প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা বিষয়ে অভিনবত্বের পথিকৃৎ। যেমন ধরুন, শুধু বিশ্বাসের ভিত্তিতে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা, থালা বাজিয়ে ও মোমবাতি জ্বেলে করোনার হৃদপিণ্ড ফাটিয়ে দেওয়া এবং তারপরে ১০০ কোটি টিকা দিয়ে সেই ফাটা হৃদপিণ্ডকে চৌচির করে দেওয়া, পোশাকে–আশাকে নিত্য-নতুন স্টাইল প্রবর্তন করা ইত্যাদি। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে তাঁর আলিঙ্গন বা জাপ্টা-জাপ্টি তেমনি এক অভিনব ব্যাপার। এ নিয়ে লিখেছেন দিলীপ মজুমদার। আজ শেষ কিস্তি।
এতো হঠাৎ কিছু নয়।
মোদীবাবুর এই রীতির সঙ্গে বিশ্বনেতারা সুপরিচিত। শুধু তো তাঁর প্রাণের বন্ধু ডোনাল্ড ট্র্যাম্প নয়, তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে জাপ্টে ধরতে মোদীবাবু বিমান বন্দরে হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং। ট্র্যাম্পের পরের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও তিনি জাপ্টে ধরেছিলেন পরম আদরে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরার সে দৃশ্য সৃষ্টি করেছিল রোমাঞ্চ। যাকে বলে টাইটানিক হাগ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু , আফগান প্রেসিডেন্ট আশর্ফ গনি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রো , সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমন সকলেই মোদীবাবুর জাপ্টা-জাপ্টির স্বাদ পেয়েছেন।
তবে হ্যাঁ, মোদীবাবু মোট ৭১ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তাঁদের সবাইকে জাপ্টে ধরেননি। জাপ্টে ধরেছেন মোট ২১ জন বিশ্বনেতাকে। এঁদের মধ্যে কারোকে একাধিকবার জাপ্টানি সহ্য করতে হয়েছে। নিন্দুকেরা বলেন , যে সব দেশের জিডিপি বেশি, তাদের নেতাদেরই তিনি জাপ্টেছেন। আরও একটা কথা, যেহেতু তিনি মূলত আর এস এস-র প্রচারক তাই নারীদের জাপ্টে ধরেন নি। যেমন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের জাপ্টে ধরলে কেলেঙ্কারি হত বৈকি। সপাট চপেটাঘাতও জুটতে পারত।
মোদীবাবুর এই জাপ্টা-জাপ্টি নিয়ে কংগ্রেস দল বিদ্রূপের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। প্রকাশ করেছিল একটা ভিডিয়ো। নিন্দুক আর কাকে বলে ! কাজ নাই তো খই ভাজ—তাদের। কিন্তু এই বিদ্রূপের যে বিনম্র জবাব দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী , তা লা জবাব। তিনি বলেছেন , ‘ আমি অত্যন্ত সাধারণ এক মানুষ। প্রোটোকল কি সেটা জানি না। আমার সরলতাই আমার বড় শক্তি। এই সরলতা দিয়ে রাষ্ট্রনেতাদের আপন করে নেবার চেষ্টা করি আমি। আমার যদি ট্রেনিং নেওয়া থাকত তাহলে আমিও আদব-কায়দা, রীতি-নীতি মেনে রাষ্ট্রনেতাদের স্বাগত জানাতাম। তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর সময় ডানদিক বামদিক দেখে নিতাম।’
এমন সরল, এমন নিষ্পাপ স্বীকারোক্তিতে জব্দ কংগ্রেস। তাছাড়া কংগ্রেস এ কথা বলেও বা কি করে ! মনে নেই ২০১৮ সালের কথা ! সংসদের মধ্যে তাদের নেতা রাহুল গাঁধী জড়িয়ে ধরেছিলেন মোদীবাবুকে। শুধু জড়িয়ে ধরা নয় , চোখও মেরেছিলেন। তবে ! (সমাপ্ত)
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct