমাজবাদী পার্টি ১১৯-১২৫ টি আসনে জয়ী হবে। বিএসপির ২৮-৩২ টি এবং কংগ্রেসের জন্য মাত্র পাঁচ-আটটি আসনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সব মিরিয়ে বিজেপির ভোটে যে ধস নেমেছে তা পরিষ্কার। আর এবাবে নির্বাচন অবধি চলতে থাকলে বিজেপি আদৌ হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিতে পারে বিজেপি নেতৃত্বকে। তাই কোনও ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহারের মাধ্যমে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে দিতে চাইতে পারেন মোদি-অমিত শাহরা। এর একটাই লক্ষ্য শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, আরও কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচানো।
আরও পড়ুন: