নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: মা ব্রেন টিউমার রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে পেল ডাক্তারি পড়ার সুযোগ। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন বাবা। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই যেন আনন্দের জোয়ার ওয়াশিম আক্রামের ঘরে।
জানা যায় মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাহাট্টা গ্রামের বাসিন্দা হবিবুর রহমানের ছোট ছেলে ওয়াশিম আক্রাম নিটে সর্বভারতীয় স্তরে ১৯১০৫ র্যাঙ্ক করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬০০। কাউন্সেলিং এখনো হয়নি। তবে নিউরোলজি নিয়ে পড়তে চান সে।
২০১৬ সালে চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮৫ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাধ্যমিক ও ২০১৮ সালে মালদা শাখা আল আমীন মিশন থেকে ৮৪ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর হাওড়া সাঁতরাগাছি আল আমীন মিশনে কোচিং নিয়ে দুই বছর পর এবার সফলতা পায়।
ওয়াশিম জানায়, ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার দিন মায়ের ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। মায়ের কষ্ট দেখে নিউরোলজি নিয়ে পড়ার মনের জেদটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সাফল্যে এলাকার সকলেই গর্ব বোধ করলেও মা সেলিনা পারভীন বর্তমানে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। এলাকার কোনো মানুষ যাতে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট না পায় তাই একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষের সেবা করবে বলে প্রতিজ্ঞা করে সে। সে আরো জানায়, বাবা ও দাদা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন, পড়াশোনার উপর নজর দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, ভালো রেজাল্ট করার জন্য যা যা দরকার সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে আল আমীন মিশনের সেক্রেটারি ‘স্যারকেও’।
বাবা হবিবুর রহমান জানান তিনি পেশায় একজন চাষি। তার দুই ছেলে। বড ছেলে মেহেদী হাসান একজন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কর্মী। ওয়াশিম আক্রাম ছোট ছেলে। ওয়াশিম ছোট থেকেই মেধাবী ছিল। নিট পরীক্ষায় ৭২০-র মধ্যে ৬০০ পেয়েছে। ছেলে একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে উঠুক এবং মানুষের সেবা করুক এটাই চাই।
আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম ওয়াশিমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে সে বড় ডাক্তার হয়ে উঠুক কামান করি। স্থানীয় বাসিন্দা দিলরোজ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোনো নিউরোলজিস্ট নেই। চিকিৎসার জন্য ভিন রাজ্যে যেতে হয় এমনকি বিদেশেও যেতে হয়। যা সাধারণ গরীব মানুষের পক্ষে সবসময় বাইরে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।ওয়াশিমের একজন নিউরোলজি সার্জনে হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। আমরাও চাই
ওয়াশিম একজন মানব দরদী চিকিৎসক হয়ে উঠুক।কাহাট্টার এই তেজস্বী ছেলের সেই স্বপ্নপূরণের আলোকে একদিন আলোকিত হবেই চিকিৎসা জগৎ বলে আশাবাদী।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct