ইউজিসি সম্প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে হবে। আর এই অনলাইন ক্লাসের হাত ধরে নয়া চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সামনে। কারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু তো পড়ালেই হবে না, ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ক্লাসের প্রতি উৎসাহ না হারিয়ে ফেলে সেই দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আর উঁচু ক্লাস হোক বা নীচু ক্লাস পড়ুয়াদের কাছে অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় করে তোলা খুবই কঠিন কাজ। এ সম্পর্কে লিখেছেন প্রিন্স বিশ্বাস। আজ প্রথম কিস্তি।
করোনা আবহে বহু মাস হয়ে গেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা থাকলেও কবে থেকে ফের শারীরিকভাবে উপস্থিতির মাধ্যমে ক্লাস শুরু হবে, তার কোনও ঠিক নেই। ফলে ভরসা সেই অনলাইন ক্লাস। তাছাড়া ইউজিসি সম্প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে হবে। আর এই অনলাইন ক্লাসের হাত ধরে নয়া চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সামনে। কারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে শুধু তো পড়ালেই হবে না, ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ক্লাসের প্রতি উৎসাহ না হারিয়ে ফেলে সেই দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আর উঁচু ক্লাস হোক বা নীচু ক্লাস পড়ুয়াদের কাছে অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় করে তোলা খুবই কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে শুধু বই যথেষ্ট নয়। অন্তত এমনই অভিমত অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার। তাঁদের বক্তব্য, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও পরিবেশটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে টেক্সট বইয়ের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় নজর রাখতে হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফলাই বনাম অনলাইন ক্লাস : সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, অতিমারি, মহামারি শব্দগুলোর মতই অনলাইন ক্লাস এখন এক সুপরিচিত, বহুশ্রুত, বহু উচ্চারিত একটি শব্দ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের কাছে। কারণ অসুস্থ পৃথিবীটা কবে পর্যন্ত সুস্থ হয়ে নিজের ছন্দে ফিরে আসবে সে বিষয়ে হলফ করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই যতদিন পর্যন্ত না পৃথিবী স্বাভাবিক হয়ে উঠছে ততদিন ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্তা সচল রায়েছে, যা পরিস্থিতি অনুযায়ী অফলাইন শিক্ষা দানের একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠছে। আবার, অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে কিনা সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা ও চলছে, সমীক্ষা চলছে, পরিসংখ্যান খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, হিসাব কষা হচ্ছে। অনস্বীকার্য,অনলাইন ক্লাসের দৌলতে ঘরে বসে পড়াশোনা চালিয়ে, অত্যধিক দূরত্বের কারণে যে কোর্সগুলো করা সম্ভব হচ্ছিল না সেগুলোও আজ স্বপ্ন পূরণের জন্য হাতছানি দিচ্ছে।
অন্যদিকে অনলাইন ক্লাস বর্তমান পরিস্থিতি মেনে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জন্য ভরসাস্থল হয়ে উঠলেও প্রশ্ন থেকেই যায়, সত্যিই কি এ বিকল্প হয়ে উঠতে পারে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়াকে প্রথম প্রথম দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো লাগত। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে পড়ানোর আমেজটাই আলাদা। তাদের চোখের ভাষায় এবং শারীরিক ভাষায় ফুটে উঠত বিষয়টা কতটা বোধগম্য হলো। আর সেটা বুঝে পরের বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা পরিতুষ্টি বা পরিতৃপ্তি কাজ করত। কিন্তু এসবের কতটুকু অনলাইন ক্লাসে সম্ভব? তবু পৃথিবীটা পরিবর্তনশীল, সমাজ পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে, পরিবর্তীত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে না চলতে পারলে, অচিরেই হারিয়ে যেতে হবে। বিকল্প ‘শিক্ষা’ যেটা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগবে এমন পরিবর্তনটাকে মেনে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠাই শ্রেয়। কিন্তু সমস্যা হলো যতই আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখি, গ্রাম ভিত্তিক এই ভারতবর্ষের অনেক গ্রামে যেখানে মোবাইল থাকাটাই মস্ত ব্যাপার, সেখানে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের স্বপ্নটা অলীক।
অনলাইন ক্লাস নিতে শিক্ষকদের ছোট, বড়, কঠিন, সহজ, মজাদার অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষকতা প্রফেশনে থেকে বেশ ভাল রকমের মজার মজার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি অনলাইন এডুকেশন সম্বন্ধে, যা হয়ত মহামারী না হলে কখনোই হতো না। একদিন ক্লাস নিচ্ছি গুগল মিটে। ক্লাসের শেষের দিকে হঠাৎ একজন ছাত্র যোগ দেয়, তাকে নির্দেশ দিই ভিডিও অন করে কথা বলতে। যথারীতি সে ভিডিও অন করে কথা বলে। ভিডিওতে দেখতে পেলাম সে কোন একটা লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। জিজ্ঞাসা করায় জানালো ‘ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে এসেছে’। হঠাৎ গ্রুপে ক্লাসের লিঙ্ক দেখতে পেয়ে এড হয়েছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
আবার ক্লাস নিতে গিয়ে প্রায়ই শুনতে হয় একজন আরেকজনকে বলছে, ‘ এই স্যারের ক্লাস হলে আমাকে কল দিস’। বুঝতে পারি অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী ক্লাস করার নাম করে জাস্ট ফোন কানেক্ট করে বসে আছে। এরকম অভিঞ্জতা প্রতিদিনই ঘটছে।
(ক্রমশ...)
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক অধ্যাপক, নব বালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct